Sunday, March 17, 2024
ধারাবাহিক উপন্যাস

জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং – পার্ট ১৫

লেখক: জি নরম্যান লিপার্ট, ভাষান্তরঃ প্রতিম দাস

শিল্পী: মূল প্রচ্ছদ, সুদীপ দেব

পঞ্চদশ অধ্যায়

মাগল স্পাই

মার্টিন জে প্রেস্কট একজন রিপোর্টার। উনি সবসময়ে সেই শব্দগুলোর কথা ভাবেন যার কিছুটা হলেও গুরুত্ব আছে। মার্টিনের কাছে রিপোর্টার ব্যাপারটা একটা কাজের চেয়েও বেশী কিছু। ওটা তার পরিচয়। কেবলমাত্র একটা প্রতিবেদকের নাম বা একটা ছবি হয়ে থাকাটা তার অপছন্দের ব্যাপার। চব্বিশ ইন্টু সাত এর দৌড়াতে থাকা জগতে এরকম মানুষদের প্রযোজকরা বলে থাকেন “একজন পারসোনালিটি”। উনি খবরকে শব্দে পরিণত করতে পারেন। সেটাকে বাঁধুনি দিতে পারেন। রং মাখাতে পারেন। না, সেটা কোন নেতিবাচক অর্থে নয় বা নিজের বিশ্বাসের রঙ লাগাতে উনি ভালবাসেন না। কেবলমাত্র সেই কাজটাই করতে চান যাতে একটা খবর সত্যিকারের খবরে পরিণত হয়। বা অন্য ভাবে বললে উনি সেটাই করতে পারেন যেটা মানুষ পড়তে বা দেখতে চায়। আর একটা ব্যাপার আছে, মার্টিন জে প্রেস্কট এর নিজেকে উপস্থাপন করার পদ্ধতি। জিন্সের প্যান্টের সঙ্গে সব সময় সাদা জামা পড়েন। জামার হাতা সামান্য গোটানো থাকে। যদি কখনো টাই পড়েন তাতেও ছাপ থাকে তার কাজের। যা দেখে বোঝা যায় উনি আসলে বলতে চাইছেন – হ্যাঁ আমি কঠোর পরিশ্রম করি, একই সঙ্গে আমি আমার পাঠক দর্শকদের সম্মান জানিয়ে থাকি নির্দিষ্ট প্রফেশ্যনালিজমের মাত্রায়। মার্টিন রোগা প্রকৃতির, মুখচোখে তারুন্যের ভাব। আকর্ষণীয় চেহারা সঙ্গেই একমাথা সুন্দর কালো চুল যা সব সময় উলটপালট হয়ে থাকে। প্রেসক্লাবের ব্রেকফাস্টে ওকে খুব কমই দেখা যায়। সেটা নিয়ে ওর গর্বও আছে। কিন্তু যেদিন ওখানে আসেন সেদিন ওকে দেখে মনে হয়না উনি রিপোর্টার। সেটাই খবর এবং মানুষ সম্বন্ধে ওনার মনোভাব। উনি জানতেন কিভাবে একের সঙ্গে অপরকে জুড়ে দিতে হয় যাতে তারা একে অপরের সঙ্গে ইমোশোনালি একাত্ম হয়ে পড়ে।

     কিন্তু সব শেষ কথাটা হলো খবরকে ভালবাসাটাই মার্টিন জে প্রেস্কটকে রিপোর্টার বানিয়েছিল। যেখানে অন্য হাই-পেইড এবং হাই-প্রোফাইল নতুন এপথে আসা মানুষ দল বানিয়ে নিজে সব জায়গায় না গিয়ে বিভিন্ন ফুটেজ এবং ইন্টারভিউ এর ফিল্ম সংগ্রহ করে রেটিং বাড়ানোর দিকে নজর দেয়, সেখানে মার্টিন ভালবাসেন নিজে এখানে ওখানে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও গবেষনা করতে। সত্যি এটাই যে মার্টিন রিপোরটিং এর কাজটাকে উপভোগ করেন। তারচেয়েও বেশি সত্যি হলো উনি পছন্দ করেন খবরের পেছনে ধাওয়া করা। প্রেসের জগতের একজন সদস্য রুপে এই প্রাক্তন নিজেকে মনে করেন একজন শিকারী। যিনি শিকার করতে ভালবাসেন বন্দুকের বদলে ক্যামেরা দিয়ে। মার্টিন নিজের শিকারকে নিজে খেলাতে ভালবাসেন। হাতে ঝোলানো ক্যামেরাটা দিয়ে একটু চমকে দেওয়া ছবি নেওয়ার জন্য উনি চিৎকার করতে বা সময়োপযোগী প্রশ্ন ছুড়ে দেন। তারজন্য উনি পৌঁছে যেতে পারেন আদালতের পেছন দিকের দরজার কাছে বা কোনো রহস্যময় হোটেলের ঘরে। আর এসবই মার্টিন করতে ভালবাসেন একা একা। তার দর্শকদের একটা চিত্তাকর্ষক রোমাঞ্চকর উত্তেজনাময় দ্বন্দ্বের মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য। আর কেউ এতো ভালো ভাবে এই কাজ করতে পারতো না, আর এটাই ওকে বিখ্যাত করে দিয়েছিল।

