Tuesday, March 19, 2024
ধারাবাহিক উপন্যাস

জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং – পার্ট ১৪

লেখক: জি নরম্যান লিপার্ট, ভাষান্তরঃ প্রতিম দাস

শিল্পী: মূল প্রচ্ছদ, সুদীপ দেব

চতুর্দশ অধ্যায়

দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং

রেরদিন ব্রেকফাস্টের টেবিলে র‍্যালফ জানতে চাইল, ‘কীজন্য? কেন আমরা ওর ঝাড়ুটা চুরি করব জানতে পারি কী?’ সসেজের প্লেটটা নেওয়ার জন্য টেবিলের ওপর ঝুঁকে বলল, ‘জ্যাক্সনের ব্রিফকেস অদলবদল থেকেও কঠিন কাজ এটাকে চুরি করা। মেয়েদের ডরমে ছেলেদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। আমরা ওটার কাছেও যেতে পারব না! তাছাড়া আমরা তো পোশাকটা পেয়েই গেছি। সবকটা রেলিক না থাকলে তো ওঁরা কিছুই করতে পারবেন না।’

জেমস উত্তর দিল, ‘ওটা মারলিনের জাদুলাঠি, আর সেটাই কারণ আমরা ওটা যেভাবেই হোক নিজেদের দখলে আনবই। যদিও এখন ওটা মারলিনের কাছে নেই, তবুও ওটা এই পৃথিবীতে অন্যতম, সবথেকে বেশি জাদুক্ষমতা সম্পন্ন বস্তু। দেখতেই পেলি করসিকা ওটা দিয়ে ম্যাচে কী করল। কেবলমাত্র স্নিচটাকে না দেখে আড়াল করাই নয়, ওরটিমের সব সদস্য বা ঝাড়ুগুলো ওর নির্দেশ পালন করছিল কোনও এক বিশেষ ক্ষমতাবলে। ওরা বা ওদের ঝাড়ুগুলো বুঝে যাচ্ছিল কখন কোথায় হাজির হতে হবে। আর এটা এক অদ্ভুত শক্তির জাদু। এখনও পর্যন্ত করসিকা কেবলমাত্র কুইডিচ ম্যাচ জিততে ওটার ব্যবহার করেছে। কিন্তু তুই কি সত্যিই চাস যে ওই জিনিসটা ওর এবং প্রোগ্রেসিভ এলিমেন্টসের কাছে থাকুক?’

র‍্যালফকে দিশেহারা দেখাচ্ছিল। জ্যান কফি কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে টেবিলের দিকেই চেয়ে থাকল। ‘আমি জানি না…,’ ও বলল।

‘কী?’ জেমস অস্থির কণ্ঠে জানতে চাইল।

জ্যান তাকাল, ‘বলতে চাইছি যে, সব কিছু যেন কেমন সহজেই ঘটে যাচ্ছে। দ্যাখ, র‍্যালফের ওই পাথর জমা করার ব্যাগটা ঠিক সময়ে জোগাড় হয়ে গেল। তারপর, কী ভাববি জানি না, আমরা সত্যিই লাকি যে ভিসাম-ইনেপ্সিও মন্ত্র তার কাজ করে দিল। তার আগের কথা ভাবলে, মনে করে দ্যাখ অদ্ভুত সব যোগাযোগ হয়ে তুই মারলিনের সিংহাসন লুকিয়ে রাখার জায়গার খোঁজ পেয়ে গেলি, ভুডু কুইনের প্রতিরূপকে লেকের ওপর দেখে, আর ডেইলি প্রফেটে মন্ত্রকে চুরির চেষ্টার খবরটা পড়েই। আর এখন, আমরা জানতে পেরে গেলাম টাবিথার ঝাড়ুটা আসলে মারলিনের জাদুলাঠি। আমার বলতে খারাপ লাগছে, তবু এটা কেমন যেন একটা কালো জাদুর চক্রান্ত বলেই মনে হচ্ছে। তা না হলে প্রথম বর্ষের তিনটে ছাত্রর পক্ষে সব ঠিকঠাক বুঝে নেওয়াটা একটু অস্বাভাবিক ব্যাপার।’

জেমস ক্ষুব্ধ হল। ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে, হ্যাঁ বলতেই পারিস আমরা বেশ খানিকটা ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছি কিছু কিছু ক্ষেত্রে। কিন্তু আমরা কাজটাও যথেষ্ট মন দিয়ে করেছি। আর তার জন্যই সব ঠিকঠাক হয়েছে, এটা অস্বীকার করতে পারিস কি? মারলিন ষড়যন্ত্রের পেছনে থাকা মানুষগুলো এতোটাই সাহসী যে ওরা ভাবছেন কেউ ওদের ধরতেও পারবেন না। এর অর্থ এই নয় যে পুরো ব্যাপারটাই মিথ্যে। ভুলে গেলি নাকি জ্যাক্সনের ব্রিফকেসটা খোলার পর আমার সঙ্গে কী হয়েছিল? তাছাড়া শেষ সপ্তাহে আমার সঙ্গে যে-টা হয়েছে সেটার কথাতোতা-ও তোদের বলিনি।’

র‍্যালফ এতটাই চমকে উঠল যে আর একটু হলে পামকিন জ্যুসের গ্লাসটা ওর হাত থেকে পড়েই যেত। কিছুক্ষণ চোখ বিষ্ফারিত করে তাকিয়ে থাকার পর নিজেকে একটু ধাতস্থ করে জানতে চাইল, ‘শেষ সপ্তাহে? কখন?’

জেমস উত্তর দিল, ‘সেই রাতে, যেদিন হ্যাগ্রিডের সঙ্গে দেখা করলাম, আর তারপর তোকে বিদায় জানিয়ে আমি ফিরছিলাম।‘ হগ ওয়ারটসের করিডর সেদিন কীভাবে জঙ্গলে বদলে গিয়েছিল ওর চারপাশে এবং লুকানো দ্বীপে ওর পৌঁছে যাওয়া বিস্তারিতভাবে ওদের বলল জেমস। সঙ্গেই জানাল সেই ভুতুড়ে অবয়বের রেলিক পোশাক ফেরত চাওয়ার বিষয়টাও। জ্যান মনোযোগ দিয়ে শুনছিল, কিন্তু র‍্যালফের মুখে ছায়া ফেলেছিল এক ফ্যাকাশে শূন্যতা।

জেমসের বলা শেষ হতেই জ্যান জানতে চাইল, ‘তোর কি মনে হয় ওটা কোনও ড্রায়াড ছিল?’

জেমস কাঁধ উঁচিয়ে বলল, ‘জানি না। আমরা সেদিন যেরকম দেখেছিলাম প্রায় তারই মতো, কিন্তু অনেকটাই আলাদা। একটা কেমন যেন অনুভুতির স্রোত ভেসে আসছিল, মানে কী যে বলব। আমি যেন নিজের মাথায় ওর অস্তিত্বের অনুভুতি বোধ করছিলাম।’

‘হতেও তো পারে ওটা কোনও স্বপ্ন ছিল,’ জ্যান বলল, ‘তোর বলার ভঙ্গীতে মনে হচ্ছে অনেকটা সেরকমই।’

‘ওটা মোটেই স্বপ্ন ছিল না। আমি করিডোর দিয়ে কমনরুমের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম। আর সেটা ঘুমের মধ্যে হাঁটা নয়।’

জ্যান মাথা নামিয়ে আস্তে করে বলল, ‘আমি শুধু অনুমানের কথা বললাম।’

‘তারমানে কী বলতে চাইছিস তুই?’ জেমস ঝাঁজিয়ে উঠল, ‘তোর কি মনে হয় পুরো মারলিনের ব্যাপারটাও একটা স্বপ্ন? সেদিন ঘরের ভেতর তোদের দুজনের চোখের সামনে থেকে আমি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলাম। সেড্রিক ডিগরির ভূত আমায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে। সেটা তাহলে কী?’

‘মোটেই আমি তা বলছি না। যদিও পুরো ব্যাপারটাই অতিমাত্রায় অদ্ভুত রকমের। তুই জঙ্গলে ছিলি? নাকি স্কুলের করিডোরে? কোনটা আসল? নাকি দুটোই সত্যি? মানে বলতে চাইছি যে, এই সব নিয়ে তুই অনেক অনেক বিচ্ছিরি রকম ভাবনার জালে জড়িয়ে যাচ্ছিস। হয়তো বা …’

র‍্যালফ তাকিয়ে ছিল নিজের ফাঁকা প্লেটটার দিকে। মাথা না তুলেই বলল, ‘ওটা স্বপ্ন ছিল না।’

জেমস আর জ্যান র‍্যালফের দিকে তাকাল। ‘তুই কী করে জানলি র‍্যালফ?’ জ্যান প্রশ্ন করল।

র‍্যালফ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘কারণ ওই একই ঘটনা আমার সঙ্গেও ঘটেছে।’

জেমস এর চোখ এবার বিষ্ফারিত হল, মুখ হাঁ। ‘তুই লুকানো দ্বীপ দেখতে পেয়েছিস? ড্রায়াডটাকেও? র‍্যালফ তুই কিছু বলিসনি কেন?’

র‍্যালফ উত্তর দিল ওদের দিকে তাকিয়ে, ‘আমি তো বুঝতেই পারিনি ব্যাপারটা কী হচ্ছে! তোরা যখন অরণ্যের ভেতর দিয়ে যাওয়ার পর ওই দ্বীপটাকে দেখেছিলি, আমি তো তখন তোদের সঙ্গে ছিলাম না। গত সপ্তাহে আমি ভূগর্ভস্থ ঘরগুলোর ভেতর দিয়ে যখন স্লিদারিন হাউসের দিকে যাচ্ছিলাম, হঠাৎই যেন সব ঝাপসা হয়ে গেল আর পরিণত হল একটা জঙ্গলে ঠিক যেমন জেমস বলল একটু আগে। তারপর আমি দেখতে পেলাম দ্বীপটাকে এবং গাছ ভূত মহিলাটিকে, কিন্তু তখন ওদের আমি বুঝতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম ওটা আর পাঁচটা ভূতের মতইকিছু হবে। আমাকেও রেলিকটা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে, যা শুনে আমি ভয় পেয়ে যাই। আসলে আমি এই সব বিদঘুটে, জাদুজগৎ বা শরীরের বাইরের জগৎ বিষয়ে ততটা সড়গড় নই। আমি দৌড়ে পালাতে চাইছিলাম, তারপর কী যে হল বুঝলাম না, দেখলাম আমি স্লিদারিন কমন রুমের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি, অন্যান্য দিনের মতোই। তোরা যদি আমায় পাগল ভাবিস, তাই কিছু বলিনি। ভেবেছিলাম চারপাশের জাদুর প্রভাব আমার মাথায় কাজ করছে। সত্যি বলছি আমি এখন অনেকটাই স্বস্তি পেলাম এটা শুনে যে, ওই একই ব্যাপার তোর সঙ্গেও ঘটেছে।’

জ্যান মাথা নেড়ে বলল, ‘বেশ ভাবনার বিষয়।’

‘কিন্তু তুই কেন দেখলি?’ জেমস জানতে চাইল। ‘রেলিকতো তোর কাছে নেই। ওটা তো আছে আমার জিম্মায়।’

জ্যান হাস্যকর সেই মুখভঙ্গিটা করল যে-টা ও করে বিশেষভাবে কিছু ভাবার চেষ্টা করলে। ‘মনে হচ্ছে এর একমাত্র কারণ র‍্যালফ একজন স্লিদারিন। মানে বলতে চাইছি যে ওতো বিতর্কে আমার আর পেট্রার বিরুদ্ধে ছিল। সে যেই হোক না কেন ভাবছে র‍্যালফ হল এই ঘটনাচক্রের সবচেয়ে দুর্বল অংশ। হয়তো সে এরকম ভাবছে যে, র‍্যালফ তোর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে পোশাকটা চুরি করে ওই দ্বীপে ফিরিয়ে দেবে। আমার মনে হয় না র‍্যালফ তুই সেটা করবি,’ জ্যান র‍্যালফের দিকে তাকিয়ে শেষ কথাটা বলল।

‘কোনও চান্সই নেই। আমি ওই জিনিসটাকে ছোঁবই না,’ র‍্যালফ জোর দিয়েবলল।

জেমস মেনে নিল, ‘হুমম তোর কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু জ্যান তুই ওটা দেখতে পেলি না কেন?’

জ্যান উদাসের একটা ভাব মুখে এনে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কারণ আমি একবারে দাগহীন মানসিকতার মানুষ, যাকে বলে হাওয়ায় উড়ে আসা তুষারের কণার মতো। আর একটা কথা আমি আর কোনও দিন ওই দ্বীপে পা ঠেকাবই না। ওটা যথেষ্টই সৃষ্টিছাড়া জায়গা আমার পক্ষে।’

র‍্যালফ ভুরু উঁচিয়ে বলল, ‘আমি চাইলেও তো ওই পোশাকটা চুরি করতে পারব না। জ্যানের বন্ধনমন্ত্র সেট করা আছে না ট্রাঙ্কটায়। জেমসই একমাত্র মানুষ যে ওটা খুলতে পারবে।’

জেমস বলল, ‘তুই চাইলেই গোটা ট্রাঙ্কটাকে নিয়েই পালাতে পারবি বলে আমার মনে হয়। ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়।’

র‍্যালফ গম্ভীর ভাবে বলল, ‘সৌভাগ্যবশত সেরকম কোনও ইচ্ছে আমার নেই।’

জ্যান নিজের খালি কফি কাপটাকে দূরে ঠেলে দিয়ে বলল, ‘ড্রায়াড বা যাই হোক না কেন ওটা, ট্রাঙ্কে যে অতিরিক্ত বন্ধন মন্ত্র সেট করা আছে সেটা জানে না। তোদের দুজনের কাছেই পোশাকটা চাওয়া হয়েছে এর থেকে একটা বিষয় প্রমাণিত যে কেউ পোশাকটা পেতে চাইছে এবং জেনে গেছে যে আমরা পোশাকটা পেয়েছি। আর এটা যদি জ্যাক্সন বা ওর দলের লোকজন না হয় তাহলে কে সে?’

জেমস বলল, ‘মনে করে দ্যাখ সবুজ ড্রায়াড আমদের কী বলেছিল? বলেছিল যে গাছেরা জেগে উঠছে, কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই… ঠিক কী বলেছিল যেন?’

জ্যান সম্মতিসূচক ঘাড় নেড়ে বলল, ‘উনি বলেছিলেন অনেকেই অন্যপথে চলে গেছে, ঠিক যেন ভালো কিছুর এক্সপায়ারি ডেট পেরিয়ে গেছে। মানে অন্যভাবে বলে কিছু গাছ ‘খারাপ গাছে’ পরিণত হয়েছে, যারা গণ্ডগোল আর যুদ্ধের পক্ষে। তোর কি মনে হয় ওই নীল ড্রায়াড যাকে তুই আর র‍্যালফ দেখেছিস, সে আসলে ভালো সাজার ভান করছিল?

র‍্যালফ বলল, ‘সেটাই তো মনে হচ্ছে। দেখতে উনি খুব সুন্দরী এবং হাসি খুশী ছিলেন, কিন্তু আমি কেন জানি না বুঝতে পারছিলাম যদি আমি পোশাকটা ফিরিয়ে না দিই, উনি আমায় জ্যান্ত চিবিয়ে খাবেন। আর সেটাই আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। বাপরে কী বড় বড় নখ ছিল হাতে!’ কেঁপে উঠল র‍্যালফ।

জ্যান এবার সিরিয়াস কন্ঠে বলল, ‘অর্থাৎ ঘটনা এখন আমদের এবং মারলিন ষড়যন্ত্রকারীদের পেরিয়ে আরও বড় গন্ডীতে ঢুকে পড়েছে, যেখানে গাছের আত্মারা যোগ দিয়েছে। জানা নেই আর কী কী জড়িয়ে আছে এদের সঙ্গে। তবে যা বুঝছি, জাদু জগতের সব কিছুই যেকোনও একটা পক্ষে যোগ দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।’

‘অন্যভাবে বললে বলা যায়,’ জেমস বলল, ‘রেলিকগুলো যে অসম্ভব রকমের শক্তিশালী তার প্রমাণ মিলছে। ভুল কারও হাতে ওগুলো গিয়ে পড়লে ঠিক কী ধরনের সর্বনাশ যে হবে কে জানে? আর এই জন্যেই টাবিথার কাছ থেকে ওই জাদুলাঠিটা হাতাতে হবে।’

র‍্যালফ বলে উঠল, ‘আমি বুঝতে পারছি না কেন আমরা তোর ড্যাডকে সব খুলে বলছি না। এটা তো ওঁর করার মতই কাজ। ভুল কিছু বললাম কি?’

‘জেমস উত্তর দিল, ‘কারণ ওদের নিজস্ব কিছু নিয়ম-কানুন আছে যা ওদের মেনে চলতে হয়। ওরা একটা অরোরের দল নিয়ে আসবেন এই এলাকা খুঁজে দেখার জন্য। ওরা মোটেই টাবিথার ঝাড়ুটা বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন না আমাদের বলা কথার ভিত্তিতে। এমন কী আমরা পোশাকটা দেখালেও পারবেন না। ওরা একের পর এক জিনিসপত্র খুঁজে খুঁজে দেখবেন, যার ফলে অনেক সময় লেগে যাবে। ওরা যখন টাবিথার ঝাড়ুর খোঁজে যাবেন, তখন দেখা যাবে ওটা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। জ্যাক্সন আর ডেলাক্রয় নিশ্চিতভাবে বিপদের গন্ধ পেয়ে এখান থেকে কেটে পড়বেন। হয়তো ওরা দুজন মিলে পুরো বিষয়টাকে অন্যরকমভাবে কিছু করে মারলিনকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন ‘হল অফ এল্ডারস ক্রসিং’-এ গিয়ে। পোশাকটা ছাড়া যদিও সেটা করা সম্ভব নয়, তাই হয়তো সিংহাসন আর জাদুদন্ড হারিয়ে যাবে আবার,বা লুকিয়ে ফেলা হবে। আর সেটা হবে শয়তান জাদুকরদের তত্বাবধানে।’

র‍্যালফ একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে, আর বোঝাতে হবে না। এখন আমাদের করসিকার কাছ থেকে মারলিনের জাদুলাঠি যেভাবেই হোক নিজেদের দখলে আনতে হবে। আর সেটাই কিন্তু শেষ কাজ, তাই তো? ওগুলো পেলেই আমরা তুলে দেব তোর ড্যাড আর ওঁর সহকর্মীদের হাতে। ওরা বাকি সব ঝামেলা মেটাবেন আর আমরা হয়তো হয়ে যাব হিরো। যাই হোক, রাজি তো?’

জ্যান সম্মতি জানিয়ে মাথা নামাল। ‘হ্যাঁ, আমি তোর সঙ্গে একমত। ঝাড়ুটা পেলেই আমাদের কাজ শেষ। কি রে জেমস?’

জেমসও সায় দিল। ‘এখন একটা পরিকল্পনা দরকার। কোনও আইডিয়া আছে মাথায়?’

র‍্যালফ পরিষ্কার বলে দিল, ‘এই কাজটা মোটেই সহজ নয়। জ্যাক্সনের ব্রিফকেসের সময় যদি ভাগ্য আমাদের সাহায্য করে থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে স্বয়ং উপরওয়ালার সাহায্য দরকার। স্লিদারিনের কক্ষগুলো ধাঁধারূ রক্ষী আর অ্যান্টি-স্পাইং মন্ত্র দিয়ে এতটাই সুরক্ষিত করা যে, ওখানে ছুঁচ গলান অসম্ভব ব্যাপার। আজ পর্যন্ত আমার দেখা সবচেয়ে সন্দেহপ্রবণ মানুষ ওরা।’

জ্যান বিজ্ঞের মতো বলল, ‘যারা বেশী ছলচাতুরী করে তাদেরই বেশী ঠকার চান্স থাকে। তবে আমরা বোধহয় আর একটা ব্যাপার ভুলে যাচ্ছি। আর সেটা সম্ভবত মারলিনের লাঠি হাতানোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।’

জেমস জানতে চাইল, ‘ওর চেয়ে আবার বেশী গুরুত্বপূর্ণ কী?’

জেমসের চোখের দিকে তাকিয়ে জ্যান উত্তর দিল, ‘সংগ্রহ করা রেলিকটাকে লুকিয়ে রাখা। কেউ বা কিছু জানে যে পোশাকটা আমাদের কাছে আছে। আর সেটা নেওয়ার চেষ্টাও একবার করেছে সে। আমি জানি না কী ধরনের ম্যাজিক ছিল ওটা, কিন্তু এটা স্বীকার তো করবি যে তোদেরকে ওই অজানা শক্তি হগওয়ারটস থেকে সোজা ওই দ্বীপে নিয়ে চলে গিয়েছিল ?’

জেমস আর র‍্যালফ একে ওপরের দিকে তাকানোর পর একসঙ্গে মাথা নাড়ল ইতিবাচকভাবে।

‘তারমানে,’জ্যান বলতে থাকল, ‘যদি ডিসঅ্যাপারিশন হগওয়ারটসের চত্বরে অসম্ভব বলে বিবেচিত হয়, তাহলে এক অন্য রকমের জাদুর ব্যবহার করা হয়েছে তোদের ক্ষেত্রে। আর সেটা যথেষ্টই শক্তিশালী ব্যাপার। কোনও নিশ্চয়তা আছে কি যে আবার সেটার ব্যবহার হবে না?’

র‍্যালফের মুখটা ফ্যাকাশে দেখাল। ‘আমি ওই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতেই চাইনা।’

জেমস একটু দ্বিধাগ্রস্থভাবে বলল, ‘হয়তো ওটা করতে গিয়ে ওরা প্রথমেই সব শক্তি শেষ করে ফেলেছে।’

জ্যান উত্তর দিল, ‘তোরা সেটার আশাতেই থাক,’ ওদের দুজনকে একে একে দেখে নিয়ে বলল। ‘কারণ প্রথমবারে ওই শক্তি বিনয়ের সঙ্গে ভালোভাবে চেয়েছে। এবার আর সেটা করবে বলে মনে হয় না।’

হঠাৎ একটা ভাবনা মাথায় আসতেই জেমস কেঁপে উঠল।

জেমসের পরিবর্তনটা লক্ষ করে র‍্যালফ জানতে চাইল, ‘কি হল?’

‘রিমোট ফিজিও-অ্যাপারিশন,’ জেমস খসখসে কন্ঠে বলল। ‘প্রফেসর ফ্রাঙ্কলিন এটাই বলেছিলেন মাদাম ডেলাক্রয়ের বিশেষ ক্ষমতা সম্বন্ধে। যার সাহায্যে উনি নিজের প্রতিরূপকে অন্য জায়গায় পাঠান। এটা সাধারণ অ্যাপারিশন থেকে আলাদা। কারণ উনি এখানে পাঠান নিজের প্রতিরূপের একটা ভুতুড়ে প্রতিচ্ছবি। কিন্তু সেই প্রতিচ্ছবি দেখতে লাগে সাধারণ মানুষের মতই এবং সে সক্ষম জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করতে। আমি দেখেছি ব্যাপারটা। ওই ভূতুড়ে অবয়ব দরকারমতো নিজের ঘন অবয়ব বানাতে পারে, তারপর সেটাকে ধারণ করে নাড়াতে পারে পাপেটের মতো যে কোনও জিনিসকে। আর সেভাবেই মারলিনের সিংহাসন নিয়ে এসে ওই দ্বীপে লুকিয়ে রেখেছে।’

জ্যান ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘ওকে, তাতে হলটা কী?’

‘এই যে ওইভাবেই আমাকে আর র‍্যালফকে লুকানো দ্বীপে পাঠান হয়েছিল। র‍্যালফ তুই তখন বললি না শরীরের বাইরের জগৎ না কী একটা। ব্যাপারটা এরকমই কিছু হয়েছিল ভাবা যেতেই পারে, কি বলিস? হয়তো আমাদের ওপর জোর করে রিমোট ফিজিও-অ্যাপারিশন করা হয়েছিল! আমাদের প্রতিরূপ চলে গিয়েছিল লুকানো দ্বীপে, আর আমাদের শরীর… নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্কুলের করিডোরে।’

র‍্যালফ যে ভালোই ভয় পেয়েছে সেটা ওকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল। জ্যানকে চিন্তামগ্ন দেখাচ্ছিল। ‘হ্যাঁ, হতেই পারে। তোরা দুজনেই বলেছিস একা থাকা অবস্থায় ওটা তোদের সঙ্গে ঘটেছিল। কেউই তোদের দেখতে পায়নি যখন তোরা নিশ্চল হয়েছিলি আর তোদের আত্মা বা ওই জাতীয় কিছু একটা ভেসে গিয়েছিল রহস্যময় দ্বীপে।’

‘ওটা করাতো মাদাম ডেলাক্রয়ের একটা স্পেশ্যাল ব্যাপার,’ র‍্যালফ বলল শিহরিত হয়ে। ‘তার মানে কি তুই বলতে চাইছিস, উনি জানেন আমরা পোশাকটা করায়ত্ত করেছি?’

জেমস উত্তর দিল, ‘হতেই পারে। উনি এক রহস্যময়ী মহিলা। অনুমান করে ফেলেছেন কোনওভাবে আর সেটা বলেননি জ্যাক্সনকে। হয়তো উনি পুরো সাবাসিটা একাই পেতে আগ্রহী।’

একটা ব্যাপার কিন্তু নিশ্চিত তাহলে,’ জ্যান ঘোষণার মতো করে বলল। ‘আমরা কখনওই তোদের দুজন কে একা থাকতে দিতে পারব না। আমার অনুমান যে বা যারা এটা করছে, তারা চাননা এই সিক্রেট বাইরে ছড়িয়ে পড়ুক। আর তার জন্যই ওরা অপেক্ষা করেছিলেন তোরা কখন সম্পূর্ণ একলা হবি তার। আমরা যদি সব সময় তোদের আশেপাশে লোকজন থাকার ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে সে চেষ্টা আর হবে না বলেই মনে হয়।’

র‍্যালফকে দেখাচ্ছিল সাদা পাথরের স্ট্যাচুর মতো,বলল, ‘যদি না ওই পক্ষ প্রচন্ডভাবে ডেসপ্যারেট হয়।’

জ্যনা সম্মতি জানিয়ে বলল, ‘ইয়া, তা বলতে পারিস। তবে সব সময়েই একটা সম্ভাবনা বলে বিষয় থাকে। যেহেতু আমরা এটাকে আটকাতে পারছি না, তাই আশা করতেই পারি যে ওই রকম কিছু ওরা করবেন না।’

র‍্যালফ গোঙানির মত করে বলল, ‘হ্যাঁ সেই ভাবনাটাই আমাকে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে।’

‘কাম অন,’ জেমস বলল, ব্রেকফাস্ট টেবিল থেকে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে। ‘অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। হাউস এলফগুলো আমাদের ড্যাবড্যাব করে দেখছে। আমরা যে কিছু একটা ছক কষছি এটা কেউ বুঝে ফেলার আগেই এখনই আমাদের এ জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়া দরকার।’

তিনবন্ধু বেরিয়ে এল বাইরের ঠান্ডা চত্বরে, এদিক ওদিক ঘুরে অন্যরকম বিষয়ে আলোচনা করে সময় কাটিয়ে যে যার নিজের হাউসে ফিরে গেল।

পরের সপ্তাহটা কাটল দারুণ রকম ব্যস্ততায়। নেভিল লংবটম লিখতে দিয়েছিলেন ওঁর সৃষ্টিছাড়া ধরনের অতিরিক্ত খাটুনির প্রবন্ধ। আর তার জন্য জেমসকে অনেকটা সময় কাটাতে হল লাইব্রেরিতে। খুঁজে খুঁজে বার করতে হল স্পাইনাস উওরট এর অগণিত ব্যবহার বিধি। যা বেশ জটিল একটা ব্যাপার, কারণ স্পাইনাস উওরট উদ্ভিদটির প্রত্যেকটি অংশ, পাতা থেকে শুরু করে বাকল, শিকড় থেকে বীজ ব্যবহার হয় বিভিন্ন রকমের কাজে। চামড়ার রোগ যেমন সারায়, আবার উড়ন্ত ঝাড়ু পালিসেও এর ব্যবহার হয়। জেমস সবে মাত্র উনআশি নম্বর ব্যবহার বিধিটা নোট করেছে ওর টেবিলের উলটোদিকে এসে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বসলমরগ্যান পেটোনিয়া। হাফলপাফের প্রথম বছরের ছাত্রী। জেমসের সঙ্গে হারবোলজির ক্লাস করে। জেমসের মতোই স্পাইনাস উওরটের প্রবন্ধ নিয়ে ব্যস্ত।

জেমসের তালিকাটা দেখে বলল, ‘এ বাবা,মাত্র পাঁচটা ব্যবহার বিধি লিখতে হবে। এটা জানতে না?’

‘পাঁচটা?’ জেমস হতবাক স্বরে বলল।

মরগ্যান জেমসের দিকে মজা পেয়েছে এমনভাবে তাকাল। ‘প্রফেসর লংবটম আমাদের স্পাইনাস উওরট নিয়ে লিখতে দিয়েছেন, তার কারণ এটা হল জাদু জগতের প্রথম তিনটে উদ্ভিদের একটা, যা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। আমরা যদি ওটার সব রকম ব্যবহার লিখতে যাই, তাহলে ওটা একটা এনসাইক্লোপিডিয়া লেখার সমান হয়ে যাবে, বোকারাম।’

জেমসের মুখে রাগের ছাপ পড়ল। ‘আমি জানি সেটা!’ নিজের অজ্ঞতা ঢাকার একটা চেষ্টা করল। ‘আমি ভুলে গিয়েছিলাম। বিস্তারিতভাবে পড়ে আমি নিশ্চয় কোনও ভুল করে ফেলিনি?’

মরগ্যান ফিক করে হাসল, সঙ্গেসঙ্গেই এটা ভেবে মজাও পেল যে জেমস কতটা সময় বাজে নষ্ট করেছে। কিছুক্ষণ পর জেমস সব গুছিয়ে নিয়ে চলল গ্রিফিন্ডোর কমন রুমের পথে, কিছুটা বিরক্ত আর অনেকটাই স্বস্তিসহ। আর কিছু নাহোক প্রবন্ধটাতো শেষ করা গেছে। প্রায় তেইশটা ব্যবহারবিধি ও উল্লেখ করেছে, যার জন্য নিশ্চিত ভাবে আলাদা বাহবা পাওয়া উচিত ওর। আর এর ফলে নেভিল ধরতেও পারবেন না যে, জেমস ওর ক্লাসে ঠিকঠাক মনোযোগ দেয় না।

জেমস ইতিমধ্যে দুবার করিডোরে প্রফেসর ডেলাক্রয়কে দেখেছে আর সঙ্গেসঙ্গে ওর ভেতরটা কেঁপে উঠেছে এই ভেবে যে উনি ওর দিকে লক্ষ রাখছেন। যদিও একবারও জেমস দেখতে পায়নি যে উনি ওর দিকে তাকালেন কিন্তু যেহেতু উনি অন্ধ তাই দেখা না দেখায় কি আসে যায়। জেমস তো দেখেইছিল কী অদ্ভুতভাবে আল্মা আলেরনের ডিনারে ডেলাক্রয় তার বদখৎ জাদুদন্ডটা দিয়ে গাম্বো পরিবেশন করছিলেন নিখুঁতভাবে এক ফোঁটাও না ফেলে। ও নিশ্চিত ব্যবহারহীন ওই চোখের মনির বাইরে ডেলাক্রয়ের আলাদাভাবে দেখার কিছু একটা পদ্ধতি আছে। আর তার ফলেই উনি দেখতে পেয়েছেন জ্যাক্সনের ব্রিফকেসের বদলটা। ভিসাম-ইনেপ্সিও মন্ত্র কাজ করে তাদের ওপরেই যারা চোখে দেখতে পায়, তাই নয় কি? উনিই হয়তো সেইজন যিনি র‍্যালফ আর ওর ওপরে ট্রিক খাটাচ্ছেন যাতে ওরা পোশাকটা লুকানো দ্বীপে দিয়ে আসে। বা নাও হতে পারে, যে করছে সে আরও অন্য কোন রকমের শক্তি। যাই হোক, কোনও ভাবেই ওরা এখন একেবারে একা থাকতে পারবে না, আর তাহলেই ওই শক্তি যেই হোক না কেন কিছুই করতে পারবে না।

জেমস একটু একটু করে বুঝতে পারছিল একলা না থাকাটা কী রকম কঠিন কাজ। ও ভেবেছিল হগওয়ারটসের মতো বড় স্কুলে একা থাকাটাই সম্ভব হবেনা। কিন্তু ভেবে দেখলে বুঝতে পারছে স্কুলচত্বর সহ ক্লাসের হলঘরগুলোতে ও বেশ কয়েকবার একা হয়ে গিয়েছে গত দিনগুলোতে অনেকবার। ট্রান্স-ফিগারেশনের ক্লাস সেরে একাই গিয়েছিল হারবোলজির ক্লাসে। বা রাতে বাথরুমে গিয়েছিল একাই। কখনও একা না থাকার ব্যবস্থা করা বা এটা নিয়ে ভাবাটা এক বিরক্তিকর ব্যাপার। কিন্তু জেমস অবাক হয়ে যাচ্ছে জ্যান ক্রমাগত এই ব্যাপারটার ওপরেই জোর দিয়ে চলেছে।

হারবোলজির ক্লাশরুম অবধি এগিয়ে দিতে দিতে জ্যান ওকে একদিন বলল, ‘ভাগ্যের কিছু সহায়তা পেয়ে আমরা হয়তো পোশাকটা হাতাতে পেরেছি, কিন্তু সামান্য সতর্কতার অভাবে আমি সেটাকে হাতছাড়া হতে দিতে রাজি নই। এটা মারলিনের ষড়যন্ত্রকারীদের কেয়ারলেস আচরণ যা আমাদের জন্য কাজ করেছে। আমি ওদের এরকম কোনও সুযোগ দিতে রাজি নই।’

ইতিমধ্যে একদিন জেমস, র‍্যালফ আর জ্যানকে প্রোটিয়ান মন্ত্র শিখিয়ে দিল। যার সাহায্যে হঠাৎ দরকার পড়লে একে ওপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। জেমস ওয়েস্লিজ উইজার্ড হুইজেসেঅর্ডার দিয়ে তিনটে নভেল্টি রাবারের হাঁস আনিয়ে নিয়েছিল। নিজের জন্য একটা রেখে বাকি দুটো দুই বন্ধুকে দিল।

‘প্রোটিয়ান মন্ত্রর কারণে আমি যদি আমার হাঁসটাকে ডাকানোর জন্য চাপ দিই, তাহলে তোদের হাঁস দুটোও ডেকে উঠবে,’ কথাটা বলেই জেমস নিজের হাঁসটায় চাপ দিল।

‘সরে যাও, সরে যাও’ একসঙ্গে তিনটে হাঁস ডেকে উঠল।

‘ওয়াও! দারুণ,’ জ্যান নিজের হাতের হাঁসটাতে একবার জোরে চাপ দিল। আবার একসঙ্গে তিনটে হাঁস ডেকে উঠল। ‘তারমানে তোদের দুজন যখনই মনে করবি একা হয়ে যাচ্ছিস, অথবা তোদের সঙ্গে বাথরুম যাওয়া দরকার এটা বাজাবি আর আমি হাজির হয়ে যাব, কি তাই তো?’