     মার্টিনের আছে, যেমনটা ওরা বলে থাকেন, একটা নাক যে খবরের গন্ধ পায়। ওর সেই বিশেষ ইন্দ্রিয় ওকে বলে দিয়েছে ও যে খবরের পেছনে ধাওয়া করছে, সেটা যদি ঠিকঠাক পরিবেশন করা যায়, একেবারে যেমন আছে ঠিক তেমন, কোন রকম কাটাছেঁড়া না করেই, তাহলে এটাই হয়তো হয়ে যাবে জীবনের সেরা প্রাপ্তি, স্টোরি অফ এ লাইফটাইম। আর এখন, ঝোপঝাড় ঘাস পাতার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলতে চলতে, সারা গায়ে দুদিনের জমে থাকা ঘাম নোংরা, মাথার সুন্দর চুলগুলো জট পাকিয়ে গেছে, ওখানে লেগে আছে শুকনো গাছের পাতা ঘাস, হাতে এসেছে কেবল মাত্র অসফলতা। তবুও ওর মনে হচ্ছে এটাই  সেই স্টোরি যা ওর কেরিয়ারকে তুঙ্গে উঠিয়ে দেবে। সত্যি বলতে ও জানপ্রাণ লাগিয়ে দিয়েছে কাজটার পেছনে, নাওয়া খাওয়া ভুলে এটাকেই একমাত্র লক্ষ্য ভেবে নিয়েছে। এমন কি ভূতটার ঘটনার পরেও। এমনকি এক নাছোড়বান্দা বাচ্চা ছেলের ধাক্কা খেয়ে তিন তলা থেকে আছড়ে পড়ার পরেও হাল ছাড়েনি। একটা দানব আকৃতির মাকড়শা আর একটু হলে ওকে গিলে খেতো তবু খবরের পিছু ছাড়েনি। মার্টিন এই সব অসফলতাকে যথেষ্ট মূল্য দেন। বাধা যত বেশী, ধাওয়া করার মজাও তত বেশী। এই মুহূর্তে একটা গোপন হাসি ওর ভেতর নেচে বেড়াচ্ছে। কয়েক মাস আগে যে ইনভেস্টিগেটর দলটাকে সে ভাড়া করতে চেয়েছিল তারা কি এই কাজ করতে পারতো। তারা তো ওকে পাত্তাই দেয়নি। এক জাদুজগত যাকে সুরক্ষার এমন ঘেরাটোপে রাখা হয়েছে যে কেউ জানতেও পারবে না। এটা হল সেই গল্প যা কেবলমাত্র ওর পক্ষেই বলা সম্ভব। কথাটা ও নিজেকেই বললো, এটা একটা অভাবনীয় খোঁজ। আর ফিল্ড রিপোর্টের দরকার নেই। বিশেষ করে খোঁজার প্রয়োজন নেই। সব খবর ওর হাতের মুঠোয়। মার্টিন জে প্রেস্কট এই দেশের যে কোন গুরুত্বপূর্ণ নিউজ রুমে এটাকে হাতিয়ার করেই ঢুকে পড়তে পারে। কিন্তু ওখানে যাবে কেন? এরকম একটা খবর হাতের মুঠোয় রেখে তো ও এই পৃথিবীর যে কোন স্থানে যেতে পারে, তাই না?

     না, উত্তরটা নিজেই নিজেকে দিলো। এখন এধরণের ভাবনা ঠিক নয়। এখন একটা বিশেষ কাজ করতে হবে। একটা অতি কঠিন এবং বিরাট চাহিদাযুক্ত কাজ। তবে ওর মতে কাজের দুরূহ অংশটা ও ইতিমধ্যে সেরে ফেলেছে। কয়েকমাস ধরে নানা পরিকল্পনা এবং যোগাড়যন্ত্র করা, ছক কষা এবং পর্যবেক্ষণ করার পর সেই অন্তিমক্ষণ এসে গেছে বড় দাঁও মারার। সমস্ত বাজি জেতার জন্য তুরুপের টেক্কাটাকে দেখানোর। এটাও ঠিক, যদি এই শিকারের খেলার শেষ মুহূর্তে ওর প্ল্যান কাজ না করে ওকে খালি হাতেই ফিরতে হবে। ওর কাছে এই মুহূর্তে নেই সেরকম কোনো প্রমানযোগ্য ফুটেজ, ভিডিও ক্যমেরাতে তোলা এক মাস আগের সেই অবিশ্বাস্য উড়ন্ত খেলাটির দৃশ্যগুলো থাকলেও হয়ে যেত। সেটাই হয়তো যথেষ্ট প্রমাণ বলে বিবেচিত হতো, কিন্তু সেটাও নেই। রাক্ষুসে মাকড়সাটার থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ওটাকে বিসর্জন দিতে হয়েছে জঙ্গলে। সেই সব অসফলতার কথা ভেবে আর কোন লাভ নেই। না, ওতেও কাজ হবে।  যেমন প্ল্যান করেছে সেরকমই হয়েছে। হতেই হবে। ওর নাম যে মার্টিন জে প্রেস্কট।

     জঙ্গলের ভেতর পথ খুঁজতে খুঁজতে মার্টিন দেখলো তার সেলফোনে কানেকশন আছে কিনা। ওর কাজের জন্য প্রয়োজন সব কিছুই গণ্ডগোল করতে শুরু করেছিল এই জঙ্গলে ঢোকার পর থেকে। ওর পামটপটা কাজই করছিল না বলা যায়। কোনক্রমে চালু করা গেলেও অদ্ভুত সব আচরণ করছিল। গতরাতের আগের দিন ওটা চালু করে অফিসের কম্পিউটারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করতেই গোটা স্ক্রিন গোলাপি রঙের হয়ে গেল এবং দেখাতে শুরু করলো হেজহগদের বিষয়ে একটা বিচ্ছিরী গানের কিছু লাইন। সৌভাগ্যবশত ক্যামেরা আর সেলফোনটা ঠিকঠাক কাজ করছিল মাকড়শার ঘটনাটা না ঘটা অবধি। এখন কেবল মাত্র ওর ফোনটাই সঙ্গে আছে। আর সেটাতেও এখন হিয়েরোগ্লিফিক্স, বিস্ময়বোধক চিহ্ন আর কিছু নম্বরের আজব ব্যাপার স্যাপার দেখাচ্ছে। অবশ্য কানেকশনটা আছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। নিশ্চিন্ত হয়ে মার্টিন কথা বলতে শুরু করলেন।

     ‘এই মুহূর্তে আমি দুর্গটার কাছের এক জঙ্গলে হাতড়ে বেড়াচ্ছি। যে দুর্গ লুকিয়ে আছে জঙ্গলের এলাকাতেই। এই সেই জঙ্গল যেটা গত কয়েকমাস আমার সাময়িক বাসস্থান হয়েছিল। এখনো পর্যন্ত কোন রকম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না করে, আমি শুধু দেখেই চলেছি। যা দেখতে পাচ্ছি তাকে সাধারনভাবে দেখে মনে হবে একটা কাউন্ট্রি বা বোর্ডিং স্কুল। যদিও আমার সূত্র এবং অনুসন্ধান অন্য কথা বলছে। আর সেজন্যই আমার মনে হচ্ছে সময় এসে গেছে এ রহস্য ফাঁস করার। যদি আমার তথ্য ভুল হয়, আমি নিশ্চিত ভাবে দারুণ বিস্মিত হবো, নিজেকে হদ্দবোকা বলে মেনে নেবো। কিন্তু যদি কোন ভাবে আমার প্রাপ্ত তথ্য সত্যি বলে প্রমানিত হয়, যেটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশী, আমার নিজের অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতার নিরিখে, তাহলে আমি আমার নিজের ভাগ্যের চরমতম শিখরে পদার্পণ করবো। আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি। এখন দিনের বেশ খানিকটা সময় পার হয়েছে, ন’টা বাজে, আশে পাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। আমি আমার সুরক্ষিত লুকিয়ে থাকার জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি।  সামনের খোলা মাঠটায় প্রবেশ করতে যাচ্ছি।’