‘ধ্যাততেরি,’ র‍্যালফ বলল হাঁসটার দিকে বিরক্তির চোখে তাকিয়ে। ‘আমার মোটেই এটা পছন্দ নয়। মনে হচ্ছে আমি যেন তিন বছরের বাচ্চা।’

জ্যান কাঁধ উচিয়ে বলল, ‘দ্যাখ তোর যদি অসন্তুষ্ট গেছো ভূতের থাপ্পড় খাওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে…’

‘আমি মোটেই বলিনি যে আমি এটা ব্যবহার করব না,’ র‍্যালফ উত্তর দিল অস্বস্তির সঙ্গে। ‘আমি বলেছি এসব আমার পছন্দ নয়।’

জ্যান এবার জেমসের দিকে ঘুরে জানতে চাইল, ‘আমি কী করে বুঝতে পারব, তোদের মধ্যে কে আমাকে ডাকছিস?’

জেমস একটা কালো মার্কার পেন বার করে নিজের হাঁসের তলায় একটা ইংরেজী জে অক্ষর লিখলো। ‘এবার তোর হাঁসটার দিকে তাকা। একটা হাঁসে কিছু করা হলেই অন্য হাঁসগুলোতে সেটা দেখা যাবে। যখনই তুই ডাক শুনতে পাবি উলটে দেখে নিবি কার নামের অক্ষর ফুটে উঠছে।’

‘বেশ খাটনির ব্যাপার,’ জ্যান বলল সম্মতির স্বরে। সঙ্গেসঙ্গেই নিজের হাঁসটাকে তুলে স্যালুটের ভঙ্গীতে একবার বাজালো।

‘সবাই পেট ভরে খাও,’ প্যাঁকপ্যাঁকে গলায় হাঁসগুলো বলে উঠল।

জেমস নিজের হাঁসটাকে ব্যাক প্যাকে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, ‘আর একটা কথা এগুলো কেবলমাত্র তখনই কাজ করবে যখন আমরা বিপদে পড়ব। বুঝতে পেরেছিস?’

র‍্যালফ নিজেরটা পকেটে রেখে বলল, ‘এগুলো কেবলমাত্র প্যাঁক প্যাঁক করে ডাকে না কেন?’

জেমস পাত্তা না দেওয়ার ভঙ্গীতে বলল, ‘ওয়েস্লীদের কাছে জেনে নিস।’

সব সময় জ্যান বা অন্য কাউকে আশে পাশে রাখা ব্যাপারটা জেমস বা র‍্যালফ উভয়ের কাছেই বেশ অস্বস্তিকর, তবু জেমস এর সঙ্গে মানিয়ে নিল। জেমস স্নান করার সময় জ্যান বসে থাকে বাইরে একটা চেয়ারে। চলতে থাকে দুজনের কথাবার্তা প্রশ্নোত্তর ডিফেন্সিভ মন্ত্রের বানান জিজ্ঞাসা থেকে শুরু করে ট্রান্স-ফিগারেশনের বিভিন্ন প্রয়োগ বিধি বা নিষেধাজ্ঞা সবই থাকে তার মধ্যে। জেমস জানতে পেরেছে হারবোলজি ক্লাসের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী যার মধ্যে মরগ্যান পেটোনিয়াও আছে যারা হারবোলজির ক্লাস করার আগে মন্ত্রের ক্লাস করে। আর সেটা জানার পর থেকে ও ট্রান্স-ফিগারেশনের ক্লাস শেষ করেই দ্রুত মন্ত্রের ক্লাস ঘরের কাছে চলে যায়, তারপর পেটোনিয়া ও অন্যান্যদের সঙ্গে পৌঁছে যায় গ্রীন হাউসে। এর ফলে ওকে একা পুরো মাঠটা পার হতে হয় না। ক্রমাগত ভিড়ে মিশে থাকাটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেল জেমসের। ইদানীং না চাইতেও যেন সেটা ও করেই ফেলছে। এভাবেই কেটে গেল সপ্তাহটা। শীতের ভাব কেটে বসন্তের একটা উষ্ণ আমেজ ছড়াতে শুরু করেছে আবহাওয়ায়। এখনও পর্যন্ত করসিকার ঝাড়ু কীভাবে হাতানো হবে তার কোনও পরিকল্পনা জেমস, জ্যান বা র‍্যালফের মাথায় আসেনি। ওরা বুঝতে পেরেছে একসঙ্গে বসে একটা আলোচনা করা দরকার এ ব্যাপারে।

‘আমার এটা করতে একটুও ইচ্ছে করছে না,’ র‍্যালফ বলল বাকি দুজনকে স্লিদারিন কমনরুমের দিকে নিয়ে যেতে যেতে। ‘একমাত্র স্লিদারিন ছাড়া আর কাউকে এখানে আসতে আমি মাসখানেকের ভেতর দেখিনি।’

‘ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না র‍্যালফ,’জ্যান বলল বটে, কিন্তু গলায় সেই আত্মবিশ্বাসটার ছাপ দেখা গেল না। ‘আমরা জেমসের ম্যাজিক ম্যাপটা নিয়ে এসেছি। আমরা আর একবার চেক করে দেখব, যদিও তবু ওটা অনুসারে তোর হাউসের বেশীরভাগ সদস্য এখন স্লিদারিনদের ম্যাচের অনুশীলন দেখতে ব্যস্ত। কিরে জেমস তাইতো?’

জেমসের হাতে মরাউডার ম্যাপটা খোলা। হাঁটার সঙ্গেসঙ্গেই ও ওটা দেখে চলেছে। ‘আমার যা মনে হচ্ছে তাতে মাত্র দুজন স্লিদারিনের ডরমেটরিতে এখন আছে, আর তারা মানুষ নয়। ফলে আমাদের চিন্তা করার কোনও কারণ নেই।’

‘তুই নিশ্চিত তো ওটা ঠিকঠাক তথ্য জানায়?’ র‍্যালফ জানতে চাইল, নিজের আংটিটা বিশাল কাঠের দরজায় খোদিত সাপের চোখে লাগাতে লাগাতে। ‘আমার যতদূর মনে পড়ছে শেষবার তুই বলেছিলি ওটাকে কি করে কাজ করাতে হয় তুই ভুলে গিয়েছিস।’

‘হ্যাঁ, তবে এখন তো এটা কাজ করছে, নাকি? জেমস একটু জোরেই কথাটা বলল। সত্যি বলতে ও একটু চিন্তাতেই আছে ম্যাপটা কাজ করছে কিনা এ বিষয়ে। ম্যাপটা খোলার সময়েই ওটা চালু করার শব্দগুলো ওর মনে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওর ড্যাড যে সন্দেহটা জানিয়েছিলেন হ্যাগ্রিডকে, সেটার কথা ভেবে ও একটু চিন্তায় আছে। মুনি, প্রংগস, প্যাডফুট আর উওরমটেল এই ম্যাপটা বানানোর পর এই দুর্গের অনেক রদবদল ঘটানো হয়েছে। ম্যাপের অনেকগুলো জায়গা ফাঁকা,আর সেই সব ফাঁকা জায়গায় লেখা আছে “নতুন করে আঁকা দরকার, তারজন্য মাননীয় প্রংগস আর প্যাডফুটের সাহায্য নিন”। জেমস ভালোই বুঝতে পারছে এই ম্যাপটা আঁকার মূল শিল্পী ছিলেন ওর দাদু আর সিরিয়াস ব্ল্যাক। যাঁরা আর বেঁচে নেই। ফলে এই সব ফাঁকা জায়গাতে নতুন করে আঁকার আর কোনও সম্ভাবনা নেই। দুর্গের বিভিন্নস্থানে যারা চলে ফিরে বেড়াচ্ছেন তাদের নাম আর স্থানটার নাম ক্ষুদে ক্ষুদে অক্ষরে ফুটে উঠছে। কিন্তু যেই তারা কোনও আঁকাহীন ফাঁকা জায়গায় ঢুকছে সঙ্গেসঙ্গেই তাদের নাম মুছে যাচ্ছে। সৌভাগ্যক্রমে স্লিদারিন হাউস লেকের ধারে হওয়ায় ব্যাটলঅফ হগ ওয়ারটসের সময় এটা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি (র‍্যালফ জানতে পেরেছিল কেবলমাত্র মূল দরজাটা পুরো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল)। জেমস মরাউডার ম্যাপে স্লিদারিন হাউসের সব কিছুই পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছে।

সাপটা আগের বারের মতোই তার প্রশ্নগুলো করল। র‍্যালফ নিজের পরিচিতি দেওয়ার পর জানিয়ে দিল সঙ্গে যারা এসেছে তারা ওর বন্ধু এবং ওদের নাম। জ্বলজ্বলে সবুজ চোখ দিয়ে সাপটা অনেকক্ষণ জ্যান আর জেমসকে দেখে তারপর খুলে দিল জটিল যন্ত্রপাতির বন্ধনে আবদ্ধ দরজা।

নিঝুম স্লিদারিন কমনরুমের ঘরগুলোর ভেতর দিয়ে তিনবন্ধু এগিয়ে যাওয়ার সময় কেঁপে কেঁপে উঠছিল অজান্তেই। লেকের জলের ভেতর দিয়ে আসা সবুজ সূর্যালোক স্টেইন্ড গ্লাসের সিলিং ভেদ করে এসে ঘরগুলোতে বানিয়ে রেখেছে গা ছমছমে সব ছায়ার খেলা। মারবেল পাথর দিয়ে তৈরী এক বিশাল সাপের মুখের মতো ফায়ারপ্লেসে ঢিমে আঁচে জ্বলছে লাল আগুন।

জ্যান বিড়বিড় করে বলল, ‘ এ যেন একটা দারুণ একটা বই পড়া টিম টিম করে জ্বলতে থাকা লন্ঠনের আলোয়। হ্যাঁরে র‍্যালফ, ওরা ওদের ঝাড়ুগুলো কোথায় রাখে জানিস?’

র‍্যালফ মাথা নেড়ে বলল, ‘আমি আগেই তো বললাম আমি জানি না। শুধু এটা জানি এদের কোন কমন লকার বা ওই জাতীয় কিছু নেই। যা গ্রিফিন্ডোর বা র‍্যাভেন ক্ল তে আছে। এখানকার বেশীর ভাগ ছাত্রছাত্রী একে অপরকে বিশ্বাস করেনা খুব একটা। যার যার নিজের নিজের প্রাইভেট জায়গা আছে জিনিস রাখার জন্য, ম্যাজিক্যাল চাবি সহ। আর তাছাড়া এখন ওদের ঝাড়ুগুলো এখানে আছে বলে কি মনে হয় তোদের? ওরা তো এখন ওগুলোকে কুইডিচ মাঠে নিয়ে গেছে।’

‘আমরা এখন এখানে ওটা চুরি করার জন্য আসিনি,’ জ্যান জানালো, কমনরুমটার চারদিক দেখতে দেখতে। ‘শুধুমাত্র বুঝতে এসেছি ওরা কোথায় ওটাকে লুকিয়ে রাখতে পারে।’

বসন্তের দিনের এই মাঝামাঝি সময়েও স্লিদারিনের ঘরগুলোতে সব্জেটে অন্ধকার ছেয়ে আছে। ‘লুমোস,’ জেমস শব্দটা উচ্চারন করতেই ওর জাদু দন্ডের মাথায় আলো জ্বলে উঠল। ও ওটাকে উঁচিয়ে ধরলো। ‘এই হল থেকে পেছন দিকে গেলে ছেলেদের থাকার জায়গা তাই তো র‍্যালফ?’

‘হ্যাঁ। মেয়েদের ঘরগুলো অন্য দিকে, ওই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হবে।’

জ্যান সোজা এগিয়ে যেতে শুরু করলো সিঁড়িটার দিকে। ‘স্লিদারিনের মেয়েদের ঘর রেইড করবো। তাড়াতাড়ি চল।’

জেমস বলে উঠল, ‘ওয়েট! নিশ্চিতভাবে কোনও বন্ধনীমন্ত্র সেট করা আছে। ছেলেদের প্রবেশ নিষিদ্ধ যে কোন গার্লস কোয়ার্টারে। তুই ওখানে ঢুকতে গেলেই কিছু একটা ঘটবে। হয়তো অ্যালার্ম বেজে উঠবে।’

জ্যান থেমে গেল, জেমসের দিকে তাকালো, তারপর আবার এগিয়ে গেল সিঁড়ির দিকে। ‘নিকুচি করেছে। ওরা সব ব্যাপারেই ভেবে রেখে দিয়েছে এটা ভেবে বসে আছিস বুঝি?’

র‍্যালফ ঘরের একপ্রান্ত থেকে বলল, ‘অবশ্য ওরা বলে এখানে ‘প্রেত’ আছে।’

জ্যান বিড়বিড় করে বলল, ‘তুই যাকে প্রেত বলিস আমি সেটাকে ভূত বলি…’

জেমস বেশ খানিকটা জোরেই বলল, ‘আমরা যে কাজের জন্য এখানে এসেছি সেটা করলেই ভালো হয় নয় কি? আমাদের খুঁজতে হবে কি করে টাবিথার ঘরে ঢোকা যায় সেই পথ। অথবা যদি  কোনও ভাবে জানা যায় ও ঝাড়ুটা কোথায় লুকিয়ে রাখে।’

জ্যান শান্ত ভাবে বলল, ‘বিশ্বাস কর বা না কর, আমিও সেটাই ভাবছিলাম। এটা নিশ্চিত যে ও ঝাড়ুটা সঙ্গে নিয়েই ঘুমায়। যদি সেটা না করে তাহলে আমি বাজি ধরতে পারি ও ওটা খুব কাছেই রাখে নিজের। আর তার অর্থ আমাদের মেয়েদের থাকার জায়গায় ঢুকতেই হবে। কিছু ভুল বললাম?’

জেমস মাথা নেড়ে বলল, ‘সেটা করা অসম্ভব। এবার বুঝতে পারছি আন্ট হারমাইওনি সঙ্গে থাকায় ড্যাডের কত সুবিধা হতো। এই অবস্থায় উনি পড়লে আন্টিকে পাঠিয়ে দিতেন চেক করার জন্য। আমরা ভালো ঝামেলাতেই ফাঁসলাম।’

জেমসের কথা শেষ হওয়া মাত্র একটা শব্দ ভেসে এল সিঁড়ির দিক থেকে। তিনবন্ধু অপরাধবোধের আতংকে একবারে পাথরের মূর্তিতে পরিণত হল, তাকালো সিঁড়ির দিকে। ছোট ছোট পা ফেলার শব্দ। দেখা গেল একটা পুঁচকে হাউস এলফ কাপড় ভর্তি বাস্কেট মাথায় নিয়ে তাল সামলাতে সামলাতে এগিয়ে আসছে। এলফটা থেমে গেল ওরা তিনজন তাকিয়ে আছে দেখে।

“ক্ষমা করবেন মাস্টারগন” এলফটা বলল। জেমস এলফটার গলার স্বর শুনে বুঝতে পারলো ওটা মেয়ে এলফ। ‘আমি কাচাকুচি করার জন্য কাপড় জামা নিচ্ছিলাম, আপনারা যদি দয়া করে।’ ওটার বড় বড়ফোলা চোখ দুটো ওদের দিকে তাকিয়ে পিট পিট করছিল। সম্ভবত এরকম মনোযোগ দিয়ে ওকে দেখা হচ্ছিল বলে ও লজ্জা পাচ্ছিল।জেমস বুঝতে পারলো এলফটার দিকে কেউ তাকিয়েও দেখে না, অবশ্য দেখার সুযোগ পাওয়াও যায় কিনা সন্দেহ।

‘একদম ভাবতে হবে না মিস…’জ্যান বলল সামান্য ঝুঁকে অভিবাদন জানিয়ে সিঁড়ি থেকে একপা পিছিয়ে।

এলফটা একটুও নড়লো না। জ্যানের অভিবাদন করাটা অতি মনোযোগ দিয়ে দেখে বলল। ‘এক্সকিউজ মি, মাস্টার?’

জ্যান উত্তর দিল, ‘আপনার নাম কি মিস?’

‘ইয়ে। ফিগল মাস্টার। আমি ক্ষমা চাইছি মাস্টার। ফিগল মাস্টার বা মিস্ট্রেসদের সঙ্গে কথা বলতে অভ্যস্ত নয়, মাস্টার।’ এলফটাকে দেখে বোঝা যাচ্ছিলো উৎকন্ঠায় হাঁপাচ্ছে।

‘আমি বুঝতে পারছি ফিগল সেটা খুবই সত্যি কথা,’ জ্যান বলল আশ্বাসের স্বরে। ‘বলছিলাম যে আমি একটা অরগানাইজেশন এর সদস্য, আপনি হয়তো ওটার নাম শুনেছেন। আমরা ওটাকে বলি … ইয়ে…’ জ্যান জেমসের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। জেমসের মনে পড়লো ও জ্যান আর র‍্যালফকে বলেছিল আন্ট হারমায়োওনির ইক্যুয়াল রাইট ফর এল্ভস সংস্থার নাম।

জেমস তোতলানোর মতো করে বলল, ‘ও হ্যাঁ, এস পি ই ডব্লু। দ্য সোসাইটি ফর দ্য প্রোমোশন অফ, ইয়ে, এলফিস ওয়েলফেয়ার?’

জ্যান ঝট করে ফিগলের দিকে ঘুরে বলল, ‘হ্যাঁ ওটাই যেটা ও বলল। এস পি ই ডব্লু। আমি নিশ্চিত এটার কথা আপনি শোনেন নি। আমরা, যারা এলফ তাদের সাহায্য করি।’

‘ফিগল কোন দিন শোনেনি, মাস্টার। কক্ষনো না। ফিগলের অনেক অনেক কাজ, মাস্টার।’

‘মাই ডিয়ার ফিগল, ওইটাই আ্মাদের কাজের ক্ষেত্র। আমরা এস পি এ ডব্লুতে ওই কাজের ভার কমানোর ব্যাপারেই কাজ করছি। আর এই মুহূর্তে আপনার বিশ্বাস জাগানোর জন্য আমি আপনার কাজে সাহায্য করবো। আমাকে কি সুযোগ দেবেন আপনার ওই ভারি বাস্কেটটা বয়ে নিয়ে যাওয়ার?’

এবার ফিগলকে দারুণ ভয়ার্ত দেখাল। ‘ওর বাবা না না মাস্টার। ফিগল সেটা হতে দিতে পারে না! মাস্টার কখনই ফিগলের কাজ করবে না, স্যার!’

জেমস বুঝতে পেরেছে জ্যান আসলে কি করতে চাইছে। কিন্তু মনে হচ্ছে ব্যাপারটা অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে। হাউস এলফরা যারা বিশেষ করে এই স্লিদারিন হাউসে কাজ করে তারা মোটেই কোনও ভালো ব্যবহার পায় না সদস্যদের কাছ থেকে। ফিগলকে দেখে মনে হচ্ছে ভয়ের ঠেলায় এবার না কেঁদে ফেলে।

জ্যান হাঁটু গেড়ে বসে নিজেকে সিঁড়ির দ্বিতীয় ধাপে দাঁড়িয়ে কাঁপতে থাকা হাউস-এলফ টার চোখের সমা ন্ত রালে নিয়ে এল।‘মিস ফিগল আমি আপনাকে কোন রকম ভয় দেখাতে বা ঝামেলায় ফেলতে চাইছি না। আমি প্রমিস করছি। তাছাড়া আমি এই স্লিদারিন হাউসের কেউ নই। আমি র‍্যাভেন ক্লয়ের সদস্য। আপনি র‍্যাভেন ক্ল এর নাম শুনেছেন?’

‘ফিগল শুনেছে মাস্টার। ফিগল মঙ্গলবার আর শুক্রবার র‍্যাভেন ক্লয়ের জামা কাপড় নিয়ে আসে কাচার জন্য। র‍্যাভেন ক্ল রা স্লিদারিনদের চেয়ে কম সেন্ট ব্যবহার করে মাস্টার।’ এলফটা এখনও হাঁফাচ্ছে তবে আগের চেয়ে অনেক কম।

‘আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। আমি নিশ্চিত আর অনেক কিছু আছে বয়ে আনার জন্য। আমি কি ওগুলো নিয়ে এসে দেব?’

ফিগল নিজের ঠোঁট দুটো শক্ত করে চেপে ধরলো। ওর মনে এখন ভাবনার দোলাচল। বুঝতে পারছে না ওর সঙ্গে ইয়ার্কি করা হচ্ছে কিনা। তাছাড়া ওর ওপর দেওয়া কাজের নির্দেশগুলো ওকে চেপে ধরছে। বেশ কিছুক্ষন টেনিস বলের মতো চোখ দুটো দিয়ে জ্যানকে দেখলো তারপর একবার ঝট করে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

জ্যান মোলায়েম স্বরে বলল, ‘দারুণ মিস ফিগল। আপনি খুব ভালো একজন এলফ। ওপরে আর অনেক কিছু আছে তাই না, কাচার জন্য? আমি দেখতে পাচ্ছি আপনি ওগুলোকে দরজা গুলোর সামনে এনে রেখেছেন।আমি ওগুলো এনে দিচ্ছি?’ বলেই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করলো।

‘আরে যাবেন না মাস্টার! থামুন!’ ফিগল বলল হাত তুলে। মাথার ওপর থাকা বাস্কেটটা একপাশে কাত হয়ে যাচ্ছিলো, ওটাকে সামলে নিলো সহজেই। ‘মাস্টার, গণ্ডি ভেঙে যাবে। ফিগল চায় না অন্যরা দেখুক কেউ তাকে সাহায্য করেছে।’ ফিগল শেষ দুটো ধাপ নেমে এসে সিঁড়ির দিকে মুখ করে ঘুরে দাঁড়ালো। হাত তুলে একটা তুড়ি বাজালো। কিছু একটা পরিবর্তন হল দরজায়। জেমসের কেমন যেন মনে হল একটা আলো নিভে গেল। যদিও ঘরের আলোয় কোন পরিবর্তন হল না। ‘এবার মাস্টার ওপরে যেতে পারেন। কিন্তু প্লিজ মাস্টার…’ আবার ফিগলের মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠল ভবিষ্যৎ শাস্তির কথা ভেবে। ‘কিন্তু মাস্টার দয়া করে বাস্কেট ছাড়া আর কিছু ছোঁবেন না।আপনার হয়ে গেলে ফিগল সব বেসমেন্টে নিয়ে যাবে ধোয়ার জন্য। প্লিজ?’ বোঝাই যাচ্ছিলো ও চাইছে তাড়াতাড়ি এ ঝামেলা চুকে যাক।

জ্যান হেসে বলল, ‘কোন চিন্তা নেই।’ একটু থেমে প্রথম ধাপে পা দিল। কিছুই হল না। ‘ আমি এক্ষুনি ফিরে আসছি বন্ধুগন,’ জ্যান কথাটা বলেই টকাটক উঠে গেল ওপরে।

জেমস একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। একই সঙ্গে র‍্যালফও। ফিগল জ্যানের ওঠার দিকে তাকানোর পর উৎকন্ঠার দৃষ্টিতে জেমস আর র‍্যালফের দিকে ঘুরে তাকালো। র‍্যালফ কাঁধ উঁচিয়ে হাসলো। জেমস ও হাসলো তবে সেটা কাষ্ঠহাসি। ফিগল যদিও বুঝতে পারলো না। নিজের মাথায় থাকা বাস্কেটটা নিয়ে টাল সামলাতে সামলাতে দরজার কাছে গেল।ঢেলে দিল ওতে থাকা সব কিছু আগে থেকে রাখা কাপড়ের স্তুপে।

‘জেমস,’ র‍্যালফ আস্তে করে ডাকলো, ‘ম্যাপে নজর রাখিস।’

মাথা নিচের দিকে নামিয়ে সম্মতি জানালো এবং পুনরায় মরাডউডার ম্যাপ খুললো জেমস। প্রথমেই নজর দিল ম্যাপের ডানদিকের একেবারে ওপরের অংশটায়, কুইডিচ মাঠ আর গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডগুলো নিখুঁত ভাবে আঁকা আছে ওখানে। অনেকগুলো নাম একসঙ্গে জমাট বেঁধে আছে গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের ভেতর এবং আশেপাশে। কিছু মাঠের মধ্যে নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে। স্লিদারিনদের প্র্যাক্টিস সেশন এখনও চলছে তবে খুব বেশি জন ঝাড়ু নিয়ে উড়ছে না। সম্ভবত ওরা আলাপ আলোচনা করছে আগামি খেলার পন্থাপদ্ধতি নিয়ে। ভালো করে দেখার চেষ্টা করলো মাঠ আর গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে থাকা নামগুলোকে। স্কোয়ালাস, নরবারট, বিটল ব্রিক শ আর অনেকের নাম ওখানে যাদের জেমস চেনে না।

জেমস দেখল ফিগল ঠিক সেই ভঙ্গিতে হাত তুলেছে যে ভাবে সে দেখেছিল গ্রেট হলে হাউস এলফদের টেবিল ক্লথ উঠিয়ে নিতে। যে জামা কাপড়গুলো কাচা হবে সেগুলো একটা বলের মতো হয়ে বড় একটা বিছানার চাদরের মধ্যে ঢুকে গেল। চারটে কোনা ওপরে গিয়ে বেঁধে নিলো গিঁট। ফিগল সামান্য গোলাপি রঙের পাওডার ছুঁড়ে দিল কাপড়ের বলটার দিকে তারপর আবার তুড়ি মারলো। বলটা অদৃশ্য হয়ে গেল, সম্ভবত পৌঁছে গেল বেসমেন্টে। ফিগল এবার শঙ্কিত চোখে তাকালো সিঁড়ির দিকে।

‘কিরে কি দেখছিস?’ র‍্যালফ চিন্তাগ্রস্থ কন্ঠে জানতে চাইল।

জেমস গলা যত দূর পারলো শান্ত রেখে বলল, ‘আমি টাবিথাকে দেখতে পাচ্ছি না। ফিলিয়া গয়েল ও নেই। ওদের মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে তো আমি দেখিনি।’

‘তারমানে? ওরা কোথায় গেল তাহলে?’

‘আমি জানি না। ওরা এই মুহূর্তে ম্যাপের মধ্যে নেই।’

ফিগল ওদের দেখছিলো, বিস্ফারিত এবং সতর্কভাবে। হয়তো অনুমান করতে পারছে একটা কিছু গণ্ডগোল ঘটছে মিনিট খানেক আগে। জেমস মনোযোগ দিয়ে ম্যাপটা দেখতে থাকল, বড় ফাঁকা জায়গা গুলোর দিকে তাকালো যদি  কোনওটা থেকে করসিকা আর গয়েলবেরিয়ে আসে। স্লিদারিনের দরজার কাছের ফাঁকা জায়গাটার দিকে নজর রাখছিলো বেশি করে।

‘ধ্যাত তেরে কি,’ চোখ বড় বড় করে বলল। ‘ওরা এসে গেছে! এখন এখানেওরা কি করছে?’

‘ম্যাপটা বন্ধ কর!’ র‍্যালফ বলল, ওর মুখ সাদা পেস্টের মতো হয়ে গেছে। ‘চল পালাই! জ্যান!’ সিঁড়ির কাছে গিয়ে ডাক দিল। কোন উত্তর এলনা ওই দিক থেকে।

সতর্কভাব থেকে আতঙ্কে বদলাতে শুরু করেছে ফিগলের মুখ। ‘মিস্ট্রেস করসিকা আসছেন! ফিগল একটা দারুণ ভুল কাজ করে ফেলেছে! ফিগলের দারুণ শাস্তি হবে!’ সোজা ছুটে গেল সিঁড়ির দিকে, সঙ্গেসঙ্গেই তুড়ি বাজালো। আবার সেই অদ্ভুত রকমের পরিবর্তনটা অনুভব করলো জেমস। বুঝতে পারলো বন্ধন মন্ত্রটা ফিরিয়ে আনা হল পুনরায়। একই সঙ্গে ওপর দিকেএবং কমন রুমের দরজার দিক থেকে ভেসে এল পদধ্বনি এবং কথা বলার শব্দ। জেমস ম্যাপটাকে পাকিয়ে নিয়ে ব্যাকপ্যাকের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলো। র‍্যালফ নিজেকে সবচেয়ে কাছের বসার জায়গাটায় নিজেকে প্রায় ছুঁড়ে দিল, দেখাতে চাইল অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে ও ওখানে বসে আছে। পেছনের দরজা খুলে যেতেই জেমস ব্যাকপ্যাকটাকে কাঁধে ঢুকিয়ে নিয়ে ঘুরলো।

টাবিথা করসিকা আর ফিলিয়া গয়েল প্রবেশ করলো দরজা দিয়ে। জেমসকে দেখতে পেয়ে দুজনেই কথা বলা থামালো। টাবিথার পরনে কালো কেপ্রি আর স্পোর্ট ক্লোক, ঝাড়ুটা কাঁধে। সুবিন্যস্ত ভাবে পনিটেল করে বাঁধা চুল, কিছুক্ষন আগে যে কুইডিচএর প্র্যাক্টিসে ব্যস্ত ছিল তার বিন্দুমাত্র ছাপ নেই। শান্ত এবং সতেজ তার ছাপ সুস্পষ্ট। টাবিথাই প্রথম কথা বলল।

‘জেমস পটার,’ সমস্ত রকম সারপ্রাইজ হওয়ার অবস্থা কে সামাল দিয়ে বলল। ‘কি সৌভাগ্য।’

ফিলিয়া ঝাঁঝিয়ে বলে উঠল, ‘তুমি এখানে কি করছো?’

‘ফিলিয়া, বাজে ব্যবহার একদম নয়,’ টাবিথা দ্রুত জেমসের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে বলল। ‘আমাদের এখানে মিঃ পটারের আগমন কে স্বাগত জানাই। আশা রাখছি গ্রিফিন্ডোরে আমরাও একই অভ্যর্থনা পাবো। এই অস্থির সময়ে আমরা যদি নিজদের ভালো ভাবমূর্তি বানাতে না পারি তাহলে আমরা কি করছি? গুড আফটারনুন, মিঃ ডিডল।’

র‍্যালফ চেয়ারের ভেতর থেকে গুঙিয়ে উঠল একরাশ অস্বস্তি সহ। ফিলিয়া জেমসের দিকে একই রকম ভাবে তাকিয়ে ছিল। মুখের ভাব অনেক কমনীয় হয়েছে কিন্তু একটা থমথমে শীতলভাবও ছড়িয়ে আছে।

‘গ্রীফিন্ডোর কুইডিচ দলের জন্য আমার দুঃখ হচ্ছে, ঘরের একটা কোনায় নিজের ক্লোকটা ঝুলিয়ে রাখতে রাখতে টাবিটা বলল। ‘আমরা সব সময়েই টুর্নামেন্ট ফাইনালে গ্রীফিন্ডোর বনাম স্লিদারিন ম্যাচ পছন্দ করি, তাই না র‍্যালফ? জেমস আমি বুঝতে পারছি ব্যাপারটা তোমার বন্ধু্দেরকে খুব কষ্ট দিচ্ছে যে ওরা আমাদের বিরুদ্ধে চিৎকার করতে পারবে না। ওদেরকে আমার সমবেদনা জানিয়ে দিও। ও হ্যাঁ আর একটা কথা…,’ টাবিথা এগিয়ে গেল সিঁড়ির দিকে গার্লস রুমে যাওয়ার জন্য। ‘আমি দেখলাম অনেক র‍্যাভেন ক্ল খেলোয়াড় মাঠে গিয়েছিল আমাদের প্র্যাকটিস দেখার জন্য। অবাক হলাম তোমার বন্ধু জ্যানকে ওখানে দেখা গেল না বলে। তুমি কি ওকে দেখেছো, দেখোনি না?’ জেমসের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের ঝাড়ূটাকে মেঝেতে বার কয়েক ঠুকলো।

জেমস মাথা নাড়লো, কথা বলার সাহস হল না।

‘হুম ম,’ টাবিথা চিন্তাগ্রস্থভাবে বিড়বিড় করলো। ‘বেশ কৌতূহলজনক ব্যাপার। মানতেই হবে। ফিলিয়া চল।’

একরাশ আতঙ্ক নিয়ে জেমস তাকিয়ে থাকল টাবিথা আর ফিলিয়ার সিঁড়ি দিয়েওঠার দিকে। মন তোলপাড় করে ও ভাবার চেষ্টা করছিল কোন ভাবে যদি কিছু একটা ঘটানো যায়। কিন্তু কিছুই মাথায় এল না।

‘সরে যাও! সরে যাও!’ এক জোড়া প্যাঁকপেকে কন্ঠ ডেকে উঠল।

টাবিথা আর ফিলিয়া থমকে দাঁড়ালো। ফিলিয়া ঘুরে দাঁড়ালো মুখে রাগের ছাপ। ওর আগে ছিল টাবিথা, আস্তে আস্তে ঘুরলো, মুখে শান্ত অথচ অবাক হওয়ার ছাপ।

জেমসকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কি কিছু বললে?’