     জঙ্গলের কিনারায় অবস্থিত ভাঙ্গা চোরা কেবিনটা থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এলেন মার্টিন। সেই অস্পষ্ট ধরনের মানুষটা কাছে পিঠে কোথাও নেই, যে মাঝে মাঝেই এটার ভেতর ঢুকে পড়ে। মার্টিন সোজা হয়ে দাঁড়ালেন, মানসিকভাবে নিজেকে শক্ত করে নিলেন। শুরু করলেন চলা কেবিন থেকে দুর্গের দিকে সুন্দর করে ছাঁটা ঘাসের জমির ওপর দিয়ে। উনি মোটেই বিশ্বাস করেন না যে বিরাট রকমের কোন দুর্ভাগ্য ওর জন্য অপেক্ষা করে আছে। ওর নিজের অন্তরাত্মা জানান দিচ্ছে সাংঘাতিক রকমের সব বিপদ উনি পেছনের রহস্যময় অদ্ভুতুড়ে অরণ্যে ফেলে এসেছেন। যদিও জঙ্গলের একেবারে কিনারায় দুর্গ থেকে বেশ খানিকটা দূরেই উনি নিজের থাকার জায়গা বেছে নিয়েছিলেন। রাতের দিকে অদ্ভুত সব ভয় জাগানো শব্দ ভেসে এলেও গাছগুলো স্বাভাবিকই ছিল ওর মতে। স্বীকার করতেই হবে জঙ্গলের গভীরতম এলাকায় যাওয়া আসার অভিজ্ঞতায় বিচিত্র কিছু ঘটেই নি। কেবল মাত্র মাকড়শার ব্যাপারটা ছাড়া উনি কিছুই দেখতে পান নি, এর জন্য ওর দারুণ রকমের ভাগ্যকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া যেতে পারে। ওর অন্তর যদিও চেয়েছিল আর কিছু অভিজ্ঞতা হোক। দেখতে পাওয়া যাবে এমন দানবদের, যেমন মাকড়শাটা, যাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার মার্টিনের কাছে ততটা খারাপ নয় যতটা না দেখতে পাওয়া কোনো কল্পিত শক্তির শব্দ থেকে ভয় পাওয়াটা। আর এ রকম শব্দ মার্টিন শুনেছেন জঙ্গলে হেঁটে চলার সময়। ওর ওপর নজর রাখা হচ্ছে এটা উনি বুঝতে পারছিলেন। বিরাট কিছু, ওজনে বিশাল কিছু সব সময় ওর ডান দিকে বাম দিকে গাছেদের আড়ালে আড়ালে ওর সঙ্গে চলেছে এটা বুঝে ছিলেন। ওরা যারা ওর ওপর নজর রাখছিল তারা মোটেই মাকড়শার মতো বোকা কোনো জীব নয়, যথেষ্টই বুদ্ধিমান। ওরা হয়তো তেমন ভয়ানক নয় কিন্তু দারুণ কৌতূহলী। মার্টিন তো একবার ভেবে ছিলেন হাঁক মেরে ওদের সামনে এসে নিজেদের পরিচয় জানাতে বলবেন। তারপর মাকড়শার কথাটা ভেবে নিজেকে সংযত করেন। কারণ না জানি সে আবার কি দুর্বিপাক হয়ে দাঁড়ায় তার চেয়ে কৌতূহলী দানব অদেখাই থাক।