জেমস কাশির ভান করলো। ‘ইয়ে, না। সরি। ওই যাকে বলে গলাটা হঠাৎ সুড়সুড় করে উঠল।’

টাবিথা কিছুক্ষন জেমসের দিকে তাকিয়ে থাকার পর ঘাড়টা সামান্য ঘুরিয়ে চোখ কুঁচকে র‍্যালফের দিকে তাকালো। তারপর ঘুরে গিয়ে বাকি কটা ধাপ উঠে ওপরে চলে গেল। পেছন পেছন ফিলিয়া, বার কয়েক রোষান্বিত দৃষ্টি মাথা ঘুরিয়ে ছুঁড়ে দিতে ভুললো না। আরও কিছুক্ষন কেটে গেল, ওদের পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। কিন্তু কোন সন্দেহজনক আওয়াজ বা রাগের চিৎকার ভেসে এল না।

‘কোথায় লুকালি রে!’ আবার হাঁসের গলা শোনা গেল।

‘এটা ওই হতচ্ছাড়ার কাজ!’ র‍্যালফ বলল, লাফিয়ে উঠে নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে। ‘কি করছে ও?’

‘চলে আয়!’ জেমস বল লো প্রধান দরজার দিকে এগোতে এগোতে। ‘ও যদি এখনও ওপরেই থাকে আমাদের কোন সুযোগ নেই ওকে সাহায্য করার।’

ওরা প্রায় ছুটতে ছুটতে স্লিদারিনের হাঊসের এলাকা ছেড়ে এ করিডোর ও করিডোর পাক মেরে এক জায়গায় এসে থামলো। হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছিল দুজনেরই, হাঁফাচ্ছিল চরম। দুজনেই বার করলো নিজেদের হাঁসদুটোকে ব্যাগ থেকে। একইরকম দেখতে হাঁসদুটোকে ভালো করে দেখতে থাকল। দুটো শব্দ ওখানে ভেসে উঠেছে কালো কালিতে লেখা – লন্ড্রি রুম!

‘পাজির পা ঝাড়া কোথাকার!’ র‍্যালফ বলল, সঙ্গেসঙ্গে হেসেও ফেললো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ‘ফিগল নোংরা কাপড় জামারসঙ্গেওকেও পাঠিয়ে দিয়েছে ভূগর্ভস্থ ঘরে! আমার মনে হয় ওর ওখানেই থাকা ভালো।‘

জেমস ফিক করে হাসলো। ‘ না, সেটা করা ঠিক হবে না। বলা যায় না ওরা ওকে হ্যাঙ্গারে টাঙিয়ে শুকাতে দিয়ে দিতে পারে। ওর যদিও ওটাই প্রাপ্য। কিন্তু তার আগে আমাকে জানতে হবে ও কি তথ্য জোগাড় করতে পারলো।’

দুই বন্ধু এবার ছুটে চল লো ভূগর্ভস্থ কক্ষগুলোর দিকে লন্ড্রি খুঁজে বার করার জন্য। মাঝখানে জেমস একবার থামলো একটা পেইন্টিং এ নাইটসদের খাবার সারভ করতে থাকা এক বিরক্তি ভরা মুখের কাজের লোকের সামনে, লন্ড্রি রুমে যাওয়ার পথটা জেনে নেওয়ার জন্য।

 

 

‘আমিতো মিনিট দুয়েক মতো সময় পেয়েছি ঘুরে দেখার। ফিগল হাজির হল কামানের গোলার মতো,” জেমস আর র‍্যালফকে লন্ড্রি রুমে খুঁজে পেয়ে জ্যান বলল।  ‘আমার দিকে একগাদা গোলাপি পাউডার ছিটিয়ে দিল আর ধপাস! আমি এসে পড়লাম এখানে।’

র‍্যালফ চারদিকের বিরাট বিরাট তামার কাপড়কাচার পাত্রগুলো আর বিভিন্ন রকম শব্দ করতে থাকা যন্ত্রপাতিগুলোকে দেখছিলো অবাক হয়ে। এলফরা ওদের তিন বন্ধুর উপস্থিতিকে পাত্তাও দিচ্ছিলো না। দুজন এলফ পাত্রগুলোর ওপর দিয়ে হেলেদুলে এগিয়ে যাচ্ছিলো ফুটন্ত জলে গুঁড়ো সাবান ঢালতে ঢালতে। চারদিক থাকে ছিটকে আসা সাদা ফেনা জমা হচ্ছিল তিন বন্ধুর মাথার ওপর।

‘বিশ্বাস কর, এক দু মিনিট বাদেই এসব দেখার আর কোন আগ্রহ থাকে না,’ জ্যান বলল বিকৃত স্বরে। ‘বিশেষ করে এখানকার এই ললিপপ বাহিনী তোকে যদি আটকে রাখে।’ তিনটে এলফ জ্যানকে ঘিরে দাঁড়িয়ে বিশেষ করে পর্যবেক্ষণ করছিলো।

‘ফিগল একটা মানুষকে এই কাচাকুচি করার ঘরে নামিয়ে আনলো, ওকে আমরা আটকে রাখবো যতক্ষন না জানতে পারছি এর কারণ কি,’ সবচেয়ে বয়স্ক এবং গোমড়া মুখো এলফটা গম্ভীর কন্ঠে বলল। ‘এস’পলিসি। হগ ওয়ারটস কোড অফ কন্ডাক্ট অ্যান্ড প্র্যাক্টিসেস, সেকসন থার্টি, প্যারাগ্রাফ অনুসারে এলফদের কাজের জায়গায় মানুষদের অনুপ্রবেশ আইন ভাঙ্গা হয়েছে। তাই জানতে চাই, তোমরা দুজন কে?’

জেমস আর র‍্যালফ একে অপরের দিকে বোবা দৃষ্টিতে তাকালো। র‍্যালফ বলল, ‘আমরা ওর … যাকে বলে বন্ধু। তাই না বল? আমরা ওকে ওপরে নিয়ে যেতে এসেছি।’

‘ও তোমরাই তাহলে তারা?’ এলফটা বলল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। ‘ফিগল একটা গল্প বলছিল যে মানুষেরা ওর কাজ করে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। ও সুযোগ দিয়েছিল। কি যেন বলছিল ও নাকি এলফ ওয়েলফেয়ার না কি ঘোড়ার ডিম এর কথা বলেছে। ফিগল খুবই হতাশ হয়ে পড়েছে। ব্যাপারটা ঠিক ওর মাথায় ঢোকেনি কিনা। আমাদের সঙ্গে স্কুলের একটা বিশেষ সমঝোতা চুক্তি হয়ে আছে।’

জেমস নম্রভাবে বলল, ‘ও আর ওই চেষ্টা করবে না। ও ভালর জন্যই করতে চেয়েছিল, কিন্তু ও এসব ব্যাপারে ঠিক সড়গড় হয়নি এখনও বুঝলেন কিনা? আমি খুবই দুঃখিত। ও আমাদের ঠিকঠাক বোঝানোর আগেই কাজ করতে শুরু করে দিয়েছিলো। আর এরকম কখনো হবে না।’

র‍্যালফ ও দুঃখ পেয়েছে এমন ভাব করে দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু কথা বলছিল না। এলফদের প্রধান জেমসের দিকে ভৎসনার নজরে তাকালেন। এলফরা কাজের লোক হয়, একটু হতাশাগ্রস্থ হয় সঙ্গেই যথেষ্ট নম্র ভদ্র হয় এরকমটাই জেমস জানা ছিল। কিন্তু এই বিশাল কাজের জায়গায় দেখা যাচ্ছে নিয়মটা সম্পূর্ণ আলাদা। এলফদের সঙ্গে স্কুলের সমঝোতার চুক্তি আছে, এলফ প্রধান সেটাই বললেন। এর থেকে মনে হচ্ছে এরা ভালো মতই একটা সংগঠন গড়ে তুলেছে। আর সেই এলফ সংগঠনের নিয়মানুসারে এলফদের কাজ কেবলমাত্র এলফরাই করতে পারবে। হয়তো এটাকে ওরা নিজেদের কাজের সুরক্ষার একটা দিক হিসাবে দেখে। জেমস বুঝতে পারছে না হারমাইওনি আন্টি এটাকে উন্নতি না অবনতির চিহ্ন রুপে দেখবেন।

আবার এলফ প্রধান গরগরে কন্ঠে বললেন, ‘বুঝলে কিনা, আমি নিজের সেরা বিচারের একটু বিরুদ্ধে যাচ্ছি। তোমরা তিনজন আমাদের নজরে থাকার তালিকায় রইলে। এলফদের নিয়মকানুনের গন্ডির মধ্যে আবার ঢোকার চেষ্টা করলে আমি তোমাদের হেড মিস্ট্রেসের কাছে নিয়ে যাবো। ভুলে যেও না আমাদের ভেতর একটা সমঝোতার চুক্তি আছে।’

‘সেটা অনেকবার শুনলাম,’ জ্যান বিড়বিড় করে বলল, চোখ মেরে।

র‍্যালফ বলল, ‘আপনি তো আমাদের নামই জানেন না। তাহলে আমাদের নজরে রাখবেন কি করে? আমাদের তো চেনেনই না।’ র‍্যালফকে কনুয়ের এক খোঁচা মারল জেমস এইসব কথা বলতে শুনে।

এলফ প্রধান হাসলেন তার সাথিদের দিকে তাকিয়ে, ওরাও হাসলো একটু খানি। ‘আমরা এলফ,’ বলল প্রধান। ‘যাও ভাগো এবারে এখান থেকে। আশা করবো আর তোমাদের টিকি এখানে দেখা যাবে না।’

করিডোর থেকে কাচাকুচির ঘরটায় যাওয়ার অংশটা খুব একটা বড় নয়। সাধারনের চেয়েঅর্ধেক মাপের সিঁড়ির ধাপগুলো। সাবধানে উঠে এল জেমস, র‍্যালফ আর জ্যান।

র‍্যালফ জ্যানকে বলদলো, ‘তোকে মারবো না আদর করবো বুঝতে পারছি না। আর একটু হলেই তোর জন্য আমরা করসিকা আর গয়েলের হাতে ধরা পড়ে যেতাম।’

জ্যান মুচকি হেসে বলল, ‘কজন মানুষ বুক ঠুকে বলতে পারবে সে স্লিদারিনের মেয়েদের থাকার জায়গায় ঢুকেছিল? আমি ঢুকেছিলাম, হি হি।‘

‘কেও বলতে চাইবে কি?’ জেমস বলে উঠল।

‘আমার সঙ্গে এরকম ভাবে কথা বললে আমি মোটেই জানাবো না আমি কি জানতে পেরেছি।’

র‍্যালফ বলল, ‘সেটাই ভালো হবে।’

জ্যান বলল, ‘বোধ হয় না। মেয়েদের শোওয়ার ঘরে প্রত্যেক বিছানার পাশে একটা করে বড় কাঠের ওয়ার্ডরোব আছে। একটা খোলা ছিল। আমি ওটার ভেতর উঁকি মেরে দেখেছি। এখন আমি বলতেই পারি আর আমার জানার দরকার নেই টাবিথা কোথায় তার ঝাড়ুটাকে রাখে।’

ছোটো ছোটো সিঁড়ি পার হয়ে ওরা পৌছালো একটা বড় দরজার কাছে। জেমস ঠেলা মারতেই ওটা খুলে গেল। কাচাকুচি ঘরের গরম আর শব্দ থেকে অবশেষে রেহাই মিললো। ‘ঠিক বুঝলাম না কি বলতে চাইছিস?’

‘ওগুলো ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ডরোব এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। যদিও ওগুলোর ভেতর দিয়ে কোনও জাদু দুনিয়ায় যাওয়া যায় না। যেটার ভেতরের দিকটা কে বলতে পারিস একই সঙ্গে একটা সাজগোজ করার জায়গা আবার জামা কাপড় নিতে হলে তোকে বেশ কিছুটা হেঁটে যেতে হবে এতটাই বড়। আমার তো মনে হচ্ছিল যেন একটা বুটিকের ভেতর ঢুকে পড়েছি। বেশ কিছু ভালো ড্রেস এর সঙ্গেসঙ্গে আদ্যিকালের বদ্যিবুড়ির পোশাকও ছিল ওখানে। সাজগোজের জায়গাটায়কয়েক বোতল ভ্যানিশিং ক্রিমও ছিল। যেগুলো দেখে আমার মোটেই মনে হয়নি যে ভ্যানিশ হওয়ার ব্যাপারটা একটা মেটাফর জাতীয় বিষয়।’

র‍্যালফ জানতে চাইল, ‘সব মেয়েদেরই ওই রকম ওয়ার্ডরোব আছে?’

‘দেখে তো তাই মনে হল।’

জেমস ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘স্লিদারিনের গার্লস কোয়ার্টারে আমদের ঢোকার চান্সটা আপাতত শুন্যই বলা যায়। আর যদি কোনও ভাবে ঢুকতেও পারি জানতেও পারছি না কোনটা করসিকার ওয়ার্ডরোব, খোলার প্রশ্নতো আরও দূরের ভাবনা কি বলিস?’

র‍্যালফ মনে করিয়ে দেওয়ার স্বরে বলল, ‘আমিতো বলেই ছিলাম তোকে এই কাজটা একেবারেই অসম্ভব একটা ব্যাপার।’

জ্যান বলে উঠল, ‘ওখানে যে গন্ধ পেয়েছিলাম তাতে মনে হয়েছিল আমার ঠাকুমার আমলের পোশাকগুলো বোধ হয় রাখা আছে।’

জেমস বলল, ‘তুই থামবি? ওখানের বাখ্যান শুনতে চাই না। সিরিয়াস ভাবনা দরকার। আমরা এখনও জানি না হল অফ এল্ডারস ক্রসিং কোথায় বা জ্যাক্সন আর ডেলাক্রয় কখন সব কিছু একত্রিত করার কথা ভাবছেন। এরকমও ভাবতেই পারি যে আজ রাতেই ওটা করা হবে।’

‘তারমানে!’ র‍্যালফ বল লো, ‘তুই কি বলতে চাইছিস ওরা সবগুলো রেলিক বাদ দিয়েই কাজটা করে ফেলতে পারেন?’

জ্যান একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে, গম্ভীর হওয়ার ভান করে বলল, ‘ হ্যাঁ, যদি ওরা সেই চেষ্টা করেন আর কোন কাজ না হয় তাহলে ওরা বাকি রেলিক দুটো লুকিয়ে ফেলবেন। আমরা আর কোনভাবেই ওগুলো পাবো না।’

র‍্যালফ হাত ওপর দিকে উঠিয়ে বলল, ‘এ বাবা? তাহলে তো অন্য পথ দেখতে হবে। মানে বলতে চাইছি যে টাবিথা তো কোন না কোন সময় ঝাড়ুটা বার করে ওয়ার্ডরোব থেকে, ঠিক তো? আজকেই তো ওটা নিয়ে ওকে আমরা দেখেছি। আচ্ছা আমরা যদি কুইডিচ ম্যাচ বা অন্য কোন সময়ে ওর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিই তাহলে কেমন হয়?’

জ্যান হাসলো। ‘এটা আমার পছন্দ হয়েছে। ও যখন মাটি থেকে শখানেক ফুট ওপরে থাকবে তখন করতে পারি’

‘আরও অসম্ভব একটা ভাবনা, ‘জেমস বলল চরম হতাশার সঙ্গে। ‘আমার ড্যাডের সময় থেকে কুইডিচ মাঠে একটা সুরক্ষা মন্ত্র সেট করা হয়েছে যাতে বাইরের কেউ কোন গণ্ডগোল পাকাতে না পারে খেলা চলাকালীন সময়ে। অনেকবার এমন ঘটনা ঘটেছে যখন ডার্ক উইজার্ডরা মন্ত্রের ব্যবহার করে ওঁকে আহত করতে চেয়েছে বা ঝাড়ু থেকে ফেলে দিতে চেয়েছে। একবার তো এক দল ডিমেনটর খেলার মাঠেই ঢুকে পড়েছিল। তার পর থেকে বিশেষ বাঊন্ডারী সেট করে দেওয়া হয়েছে। কোন রকম মন্ত্র বাইরে থেকে ঢুকবে না বা ভেতর থেকে বাইরে আসবে না।’

র‍্যালফ চোখ বড় বড় করে জানতে চাইল, ‘ডিমেন্টর কি?’