     ‘যে দুর্গটার কথা আমি বলেছি, সেটা বিশাল মাপের,’ মার্টিন কথাগুলো বললেন ছোট্ট মাইক্রোফোনটায় যা আটকানো আছে ওর কোটের কলারে। ওটার তার সংযুক্ত আছে ফোনটার সঙ্গে। ‘এই মহাদেশের অনেক অনেক জায়গায় আমি গিয়েছি দেখেছি অনেক অনেক দুর্গ। কিন্তু স্বীকার করতেই হবে এরকম বিশাল প্রাচীন এবং দারুণভাবে যত্নে রাখা দুর্গ আমি আগে দেখিনি। মাস কয়েক আগে আমি যে জানলাটা ভেঙ্গে বাইরে আছড়ে পড়ে ছিলাম সেটা ছিল অতি সুন্দর রঙিন কাঁচের। এখানকার দেওয়ালের পাথরে কোন ফাটলের দাগ দেখা যায় না…’ এটা পুরোপুরি সত্যি না হলেও অনেকটাই সত্যি। ‘এখন সৌভাগ্যক্রমে বসন্তের দিন। আকাশ পরিষ্কার এবং আবহাওয়া উষ্ণ। আমি নিজেকে লুকিয়ে রাখার কোনও চেষ্টা করছি না এবং এখন পৌঁছে গেছি বিরাট এক দরজার কাছে, আর সেটি উন্মুক্ত আমার সামনে। ওখানে…আমার ডানদিকের মাঠে একদল মানুষ দেখতে পাচ্ছি। আমি…আমি ঠিকঠাক বলতে পারছি না, কিন্তু মনে হচ্ছে ওরা যেন ফুটবল খেলছে। এটাও বলতে পারছিনা যে আমি এরকম কিছু আশা করেছিলাম। ওরা আমার দিকে তাকাল না পর্যন্ত। আমি দরজার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি।’

     মার্টিন দরজা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কারোর নজরে পড়লেন। কমে গেল হাঁটার গতি, যদিও এগিয়ে যেতে থাকলেন নার্ভাস না হয়ে। ওর একটাই লক্ষ্য যতটা সম্ভব ভেতরে ঢোকা। ইচ্ছে করেই নিজের স্টিল ফটো তোলার ক্যামেরাটা রেখে এসেছেন। ক্যামেরা সব সময়ে সব ক্ষেত্রে একটা সমস্যা পাকায়। ক্যামেরা সঙ্গে থাকলে মানুষ অনেক জায়গায় ঢুকতে বাধা পায়। ক্যামেরাবিহীন যে কোন মানুষ অতি সহজে যে কোন জায়গায় ঢুকে পড়তে পারে, আশে পাশের মানুষ  কৌতূহলের চোখে দেখলেও বেশীর ভাগ সময়েই বাধা দেয় না কোথাও ঢোকার ক্ষেত্রে। অন্তত, খুব বেশি বাড়াবাড়ি না করলে। চত্বরটায় অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা এদিক থেকে ওদিকে যাতায়াত করছে। সাদা জামা আর টাইয়ের ওপর বিশেষ রকম ক্লোক পড়ে আছে কালো রঙের। অনেকের সঙ্গেই ব্যাকপ্যাক আছে বা বই। একেবারে কাছের একজন ওর দিকে তাকিয়ে চলে গেল। মনে হল না কোন কৌতূহল আছে ওর চোখে।

     ‘এখানে যাদের…এখানে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের পৃথিবীর যে কোনো মানুষের চোখে তারা… স্কুলের ছাত্র ছাত্রী,’ মার্টিন তার মাইক্রোফোনে বললেন মৃদু স্বরে, আশপাশ দিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে। ‘অল্প বয়সী, সকলের পরণে একই রকম পোশাক, সবার স্কুলে পড়ার মতই বয়স। ওরা আমার উপস্থিতিতে অবাক হয়েছে নিশ্চিত, কিন্তু হাবভাবে তা প্রকাশ পাচ্ছেনা। এই মুহূর্তে আমি পৌঁছে গেছি আসল দুর্গে প্রবেশের মূল দরজায়, মনে হচ্ছে এবার মনে হচ্ছে আমার দিকে সকলের নজর পড়ছে। এক্সকিউজ মি।’

     শেষ কথাটা বলা হলো টেড লুপিনকে, যার এই মাত্র আবির্ভাব হলো দরজার মুখে নোয়া মেটজকার আব্র সাব্রিনা হিল্ডেগারডের সঙ্গে। তিনজনের কথাই থেমে গেল সাদা জামা আর ঢিলেটাই পড়া মানুষটাকে ওদের সামনে দিয়ে যেতে দেখে। সাব্রিনার চুলে গোঁজা পালকটা নড়ে উঠলো মানুষটার দিকে ঘুরে তাকাতেই।

     টেড বললো, ‘ও কার সঙ্গে কথা বলছে?’