‘ওটা তুই না জানলেই ভালো র‍্যালফ, বিশ্বাস কর।’

‘যাই হোক আমরা আবার সেই শুরুর জায়গাতেই ফিরে গেছি,’ জ্যান বলল হতাশ ভাবে। ‘আমার মাথায়তো কোন আইডিয়াই আসছে না।’

র‍্যালফ সহসাই করিডোরে থমকে দাঁড়ালো। জ্যান ধাক্কা খেলো ওর সঙ্গে যেটা র‍্যালফ যেন অনুভব করতেই পারলো না। করিডোরের একটা পেইন্টিং এর দিকে ও একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো। জেমস দেখল এটাই সেই ছবিটা যেটার কাছে লন্ড্রি রুমে যাওয়ার আগে ও থেমেছিল। কোনার দিকের সেই পরিচারক যে জেমসের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল যাওয়ার সময়। আর সেটা ছিল পথ জানার প্রয়োজনে। জেমস ইদানীং কালে বিভিন্ন ছবি থেকে মানুষজনের ওর দিকে তাকিয়ে থাকায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এখানে নাইটদের আনন্দ উৎসবের মাঝে ওই পরিচারক সোজা তাকিয়ে আছে র‍্যালফের দিকে।

র‍্যালফের সঙ্গে ধাক্কা লাগা জায়গাটায় হাত বোলাতে বোলাতে জ্যান বলল, ‘দারুণ ব্যাপার। জেমস দ্যাখ তুই কি করেছিস। এখন র‍্যালফ ও প্রতি পনের নম্বর ছবি দেখলে দাঁড়িয়ে পড়ছে। এটা কিন্তু মোটেই ভালো ব্যাপার নয়, যাই বলিস। তোরা দুজন হলি আমার দেখা সেরা পাগলাটে চিত্রপ্রেমী।’

জেমসও ছবিটার দিকে একটু এগিয়ে গেল, দেখলো পরিচারকটি দাঁড়িয়ে আছে ছায়াময় এক ব্যাকগ্রাঊন্ডের সামনে, কাঁধে একটা লম্বা কাপড় নিয়ে। অবয়বটি একটু পিছিয়ে গেল, জেমস বুঝতে পারলো চরিত্রটি ছায়াচ্ছন্ন স্থানটিতেই থাকতে চাইছে। ‘র‍্যালফ কি ব্যাপার রে?’ জিজ্ঞেস করলো।

‘আমি এটা আগে দেখেছি,’ র‍্যালফ উত্তর দিল একটু অন্যমনস্ক ভাবে।

‘আরে মিনিট দশেক আগেই তো আমরা এই পেইন্টিংটার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। ভুলে গেলি নাকি?’

‘না না। সে সময়ে এটা সাধারণ ছিল, কিন্তু তার সঙ্গে এটা মেলাতে পারছি না। ওই লোকটা এখন অন্য জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।’

র‍্যালফ হঠাৎই এক পা ভাঁজ করে বসে ব্যাকপ্যাকটাকে নিজের সামনে মেঝেতে রাখলো। দ্রুত ওটার চেন খুলে ভেতরটা পাগলের মতো হাতড়াতে থাকল। মনে হচ্ছিল যেটার কথাও ভাবছে সেটা উড়ে পালিয়ে যাবে। অবশেষে ভেতর থেকে একটা বই বার করে পেছনদিকে তাকালো বিজয়ীর ভঙ্গীতে। জ্যান আর জেমস ওর কাছে এগিয়ে গেল। চেষ্টা করলো উঁকি মেরে বইটাকে দেখার। জেমস বইটা চিনতে পারলো। সেই প্রাচীন পোশন মেকিং এর সেই বইটা যা মাম আর ড্যাড র‍্যালফকে ক্রিসমাসে দিয়েছিল। র‍্যালফের পাতা উল্টানোর সঙ্গেসঙ্গেই জেমসদেখতে পাচ্ছিলো বইটার পাতাগুলোয় লেখা অজস্র নোটস আর আঁকাবুকি গুলো। র‍্যালফ পাতা উল্টানো থামালো। দুহাতে বইটা ধরেতুলে ধরলো সেই উচ্চতায় যাতে পেছনে ওই পরিচারকের পেইন্টিংটা দেখা যায়। জেমস ঢোক গিললো।

জ্যান আঙুল তুলে বলল, ‘আরে এতো একেবারে একই রকম!’

নিশ্চিত ভাবেই, পোশন বইটার শেষের দিকের পাতার ডানদিকের মারজিনে একটা পুরানো পেন্সিল স্কেচ দেখা যাচ্ছে ওই একই পরিচারকের। ভুল হওয়ার কোনও উপায় নেই, হুকের মতো বেঁকানো নাক, মোটাসোটা থুপথুপে ধরনের আকৃতি। বইটার অবয়বটা নড়ে উঠে হলঘরের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে এত দ্রুত চলে গেল যেন মনে হল দৌড়ে গেল। থেমে গেল ওপর দিকের থামগুলোর কাছে গিয়ে। টেবিলে বসে থাকা নাইটরা ব্যাপারটাকে আমল দিল না। জেমস চোখ কুঁচকে তাকিয়ে থাকল।

র‍্যালফ জয়ীর ভঙ্গীতে বলল, ‘আমি জানতাম আমি এটা আগে দেখেছি। একটু আগে ও অন্য জায়গায় ছিলো যে কারনে গণ্ডগোলটা কি বুঝতে পারছিলাম না। আর এখন দ্যাখ বইতে যেমনটা আঁকা আছে ঠিক সেই জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। এটা বেশ অদ্ভুত।’

জেমস বলল, ‘আমি একটু দেখতে পারি?’ র‍্যালফ কাঁধ উঁচিয়ে বইটা জেমসের হাতে দিল। জেমস ওটাকে উলটে নিয়ে প্রথম দিকের পাতা খুললো। প্রথম একশ পাতার মার্জিন বিভিন্ন নোটস আর মন্ত্রে ভর্তি, কিছু কিছু জায়গা মুছে দিয়ে অন্য কালিতে লেখা। যেন মনে হচ্ছে এই বইয়ের লেখক নিজের লেখা সংশোধন করে আবার লিখেছেন। বইটার মাঝখান থেকে নোটসের বদলে বেড়েছে ছবির আধিক্য। খসড়া ধরনের আঁকা হলেও বেশ পাকা হাতের কাজ। জেমস অনেকগুলোই চিনতে পারছে। রাজার রাজসভার পেছন দিকে থাকা মেয়েটার স্কেচ এটা। আর কয়েকটা পাতা পরেই দেখতে পেলো পয়জনিং অফ পেরাক্লেস পেইন্টিং এর টাক মাথা মোটা উইজারডটার স্কেচ। একের পর এক ও দেখতে পেল সেই সব চরিত্রগুলোর স্কেচ যারা পেইন্টিং থেকে রোজ ওর আর ওর বন্ধুদের ওপর নজর রাখে, নিরবচ্ছিন্ন কৌতূহল সহকারে।

‘সত্যিই অদ্ভুত,’ জেমস বলল চাপা গলায়। ‘এখানে যাদের স্কেচ করা আছে তারা সবাই হগওয়ারটস স্কুলের কোন না কোন পেইন্টিং এ আছেন। লক্ষ্য করেছিস?’

র‍্যালফ আবার বইয়ের আঁকাগুলোর দিকে তাকালো, তারপর দেখলো পেইন্টিং এর দিকে।কাঁধ নাচিয়ে বলল, ‘অদ্ভুত নিশ্চিত তবে চমকে দেওয়ার মতো কিছু নয়, ভুল কিছু বললাম? মানে বলতে চাইছি যে এই বইটা যার ছিল সে একসময় হয়তো এই স্কুলেরই ছাত্র ছিল, তাই না? আমার মতোই সে ছিল এক স্লিদারিন। আর সেজন্যই তোর ড্যাড আমাকে এই বইটা দিয়েছেন। আর তিনি যিনি ছিলেন সে যেই হোক আঁকতে ভালবাসতেন। বিভিন্ন পেইন্টিং থেকে একজন চিত্রপ্রেমী ছবিগুলো এঁকেছেন। এটাই বড় ব্যাপার।’

জ্যান ভুরু উঁচিয়ে বই আর আসল পেইন্টিং লোকটাকে,যে এখনও স্তম্ভের কাছেই দাঁড়িয়ে আছে, এর ছবি দুটোকে বারবার দেখছিলো। ‘নাহ, এগুলো কেবলমাত্র স্কেচ নয়,’ মাথা নেড়ে বলল। ‘ এগুলো আসল, বা প্রায় কাছাকাছি। যথেষ্টই মুস্কিল ফারাক বার করা। কি করে বুঝতে পারছি সেটা আমার কাছে জানতে চাস না। কিন্তু বুঝতে পারছি। যে এগুলো স্কেচ করেছিল সে ছিল একজন দক্ষ নকলনবিশ… অথবা সেই ছিল আসল চিত্রশিল্পী।’

র‍্যালফ একটু ভাবলো, তার পর মাথা নাড়লো। না আমি তোর কথা মানতে পারছি না। এই সব পেইন্টিংগুলো বিভিন্ন সময়ে আঁকা হয়েছে। কোনভাবেই সম্ভব না কোন একজন মানুষের পক্ষে এগুলো করা। তার থেকেও বড় কথা এখানকার অনেক পেইন্টিং অনেক অনেক বছরের পুরানো। এই বইটার থেকেও বেশী বছর আগের।

জেমস বলল, ‘এখানেই তো আসল ব্যাপারটা বোঝা যাচ্ছে। ফটাস করে বইটা বন্ধ করে মলাটের দিকে নজর দিল। ‘যে এগুলো এঁকেছিল সে সব পেইন্টিংগুলো করেনি। ভেবে দ্যাখ যে চরিত্র গুলোকে এঁকেছে তারা কেউ কোন পেইন্টিং এর মুখ্য চরিত্র নয়। প্রত্যেকেই যাদের ছবি এখানে স্কেচ করা হয়েছে তারা পেছনের সারিতে থাকা মানুষ। কেউ একজন এদেরকে ওই সব পেইন্টিংগুলোর মধ্যে জুড়ে দিয়েছে।’

জ্যান ঠোঁটের কোনা কামড়ে ধরে ভ্রু উঁচালো। ‘কিন্তু কেউ একজন এটা করেছে কেন? এতো অনেকটা ভালো দেওয়ালে উলটোপালটা লেখা বা আঁকার মতো কাজ। যেটা করতে কেউ মানুষটাকে দেখতে পেল না। বা করা হল সেটাও কেউ বুঝতে পারলো না। তাহলে এটা করে লাভটা কি হল?’

জেমস ও ভাবছিলো। জেমস নিজেকেই মনে মনে বাহবা দিয়ে হাতের বইটার দিকে আবার তাকালো। ‘আমার মনে হচ্ছে আমি একটু আঁচ করতে পারছি,’ বলল, চোখ কুঁচকে কিছু একটা পুনরায় ভাবতে ভাবতে। ‘আমরা আজ রাতের মধ্যেই এটা বুঝতে পেরে যাবো।’

 

 

‘কাম অন র‍্যালফ!’ জেমসবিরক্তি মেশানো ফিসফিসানিতে বলল। ‘সোজা হয়ে হাঁট! তুই সব গণ্ডগোল করে দিবি। তুই তো আমার পাটা দেখতে পাচ্ছিস !’

র‍্যালফ গোঙানির মতো করে বলল, ‘আমি পারছি না।’ যতটা সম্ভব ঝুঁকে থেকে বলল। ‘আমি জানি তুই বলবি তোর ড্যাড আর ওর বন্ধুরা এটা প্রায় সময়েই করতেন। কিন্তু ভুলে যাস না ওদের মধ্যে একজন মেয়ে ছিল।’

জ্যান বলল, ‘হ্যাঁ বুঝতে ,পারছি। আর সেই মেয়েটা দিনে সাতবার গোগ্রাসে খেতো না।’

তিনবন্ধু অন্ধকার করিডোর দিয়ে ইনভিজিব্ল ক্লোকটার তলায় ঢুকে এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে একবার ওদের হৃদপিণ্ড প্রায় গলার কাছে এসে গিয়েছিল যখন সিঁড়ির কাছে গ্রিফিন্ডোরের প্রিফেক্ট স্টিভেন মেটজকার আর ওর ভাই নোয়া একেবারে ওদের কাছাকাছি এসে গিয়েছিল। এছাড়া আর কারোর দেখা মেলেনি। ওরা একচক্ষু উইচের স্ট্যাচুর মোড়টার কাছে এসে যেতেই জেমস ওদের থামতে বলল। তিনজন সরে গেল একটা কোনায়। জেমস খুললো মরাউডার ম্যাপটা।

র‍্যালফ অভিযোগের মতো করে বলল, ‘আমি ঠিক বুঝতে পারছি আমরা তিনজন একসঙ্গে এটা কেন করছি? আমি তোদের দুজনকে বিশ্বাস করি। তোরা আসল কারণটাতো বলবি বোধ হয় আগামি কাল ব্রেকফাস্টের সময়।’

‘র‍্যালফিনেটর আমরা যখন এটা প্ল্যান করেছিলাম তুই সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছিলি,’ জ্যান ফিসফিস করে বলল। ‘আর এখন তুই দয়া করে ধৈর্য হারাস না।’

‘সে সময়টায় দিনের আলো ছিল। আর আমি অত ধৈর্য নিয়ে জন্মাইনি, জানিসই তো।’

জেমস শব্দ করলো, ‘শ-শ শ!’

জ্যান ম্যাপের ওপর ঝুঁকে বলল, ‘কেউ আসছে নাকি?’

জেমস মাথা নেড়ে বলল, ‘না না। ভয়ের কিছু নেই। ফিলচ এখন নিচে ওর কাজের জায়গায়। জানি না লোকটা আদপেই কখনো ঘুমায় কিনা, তবে এখন না ঘুমালেও ক্ষতি কিছু নেই। আপাতত আমাদের কাজের এলাকা ফাঁকা।’

র‍্যালফ সোজা হল, ইনভিজিবল ক্লোকটা এখন মেঝে থেকে এক ফুট ওপরে। ‘তাহলে আমরা এই জিনিসটার নিচে ঢুকে আছি কেন?’

জেমস ম্যাপের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলল, ‘কারণ এটাই নিয়ম।’

‘তা ছাড়াও,’ জ্যান বল লো, ‘একটা ইনভিজিবল ক্লোক থেকে কি লাভ যদি সেটা ব্যবহারই না করি?’

‘চারপাশে কিন্তু কেউ নেই যে আমাদের দেখতে পাবে,’ র‍্যালফ জানালো।

জেমস ওদের মোড়টার ডানদিকের কোনার দিকে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো। ওরা কিছুক্ষন বাদে এসে পৌছালো হেডমিস্ট্রেসের অফিসের সামনে যেটার পাহারায় আছে গারগয়েল। জেমস ভালোই বুঝতে পারছে অদৃশ্য পোশাকের তলার দিকে ওদের পায়ের দিকে ওটা তাকিয়ে আছে।ওর মনে একটাই আশা যে এই অফিস ঘরে ঢোকার পাসওয়ার্ডটা একই আছে , যেটা ও শুনেছিল নেভিলের সঙ্গে এসে মাস কয়েক আগে।

গলাটা একটু ঝেড়ে নিয়ে আস্তে করে বলল, ‘ইয়ে, গ্যাল্লওয়াটার?’

নতুন গারগয়েলটা, যাকে বদলানো হয়েছে আগেরটা ব্যাটল অফ হগ ওয়ারটসে ভেঙ্গে যাওয়ার পর, সামান্য মাথা ঘোরালো। শব্দটা শুনে মনে হল কোন এক কবরখানার গেট খুললো। ‘এই কি সেই যে অরন্যের সবুজ মাঠ আর নীল আকাশ এবং লাল ছকের সঙ্গে আছে?’ প্রশ্নটা ভেসে এল মাপা উচ্চারনে। ‘আমি তো মনে করতে পারছি না।’

জেমস অবাক হয়ে র‍্যালফ আর জ্যানকে বলল ফিস ফিসিয়ে। ‘অরন্যের সবুজ মাঠ? আমি তো জানিই না সেটা কি বস্তু! যেটা আমি বললাম সেটাই তো নেভিল বলেছিল ভেতরে ঢোকার আগে!’

জ্যান জানতে চাইল, ‘উনি কি উত্তর দিয়েছিলেন?’

‘ওকে কোন প্রশ্নই করা হয়নি!’

র‍্যালফ বলল, ‘আমার মনে হচ্ছে এটা একটা টারটান পদ্ধতি। আমার গ্র্যান্ডমাম এসব নিয়ে খুব সময় কাটান। শুধু বলে দে, হ্যাঁ।’

‘তুই সিওর তো?’

‘মোটেই আমি নিশ্চিত নই। তাহলে না বলে দে! আমি কি উত্তর জানি নাকি?’