     ‘তার চেয়ে বড় কথা ওই লোকটা কে?’ সাব্রিনা বললো। তিনজনেই এবার ঘুরে দেখতে পেলো লোকটা এগিয়ে যাচ্ছে সামনের প্রবেশ হল লক্ষ্য করে। শিক্ষার্থীরা সরে যাচ্ছে ওর সামনে থেকে, ওরা বুঝে গেছে এই লোকটা এই লোকটা এখানে অনাহুত। তা সত্বেও কারো ভেতর তেমন কোনো কৌতূহল দেখা যাচ্ছে না। কারো কারো মুখে ভেসে উঠেছে অবাক হওয়ার হাসি।

     মার্টিন মাইক্রোফোনে কথা বলা থামান নি। ‘আরো আরো ছাত্র ছাত্রী, এই মুহূর্তে অন্তত আমি সেটাই বলছি, দেখতে পাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমার পাশে অন্তত বারো চৌদ্দ জন। আমি হেঁটে যাচ্ছি প্রধান হল ঘরের মত কিছু একটার ভেতর দিয়ে। দেখতে পাচ্ছি চারদিকে …। ঝাড় লণ্ঠন, বড় বড় দরজা। অনেক স্ট্যাচু। পেইন্টিং। আর সেই পেইন্টিং … সেই পেইন্টিং… সেই পেইন্টিং গুলো …’ এই প্রথম মনে হচ্ছে মার্টিন শব্দ খুঁজে পাচ্ছেন না বলার মতো। ভুলে গেছেন শিক্ষার্থীরা ওর চার পাশে দাঁড়িয়ে ওকে দেখছে, উনি এগিয়ে গেলেন সমানের একটা পেইন্টিং এর দিকে। যেটাতে একদল বয়স্ক উইজার্ড একটা বিরাট ক্রিস্টাল বলের চারদিকে দাঁড়িয়ে আছে, ওদের সাদা দাড়িগুলো ঝকঝক করছে আলোতে। ওর মধ্যে একজন উইজার্ড দেখতে পেলেন সাদা জামা ও টাই পড়া একজন মানুষ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। উইজারডটি সোজা হয়ে দাঁড়ালেন এবং ক্রুদ্ধ গলায় বলে উঠলেন, ‘এই যে ইয়ংম্যান তুমি ইউনিফর্ম না পড়ে চলে এসেছো! তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি বিধ্বস্ত। একটা গাছের পাতা তোমার চুলে আটকে আছে। ’

     ‘সেই পেইন্টিং গুলো… এই সব পেইন্টিং …’ মার্টিনের গলার স্বর আগের চেয়ে একটু উচ্চমাত্রার। একবার গলা ঝেড়ে নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করলেন। ‘পেইন্টিংগুলোর ভেতরে যা আঁকা আছে সে গুলো সব নড়াচড়া করছে। ওগুলো… ঠিক ঠাক ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা, মনে হচ্ছে যেন আঁকা সিনেমা, কিন্তু জীবন্ত। ওরা আমাকে …উদ্দেশ্য করে কথাও বলছে।’

     ‘আমি আমার সমকক্ষদের সঙ্গে কথা বলি বুঝলে ছোকরা,’ উইজার্ডটি বললেন। ‘আমি তোমাদের মত হতচ্ছাড়া বদমাসদের আদেশ দিই।’

     জমায়েত হওয়া শিক্ষার্থীর দল হেসে উঠলো, একই সঙ্গে একটা অনিশ্চয়তা প্রকাশ পেলো। এই সব নড়াচড়া করতে থাকা পেইন্টিং দেখে এভাবে তো কেউ অবাক হয় না। হয় এই মানুষটা উইজার্ডদের জগতে একটা পাগল অথবা এই লোক … ধুর। তাই আবার হয় নাকি। একজন মাগল কখনোই হগ ওয়ারটসের ভেতরে ঢুকতে পারবে না। শিক্ষার্থীরা এবার একটা বড় বৃত্তর আকৃতি বানিয়ে পিছিয়ে গেল, যেন ওই মানুষটা কোনও ভয়ঙ্কর জন্তু।

     বিস্ফারিত চোখে চারদিক দেখতে দেখতে মার্টিন বললেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা আমাকে ঘিরে ধরেছে। আমাকে ওই গন্ডি পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, যেভাবেই হোক। আমাকে আরো ভেতরে যেতে হবে।’