জেমস গারগয়েলটার দিকে ফিরলো, যে এখনও একভাবে জেমসের পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ‘ইয়ে, হ্যাঁ, একদম।’

গারগয়েলটা চোখ মেরে বলল, ‘অনুমান সঠিক হয়েছে।’ ওটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একপাশেসরে গেল।, খুলে গেল প্যাঁচানো সিঁড়ির প্রবেশপথ। তিনবন্ধু জড়ামরি করে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো প্রথম ধাপটার ওপর। তিনজন দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই সিঁড়িটা উঠতে শুরু করলো আস্তে আস্তে, ওপর দিকে ওদেরকে নিয়ে। হেড মিস্ট্রেসের অফিসের সামনের হল ঘর ওদের পেছন দিকে নিচে চলে গেল, আর ওরা অদৃশ্য পোশাকের তলায় কাঁপতে থাকল, হাসতে থাকল, একে অপরকে চেপে ধরলো।

‘এবার বুঝতে পেরেছি,’ র‍্যালফ বলল বিরক্তির সঙ্গে। হাঁচড়পাচড় করে বেড়ানোর চেষ্টা করলো ক্লোকটার তলা থেকে। জেমস আর জ্যান মাথার ওপর থেকে ক্লোকটা সরালো এবং চারদিকে তাকালো সন্ত্রস্থ চোখে, বোঝার চেষ্টা করলো র‍্যালফের হাসির কারণ। সেড্রিক ডিগরির ভূত ওদের সামনে দাঁড়িয়ে মুখে দুষ্টুমির হাসি।

র‍্যালফ একদমে বলল, ‘এভাবেকাতুকুতু দেওয়াটা একদম ঠিক না।’

“সরি” সেড্রিক বললেন চাপা স্বরে। “আমায় বলা হয়ে ছিল এখানে উপস্থিত থাকার জন্য”

জেমস জানতে চাইল, ‘কে বলেছিল আপনাকে এখানে আসার জন্য?’ কোনক্রমে নিজের উত্তেজনা প্রশমন করে। এখনও ওর ঘাড়ের কাছের রোমগুলো খাড়া হয়ে আছে নিশ্চিত ভাবে উত্তেজনার চাপে। ‘কেউ জানবেটা কি ভাবে যে আমরা আজ রাতে এখানে আসবো?’

সেড্রিক হাসলো এবং এগিয়ে গেল সামনের ভারি বন্ধ দরজাটার দিকে। “তোমরা কিভাবে এটা পেরিয়ে ওপাশে যাবে?”

জেমস নিজের মুখ মণ্ডলে একটা তাপের অনুভুতি পেলো হতাসাসূচক। ‘আমি এটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম,’ স্বীকার করলো। ‘ওটা কি তালা লাগানো?’

সেড্রিক মাথা ঝোঁকালো। “তবে ওটা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। এর জন্যইআমাকে এখানে আসতে হয়েছে। আমার অনুমান”ভূতটা এগিয়ে গেল সামনের দিকে এবং ঢুকে গেল দরজা ভেদ করে। একটু বাদেই তিন বন্ধু শুনতে পেল তালা খোলার শব্দ। দরজা খুলে গেল, হাসি মুখে সেড্রিক ওদের ভেতরে আসার জন্য ইশারা করলো। জেমস ঢুকল সবার আগে, তারপর জ্যান এবং শেষে র‍্যালফ বিরাট ডেস্কটায় ধাক্কা খেয়ে পিছিয়ে এল।ঘরে আবছা লালছে আলো ছড়িয়ে আছে ফায়ারপ্লেসের কারনে। জেমস নিজের জাদুদন্ডের আলোটা জ্বালিয়ে উঁচু করে ধরলো।

‘ওই জিনিসটা আমার চোখের সমানে থেকে সরাও পটার,’ একটা কন্ঠস্বর বলে উঠল। ‘তোমার জন্য বাকিদের ঘুম ভেঙে যাবে। কারণ এখন যেটা হবে সেটা অত্যন্ত ব্যক্তিগত কিছু কথাবার্তা।’

জেমস জাদুদন্ডটা নিচু করলো এবং অন্যান্য পোরট্রেটগুলোর দিকে তাকালো। সকলেই ঘুমাচ্ছেন বিভিন্ন রকম ভঙ্গিমায়, সঙ্গেই শোনা যাচ্ছে নাক ডাকার শব্দ। ‘হুঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন,’ জেমস সম্মতির স্বরে বলল। ‘সরি।’

‘তাহলে তুমি সত্যিকে আঁচ করেই ফেলেছো, দেখতেই পাচ্ছি,’ সেভেরাস স্নেপ বললেন নিজের পোরট্রেট থেকে, কালো চোখের দৃষ্টি জেমসের ওপর নিবদ্ধ করে। ‘ এবার বলো আমাকে তুমি কি জানো আর কি বিশ্বাস করো।’

জেমস স্বীকার করলো, ‘খুব বেশি কিছু আঁচ করতে পারিনি বা করতে হয়নি।’ র‍্যালফের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ওই সব অনুমান করেছে। ওই আপাতত বইটার মালিক।’

স্নেপ চোখ টিপলেন। ‘ওই গোলমেলে বইটা সবসময়েই গণ্ডগোলই বেশি পাকিয়েছে ভালো করার থেকে। যখন সুযোগ পেয়েছিলাম তখনই আমার ওটা নষ্ট করে দেওয়া উচিত ছিল। যাকগে বলে যাও।’

জেমস একটা গভীর শ্বাস নিলো। ‘পেইন্টিংগুলো থেকে কোন না কোন চরিত্রের রোজ আমার দিকে লক্ষ্য রাখা দেখেই আমি আঁচ করেছিলাম কিছু একটা হচ্ছে। তার চেয়েও বড় কথা আমার সবাইকেই মোটামুটি একই টাইপের দেখতে লাগছিল, যদিও সকলেই আলাদা। আমি জানি না আমি এগুলোর সূত্র এক করতে পারতাম কিনা, যদির‍্যালফ আমাকে বইয়ের আঁকাগুলোনা দেখাতো। আমি জানি ওই বইটা ছিল কোন এক স্লিদারিনের যাকে আমার ড্যাড অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। যে কারনে আমার আপনার কথা মাথায় এল, আর দুয়ে দুয়ে চার হয়ে গেল। আপনি সব পেইন্টিং এ ওই চরিত্রগুলোকে এঁকেছেন। সবগুলোই আসলে আপনার নিজের ছবি কিন্তু ছদ্মবেশে।এভাবেই আপনি আমাদের ওপর নজর রাখছিলেন।যেহেতু আপনি আসল আর্টিস্ট, চিরন্তন নিয়ম অনুসারে আর কারো ক্ষমতা নেই ওগুলোকে নষ্ট করার। আর এটাই আপনার পদ্ধতি যার দ্বারা মৃত্যুর পরেও আপনি সব কিছুর ওপর নজর রাখার ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছেন।’

স্নেপ কঠোর চোখে জেমস কে দেখে যাচ্ছিলেন। অবশেষে একটু মাথা ঝোঁকালেন। ‘একদম ঠিক বলেছো পটার। খুব অল্পজন জানে এটা। কিন্তু আমি জানি এই কাজটা করার বিশেষ কিছু স্বাভাবিক নিয়ম। রঙের সঙ্গে কিছু জাদু তরল মিশিয়ে ছবি আঁকাটাতো সাধারণ একটা ব্যাপার। এটা করতে গিয়ে আমাকে নিজেকে নিয়ে যেতে হয়েছে দক্ষতার চরমে। তবে এটাও ঠিক যে অন্য সব কলাশিল্পর মতই পেইন্টিংএ দক্ষতা লাভ করতে হলে প্রচুর অভ্যাস আর স্টাডি করতে হয়। আমি তোমার সঙ্গে একমত, আমার এক ভুলের জন্যই তুমি এই যোগ সূত্রটা ধরতে পেরেছো। আর সেই মারাত্মক ভুলটা হল ওই বইটাকে আজও এই জগতে থাকতে দেওয়া। আমি হয়তো একজন জিনিয়াস, কিন্তু গর্ব হল সেই জিনিস যা আমার থেকে বড় বড় জিনিয়াসদের পতনের কারণ হয়েছে। তবে যাই হোক এটা বলতেই পারি এই প্রচেষ্টাটা দারুণ ভাবে সফল হয়েছে। এর সাহায্যে আমি তোমাকে এবং এই স্কুলের সমস্ত গতিবিধি অতি সহজেই নিজের নখ দর্পণে রাখতে পেরেছি। এবাপ্নলো, কেন তুমি এই রকম সময়ে আমার কাছে এসেছো? নিজের ভাগ্যকে যাচাই করে দেখার জন্য?’

‘না,’ জেমস বলল জোরের সঙ্গে, তারপর চুপ করে থাকল। ও সেটা বলতে চাইছেনা যেটা বলার জন্য ও এখানে এসেছে। ভয় পাচ্ছে স্নেপ হয়তো হাসবেন বা তার থেকেও খারাপ ব্যাপার ওদের প্রস্তাবকে তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেবেন। ‘ আমরা এসেছি… আমরা এসেছি আপনার কাছে সাহায্যের আশায়।’

স্নেপের মুখের ভাব একটুও বদলালো না, অতি মনোযোগ সহকারে উনি জেমসের দিকে বেশ খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। ‘তুমি আমার কাছে এসেছো সাহায্য পাওয়ার জন্য, ‘উনি এমন টোনে কথাটা বললেন তাতে বোঝা গেল উনি নিশ্চিত হতে চাইছে ঠিক শুনলেন কিনা এ বিষয়ে। জেমস মাথা ঝোঁকালো। স্নেপ চোখ কুঁচকে বললেন, ‘জেমস পটার, আমি এটা আশাই করিনি, কিন্তু আমি খুশী হয়েছি। তোমার বাবার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল যারা ওর থেকে বেশী জানে তাদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার ব্যাপারে। ও সব সময় ওদের সাহায্য নিয়েছে একেবারে শেষ মুহূর্তে। তোমার মধ্যে এই ব্যাপারটা না থাকাই ভালো। যদি কয়েক সপ্তাহ আগে এটা অনুভব করতে পারতে তাহলে হয়তো কেবল মাত্র ভাগ্যের সহায়তা পাওয়ার আশা নিয়ে তোমাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে হত না।’

জেমস আবার মাথা ঝুঁকিয়ে কথাটা মেনে নেওয়ার ভঙ্গী করলো। ‘হ্যাঁ, আর সেটার জন্য ধন্যবাদ। আমি বুঝতে পেরেছি ওটা আপনিই ছিলেন যিনি সেড্রিককে পাঠিয়েছিলেন আমাকে সাহায্যের জন্য। যেদিন আমি জ্যাক্সনের ব্রিফকেসটা খুলেছিলাম।’

‘বোকার হদ্দ এবং তস্য বোকা তুমি পটার। তোমার আর ভালোভাবে সব জানা দরকার ছিল, আমি স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি আমি সত্যি অবাক হবো যদি বলো যে তুমি সব কিছু জানতে। ওই পোশাকটা সাংঘাতিক রকমের বিপজ্জনক বস্তু আর তুমি গাধার মতো সেটাকে যেমন তেমন করে রেখে দিয়েছো। আমার বিবেচনা মতে বলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওটাকে তোমার বাবার হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করো।’

জেমস ভ ৎসণা সূচক কথাগুলো গায়ে না মেখে উত্তেজনার সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি বলুন মারলিন ষড়যন্ত্র বিষয়ে আপনি কি জানেন?’

‘আমি তোমার চেয়ে সামান্য বেশি জানি, দুর্ভাগ্যবশত। সেটাও জানতে পেরেছি ওই লিজেন্ড বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করে। জানি সেই সব প্রচেষ্টাগুলোর কথা যেখানে একের পর ব্যর্থতার জন্ম হয়েছেমারলিনাস অ্যাম্ব্রশিয়াসকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে। আমি নিশ্চিত পড়াশোনা করে যা জেনেছি তা তা অনেক বেশী কাজে লাগবে তোমার ওই হঠকারী ভাবে মারলিনের জাদুলাঠি হাতানোর ভাবনার চেয়ে।’

জ্যান একধাপ এগিয়ে এসে বলল, ‘হঠকারী বলছেন কেন?’

‘আহ হা এই যে বিদুষক মহাশয় এবার কথা বললেন,’ স্নেপ নাক সিটকানোর ভঙ্গীতে বললেন। ‘কারণ,মিঃ ওয়াকার আমি তাইই মনে করি।’

জেমস জ্যানের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘প্রশ্নটা একদম ঠিক করেছিস। জাদুলাঠিটা সম্ভবত আর বেশি বিপদজনক পোশাকটার তুলনায়। আর সেটাকে আমরা কখনোই সেই সমস্ত মানুষের হাতে ছেড়ে রেখে দিতে পারিনা যারা মনে করে ভল্ডেমরট একজন ভালো এবং বন্ধুত্বকামী মানুষ ছিলেন।’

স্নেপ তরল সুরে জানতে চাইলেন, ‘আর সেই মানুষগুলো কারা সেটা একবার শুনি পটার?’

‘ওদের মধ্যে একজন টাবিথা করসিকা।’

স্নেপ আবার জেমসকে ভৎসনার সুরে বল লেন, ‘টিপিক্যাল গ্রিফিন্ডোর মানসিকতা।’

‘টিপিক্যাল মানসিকতা!’ জেমস ঝাঁজিয়ে উঠল। ‘কোন হাউস মনে করে যে সমস্ত মাগল-জাত উইজার্ডরা শুদ্ধ রক্তের উইজার্ডদের তুলনায় নিম্নমানের? “মাডব্লাড” কোন হাউসের সৃষ্টি করা শব্দ?’

স্নেপ ক্রোধের সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘ওই শব্দটা আমার সামনে খবরদার আর কখনো উচ্চারন করবে না। তুমি হয়তো ভাবছো তুমি সেই সবই বলছো যা তুমি জানো। কিন্তু আমি তোমার অজ্ঞতা বিষয়ে সচেতন করে দেওয়ার জন্য বলছি তুমি যা জানো তাই সব নয়। তোমার জানাটা একপেশে। যে কোন এক জনের বিষয়ে কেবল মাত্র হাউসের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়াটা তোমার বাবার আর একটা বড় ধরনের ভুল। আমি আশা রাখছি তুমি এই বিষয়টাকেও জয় করবে তোমার বুদ্ধিমত নিজের বন্ধু খুঁজে নিয়ে।’ স্নেপের কালো চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ হল র‍্যালফের ওপর, যে চুপচাপ সব শুনে যাচ্ছে।

‘তারমানে র‍্যালফ একেবারে আলাদা রকম, তাই তো?’ জেমস ক্ষীণ স্বরে প্রশ্ন করলো।

স্নেপ দ্রুত উত্তর দিলেন, চোখ র‍্যালফের ওপর থেকে না সরিয়েই। ‘তাই নাকি? আলাদা কিসের ভিত্তিতে, মিঃ পটার? তুমি মিঃ ডিডলের পরিবার বিষয়ে কি জানো? বা আরও ভালো করে বললে মিঃ ডিডল সম্বন্ধে কতটা জানো?’

‘আমি সেটাই জানি যা গাছের আত্মা আমাদের বলেছে,’ জেমস যথেষ্টই রাগ মেশানো স্বরে বলল। ‘আমি জানি কোন একজন এই স্কুল চত্বরেই আছে যার মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে ভল্ডেমরটের রক্তধারা। ওই শয়তানের রক্ত এখন অন্য কারো হৃদপিণ্ড মাধ্যমে চালিত হচ্ছে নতুন শরীরে। ভল্ডেমরটের উত্তরাধিকারী বেঁচে আছে এবং হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে আমাদের মধ্যে।’

‘আর তুমি এতটা নিশ্চিত হচ্ছো কি করে,’ স্নেপ প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, ‘যে সেইজন একজন স্লিদারিন বা একজন পুরুষ?’

জেমস উত্তর দেওয়ার জন্য মুখ খুলেও বন্ধ করে দিল। বুঝতে পারলো ড্রায়াড বিস্তারিত ভাবে কিছুই বলেনি। ‘ইয়ে, মানে, এটাতেই …একটা যুক্তি আছে তাই।’

 স্নেপ মাথা নেড়ে, তীক্ষ্ণভাবে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে তাকানোর ভাব মুখে ফিরিয়ে এনে বললেন, ‘তাই বুঝি? তাহলে বলতেই হয় তুমি আজ অবধি কোনও পড়াশোনাই করনি।’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, বোঝা গেল উনি যথেষ্টই হতাশ। ‘তুমি কি জিজ্ঞেস করতে এসেছো পটার? আমি বুঝতে পারছি আমি কি বলবো তার চেয়ে তুমি যেটা ভেবে রেখেছো সেটাকেই সারসত্য ধরে নিচ্ছ। তাই আগে তোমার ব্যাপারটাই মেটানো যাক।’

প্রাক্তন হেডমাস্টারের পোরট্রেটের সামনে এই মুহূর্তে জেমসের নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিলো। জ্যান আর র‍্যালফ বেশ খানিকটা পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। আর জেমস ভালোমতই জানে এটা একেবারে ওর নিজের প্রশ্ন যা ও করতে এসেছে। এটা ওদের তুলনায় অনেক বেশি করে ওর নিজের লড়াই। মারলিনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ওর যুদ্ধ। তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল এ লড়াই ওর নিজের সঙ্গে নিজের এবং ওর বাবার ছত্রচ্ছায়া থেকে বেরিয়ে আসার।

চোখ তুলে তাকালো স্নেপের কালো মনি সমৃদ্ধ চোখ দুটোর দিকে। ‘যদি আমরা মারলিনের জাদু লাঠি হাতাতে পারি তবে আমাদের যেতে হবে হল অফ এল্ডারস ক্রসিং এ। ওদের থামাতে ওখানে যাওয়া দরকার। তা না হলে ওরা চিরকালের মতো সিংহাসন এবং জাদুলাঠি লুকিয়ে রেখে দেবে।’

জেমস পেছন দিকে জ্যান আর র‍্যালফের নড়াচড়ার আওয়াজ পেলো। ঘুরে ওদের দিকে তাকালো। ‘আমি তোদের দুজন কে আমার সঙ্গে যাওয়ার জন্য ডাকছি না। কিন্তু আমি এ ব্যাপারে স্থির নিশ্চিত। আমাকে ওখানে যেতেই হবে ওদের থামানোর জন্য।’

স্নেপ আবার একটা বড়মাপের দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ‘পটার, তুমি সত্যিই একটা বোকাহাঁদা এবং সেই চিরকালীন আত্মগর্বী ঠিক তোমার বাবার মতই। পোশাকটা ফিরিয়ে দাও। দিয়ে দাও তোমার বাবাকে অথবা হেডমিস্ট্রেসকে। তারা ভালো করেই জানেন কি করতে হবে নাহবে। আমি ওদের যা বলার বলে দেব। তুমি মোটেই একা একা এই কাজটা করতে পারবে না। আমি একবার তোমার আচরনে খুশী হয়েছি। আর একবার সেই কাজ করে আমাকে আর খুশী হওয়ার এবং সাধুবাদ পাওয়ার চেষ্টা করো।’

‘না,’ জেমস বলল দৃঢ় ভাবে। ‘আমি যদি ওদের বলি, জ্যাক্সন এবং ডেলাক্রয়, সঙ্গেসঙ্গেই আর যারা আছে সব পালিয়ে যাবে। আপনি চাইছেন এটাইআমি এটা করি। তাহলে তো দুটো রেলিক চিরতরে হারিয়ে যাবে।’

‘তিনটে রেলিক একত্র না হলে, ওটা কোন কাজই করবে না।’

‘কাজ না করুক ধ্বংস ও তো হচ্ছে না,’ জেমস বোঝাতে চাইল। ‘ ওগুলো যেমন শক্তিশালী তেমনই রয়ে যাবে। আমরা চাই না যারা ভল্ডেমরটের চিন্তাধারা এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় তারা ওগুলো ব্যবহার করুক।চাই না ওগুলো ভল্ডেমরটের উত্তরাধিকারীর হাতে চলে যাক।’

স্নেপ খেঁকিয়ে বললেন, ‘যদি সেরকম কেউ থাকে তবেই তো।’

জেমস উত্তরে বলল, ‘থাক বা না থাক রিস্কটা নেওয়া যাবে না। হল অফ এল্ডারস ক্রসিং কোথায়?’

স্নেপ পাত্তা না দেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, ‘পটার তুমি জানোই না তুমি কি জানতে চাইছো?’

জ্যান আবার সামনের দিকে এগিয়ে এসে বলল, ‘জেমস, ওটা আমরাই যে ভাবে হোক ঠিক খুঁজে বার করে নেবো। একটা আদ্যিকালের পেইন্টিং এর কাছ থেকে ওটা জানার চেষ্টা করার দরকার নেই। আজ অবধি তো সব কাজ আমরা একা একাই করেছি। এটাও ঠিক বার করে ফেলবো।’

স্নেপ গর্জন করে বলকলেন, ‘তোমরা নিজেদের ভাগ্য আর আমার কিছু কিছু নাক গলানোর কারনে এখনও পর্যন্ত টিঁকে আছো। নিজের অবস্থানটা ভুলে যেও না ছোকরা।’

‘একদম ঠিক,’ র‍্যালফ বলল। জেমস আর জ্যান অবাক হয়ে তাকাল ওকে কথা বলতে শুনে। র‍্যালফ ঢোঁক গিলে আবার বলা শুরু করলো, ‘আমরা এখনও অবধি যথেষ্ট ভাল কাজই করেছি। আমি ঠিকঠাক জানি না আপনি ঠিক কে, মিঃ স্নেপ। সঙ্গেসঙ্গেই কৃতজ্ঞ আপনার প্রতি আপনি জেমসের জন্য যা করেছেন ও ওই জাদুপোশাকটা পড়ার পর। কিন্তু আমার মনে হয় জেমস যা বলছে সেটাই ঠিক। আমাদের উচিত ওদের থামানোর চেষ্টা করা এবং বাকি রেলিকগুলো নিজেদের দখলে আনা। আপনি একজন স্লিদারিন , আর আপনি নিজেই বললেন স্লিদারিনদের বিষয়ে যা যা বলা হয় সব সঠিক নয়। সেই কথা সুত্রেই বলি, স্লিদারিনদের সম্বন্ধে আর একটা বলা হয়ে থাকে যে আমরা কেবল মাত্র নিজেদের কথাই ভাবি। আমি চাই না সেটা সত্যি বলে প্রমানিত হোক। আমি আছি জেমস আর জ্যানের সঙ্গে, তা সফল হই বা না হই। ওতে কিছু যায় আসবে না।’

স্নেপ চোখের পলক না ফেলে গম্ভীর মুখে র‍্যালফের ঝটিকা বক্তব্য শুনলেন। শেষ হওয়ার পর একএক করে তিন বন্ধুকে দেখলেন, তারপর আবার একটা বড় নিঃশ্বাস ফেললেন। ‘তোমরা প্রত্যেকেই এক একটা নিরেট মাথার অধিকারী। যা করতে চলেছো সেটা যুক্তিহীন এবং ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনার জগতে বিচরণের সামিল।’

জেমস আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘হল অফ এল্ডারস ক্রসিংটা কোথায়?’

স্নেপ বেশ খানিকক্ষন মাথা নাড়লেন পুনরায় প্রশ্নটা শুনে।‘পটার আমি একবার বলেছি কিন্তু তুমি জানোইনা তুমি কি জানতে চাইছো।’

জ্যান বলল, ‘কি জানে না?’

‘হল ওর এল্ডারস ক্রসিং  কোনও জায়গা নয়, মিঃ ওয়াকার। আর এটা সবার আগে বোঝা দরকার তোমাদের। গত কয়েকমাস ধরে যদি আর একটু মনোযোগ দিতে তাহলেই এটা বুঝতে পারতে। হল অফ এল্ডারস ক্রসিং একটা বিশেষ ঘটনা বা ইভেন্ট বলতে পারো। মিঃ ওয়াকার একটু ভেবে দ্যাখো। এল্ডারস ক্রসিং।’

জ্যানের চোখ চকচক করে উঠল। ‘এল্ডারস,’ চিন্তা মগ্ন ভাবে বলল। ‘আরে তাইতো। মধ্য যুগের অ্যাস্ট্রনমাররা অ্যাস্ট্রলজিক্যাল চিহ্নগুলোকে এই নামেই ডাকতো। মানে গ্রহাদি। ওরা ওদের বলতো “দ্য এল্ডারস ওয়ান”।’

এবারে জেমস ব্যাপারটা অনুধাবন করে বিস্ফারিত চোখে বলে উঠল, ‘তার মানে হল অফ দ্য এল্ডারস ক্রসিং … গ্রহদের একত্র সমাবেশ! হল অফ এল্ডারস ক্রসিং হল সেই সময় যখন গ্রহগুলো একে অপরের পথ আড়াআড়ি ভাবে ক্রস করে। অর্থাৎ যখন … নির্মাণ হয় একটা সমন্বয়!’

র‍্যালফ ও সম্মতির স্বরে বলে উঠল, ‘গ্রহদের একত্র সমাবেশ। যার একটাই মানে এটা কোন স্থান নয়, বরং একটা সময়।’

স্নেপ তার চিরন্তন তাকানোর ভঙ্গীতে দেখলেন তিন বন্ধুকে। ‘দুটোই। সেই সময় যখন গ্রহদের একত্র সমাবেশ হবে এবং সেই স্থান যেখানে মারলিনাস অ্যাম্ব্রসিয়াসের তিনটি রেলিক একত্র হবে। আর সেটাই হবে প্রকৃত সেই জায়গা এবং সময়যেখানে মারলিনের প্রত্যাবর্তন ঘটবে। এটাই ওঁর চাহিদা। আর আমি যদি খুব একটা ভুল না করি, তোমরা যদি ওই যুক্তিহীন পরিকল্পনার পথেই হাঁটতে চাও তাহলে আর একটা গোটা সপ্তাহও তোমাদের হাতে নেই।’

জ্যান আঙ্গুলে তুড়ি মেরে বলল, ‘এই জন্যই ভুডু কুইন আমাদের সবাইকে নির্দিষ্ট সময়টাকে বার করার কাজটা বার বার করাচ্ছিলেন! উনি এটাও বলেছেন যে ওটা হবে এমন একটা রাত যা আমরা কোনও দিন ভুলতে পারবো না, আর সেটা মোটেও মিথ্যে বলেননি তাহলে! অর্থাৎ ওই সময়টাতেই ওরা রেলিকগুলো একত্র করবেন।’

জেমস ফিসফিস করে বলল, ‘লুকানো দ্বীপ। ওরা কাজটা ওখানেই করবেন। সিংহাসনটাতো ওখানেই রাখা আছে।’বাকি দুই বন্ধু মাথা নেড়ে সায় দিল। জেমস একই সঙ্গে আতঙ্ক এবং উত্তেজনায় ফুটতে থাকল। সেভেরাস স্নেপের পোরট্রেটের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘অনেক ধন্যবাদ।’

‘আমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে আমার উপদেশটা মেনে নাও। যদি তুমি ওই পরিকল্পনা অনুসারে চলতে চাও আমি কোন ভাবেই তোমাদের সাহায্য করতে পারবো না। কেউই পারবে না। দয়া করে জোর জবরদস্তি বোকামোর পথ বেছে নিও না।’

জেমস পেছন ঘুরলো, জাদু দন্ডের আলোটা নিভিয়ে ঢুকিয়ে নিলো পকেটে। ‘জ্যান, র‍্যালফ। চল এবার ফেরা যাক।’

স্নেপ দেখলেন জেমস মরাউডার ম্যাপটা দেখছে। এই ম্যাপটার সঙ্গে স্নেপের আগে থেকেই পরিচয় আছে। একবার এই ম্যাপটার জন্য তাকে অপমানিত হতেও হয়েছিল। ফিলচ এখনও নিজের অফিসেই আছে এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে তিন বন্ধু পুনরায় ঢুকে পড়লো অদৃশ্য হওয়ার পোশাকের তলায় এবং বেরিয়ে গেল হেডমিস্ট্রেসের অফিস থেকে। চললো হলের পথে। স্নেপের মনে হল ফিলচকে জাগিয়ে দেয়, যে এখন হাফ বোতল ফায়ার হুইস্কি খেয়ে নিজের ডেস্কে বসে বসে ঘুমাচ্ছে। স্নেপের একটা সেলফ পোরট্রেট ফিলচের অফিসঘরের শিকারের দৃশ্যের ভেতর আঁকা আছে। চাইলেই স্নেপ ওই পেইন্টিংএ উপস্থিত হয়ে ফিলচকে জাগিয়ে জানিয়ে দিতে পারেন তিন বন্ধুর রাত্রিকালীন এই অভিযানের কথা। কিন্তু না উনি সেটা করলেন না। পছন্দ হোক বা না হোক, এই ধরনের খুচরো বিষয়গুলো ওকে আর মজা দেয় না। সেড্রিক ডিগরির ভূত, যাকে সবার আগে স্নেপ চিনতে পেরেছিলেন, জেমসরা চলে যাওয়ার পর দরজা ঠেলে দিয়ে তালা লাগিয়ে দিল।

‘থ্যাঙ্ক ইউ মিঃ ডিগরি,’ স্নেপ নিচু স্বরে বললেন, অন্যান্য ঘুমন্ত মানুষদের নাকডাকার শব্দের মধ্যেই। ‘ইচ্ছে হলে ওদের ডরমেটরিতে ফিরে যাওয়ার পথটায় ওদের সঙ্গে যেতে পারো। নাও যেতে পারো। আমি আর ভাবতে চাই না।’

সেড্রিক মাথা ঝুঁকিয়ে স্নেপকে সম্মান জানালেন। স্নেপ জানে এই ভূতটা ওর সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করে না। একটা ভূত একটা ছবির সঙ্গে কথা বলছে এটা বোধ হয় ছোকরার পছন্দ নয়। যদিও ওরা দুজনেই কেউ মানুষ নয়। তালা লাগানো দরজা ভেদ করে সেড্রিক বেরিয়ে গেল।

স্নেপের কাছের একটা পেইন্টিংএ নাকডাকা থামলো।

একজন চিন্তাগ্রস্থ বয়স্ক মানুষের গলা শোনা গেল, ‘এই ছেলেটা পুরোপুরি ঠিক ওর বাবার মত নয়, কি বলো?’

স্নেপ নিজের পোরট্রেটের অবস্থানে ফিরলেন। ‘একটা দিক থেকেই ও ওর বাবার মতো। ও একজন পটার।’

একটু দুষ্টুমির ভঙ্গিতে অন্যকন্ঠটি বলল, ‘এবার কে অতি সাধারণ মানের একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে শুনি?’

‘এটা মোটেই সাধারণ মানের সিদ্ধান্ত নয়। আমি ওকে প্রথম থেকে লক্ষ্য করে আসছি। অতি উদ্ধত এবং বোকা একটা ছেলে। ঠিক যেমনটা ছিল ওই নামের পদবীধারীরা। মোটেই এই ভান করবেন না যে আপনি সেটা বুঝতে পারছেন না।’

‘আমি কিন্তু দেখলাম ও তোমার সাহায্য নিতে এসেছিল।’

স্নেপ কিছুটা রাগতভাবেই সম্মতি জানালো। ‘এখন এটাই আশা করা যেতে পারে কেবলমাত্র এই ভাবনাটা একটা সঠিকঅভ্যাসে যেন পরিণত হয়।সাহায্য নিতে এসেছিল কারণ ওর সামনে আর কোন পথ খোলা ছিল না। আর এটা আপনি নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেনও কিন্তু আমার একটাও উপদেশ কানে নিলো না।’

বয়স্ক কন্ঠটি একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘তুমি কি ব্যাপারটা মিনারভাকে বলবে?’

‘সম্ভবত,’ স্নেপ বললেন একটু ভাবতে ভাবতে, ‘সম্ভবত না। আপাতত আমি সেটাই করবো যা আমি করে এসেছি। আমি লক্ষ্য রেখে যাবো।’

‘তার মানে তুমি আশা করো যে ওরা তিন বন্ধু সফল হলেও হতে পারে?’

স্নেপ কোন উত্তর দিলেন না। মিনিট খানেক বাদে বয়ষ্ক কন্ঠ আবার শোনা গেল। ‘ওকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর সেটা ও জানে না।’

স্নেপ মাথা ঝোঁকালেন। ‘আমার মনে হয় না ওকে সেটা বলে কিছু লাভ হবে।’

‘সম্ভবত তুমি ঠিকই বলছো সেভেরাস। এসব ব্যাপারে অনুমান করার তোমার সহজাত একটা ক্ষমতা আছে।’

স্নেপ দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, ‘মাস্টার অ্যালবাস , আমি কখন কথা বলতে হয় না এটা ভালো করে শিখেছি।’

‘অবশ্যই তুমি শিখেছো সেভেরাস। অবশ্যই শিখেছো।’

 

 

[চলবে]

লেখক পরিচিতিঃ  জর্জ নরম্যান লিপার্ট আমেরিকান লেখক এবং কম্পিউটার অ্যানিমেটর। তবে ওনার বর্তমান পরিচয় উনি জেমস পটার সিরিজের লেখক। যে কারনে ওনাকে “আমেরিকান রাউলিং” নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এই সিরিজের প্রথম লেখা “জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং” প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে। নানান কারনে এটি অনেক বিতর্কে জড়িয়ে যায়। সেসব সমস্যা পেরিয়ে আজ এটি পাঠক পাঠিকাদের চাহিদায় সারা বিশ্বে যথেষ্ট জনপ্রিয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই সিরিজের সব কটি বই ই-বুক এবং ফ্রি হিসাবেই প্রকাশ করেছেন মাননীয় জর্জ নরম্যান লিপারট। এই সিরিজ ছাড়াও ওনার আরো ১২ টি বই আছে। বর্তমানে উনি এরি, পেনসিল্ভ্যানিয়ার বাসিন্দা।

অনুবাদকের পরিচিতিঃ উপন্যাসটির অনুবাদক প্রতিম দাস মূলত চিত্র শিল্পী, ২০১৩ সাল থেকে ভারতের সমস্ত পাখি আঁকার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছেন। ৭৭৫+ প্রজাতির ছবি আঁকা সম্পূর্ণ হয়েছে। তবে শুধু পাখি নয় অন্যান্য বিষয়েও ছবি আঁকা চলে একইসঙ্গে। দারুণ রকমের পাঠক, যা পান তাই পড়েন ধরনের। প্রিয় বিষয় রূপকথা, ফ্যান্টাসী, সায়েন্স ফিকশন, অলৌকিক। টুকটাক গল্প লেখার সঙ্গে আছে অনুবাদের শখ। 

Tags: জর্জ নরম্যান লিপারট, জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং, ধারাবাহিক উপন্যাস, প্রতিম দাস, সুদীপ দেব

One thought on “জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং – পার্ট ১৪

  • Part – 14 :Hall of elders crossing,, awesome turning point,,
    i just can’t wait for the next part,,
    thanks to Kalpabishwa,,

    Reply

Leave a Reply

Connect with

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!
Verified by MonsterInsights