     মার্টিন এগিয়ে যেতেই শিক্ষার্থীদের গন্ডি ভেঙে গেল অতি সহজেই এবং ওরা ওকে অনুসরন করলো। এবার একটা গুঞ্জন হচ্ছে ওদের ভেতর। অবাক হয়ে যাওয়া একদল ছাত্রছাত্রী মৃদু স্বরে বকরবকর করতে করতে মার্টিনের পিছু পিছু এগোতে থাকলো, আর ওদিকে চড়তে থাকলো মার্টিনের কন্ঠস্বর।

     ‘আমি একটা বিরাটরক্ষে প্রবেশ করেছি। বেশ উঁচু। আমি এখানে এসেছিলাম আগে, তখন রাত ছিল, অন্ধকারে। হ্যাঁ এই সেই জায়গা যেখানে আছে সঞ্চরণশীল সিঁড়িগুলো। যাদের বোঝা খুব কঠিন, এক দারুণ মানের যন্ত্র প্রযুক্তি এখানে কাজ করছে, আর সেই যন্ত্র চলার সময় কোনও শব্দও করে না।’

     জমায়েত হওয়া শিক্ষার্থীদের ভেতর থেকে কেউ একজন বললো, ‘লোকটা যন্ত্রপাতির ব্যাপারে কি বলছে? আরে এই লোকটা আসলে কে? ও এখানে করছেই বা কি?’ উত্তরে অনেকগুলো অবাক হয়ে যাওয়া কন্ঠের কলতান গুঞ্জরিত হলো।

     মার্টিন সমানের দিকে ঠেলে ঠুলে এগিয়ে গেলেন, সিঁড়িগুলোকে পাশ কাটিয়ে, সঙ্গেই প্রায় চিৎকার করে বললেন, ‘আমার উপস্থিতি মনে হচ্ছে এবার ওদের চমকে দিয়েছে। যে কোনও সময়ে আমাকে থামিয়ে দেওয়া হবে। আমি…আমি.. সিঁড়িগুলোকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছি।’

     একটা কোনা ঘুরে সমানে এগতেই মার্টিন দেখতে পেলেন কিছু ছাত্র ছাত্রী আলোকোজ্জ্বল একটা স্থানে উইঙ্কলস অ্যান্ড আউজার খেলছে। সহসাই দারুণভাবে চমকে গিয়ে কাত হয়ে ওকে থামতে হলো। কারন একটা পুরোনো কোয়াফেল যা এখন আউজার হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে এসে দাঁড়িয়েছে ঠিক ওর মুখের সামনে। মাত্র তিনইঞ্চি দূরে। ভাসছে এবং নড়ছে খুব ধীরে।

     একজন খেলোয়াড় চেঁচিয়ে উঠলো, ‘তুমিকে বাবা আমাদের খেলার মাঝে এসে ঢুকে পড়লে?’ সঙ্গে সঙ্গেই জাদু দন্ড উঁচিয়ে কোয়াফেলটাকে ফিরিয়েও নিলো। ‘খুব বেঁচে গেলে। লাগলে আর দেখতে হত না। একটু দেখে শুনে চলাফেরা করা দরকার বুঝলেন কিনা।’

     ‘উড়ন্ত…বস্তু!’ মার্টিন চেঁচিয়ে উঠলেন। পুনরায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের জামাটায় দুবার হাত বুলিয়ে নিলেন অযথাই পাগলের মতো। ‘আমি… জাদুদন্ড। আসল জাদু দন্ড। আর সেটা দিয়ে জিনিস ভাসিয়ে রাখা হচ্ছে ! এটা চিরদিন মনে রাখার মতো একটা ব্যাপার ! আমি আগে কোন দিন দেখিনি…!’

     আর একজন উইঙ্কল অ্যান্ড আউজার খেলোয়াড় বলে উঠলো, ‘আরে কে এই লোকটা? ও কি সব বলছে?’

     আর একজন চেঁচিয়ে বললো, ‘ওকে এখানে কে ঢুকতে দিলো? ও তো একজন মাগল! হতেই হবে!’

     ‘এইতো সেই লোক যে কুইডিচ মাঠে ঢুকেছিল! এই সেই অনুপ্রবেশকারী!’

     সবাই একসঙ্গে চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুরু করে দিলো। মার্টিন উইঙ্কল অ্যান্ড আউজার খেলোয়াড়দের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল, কিছু অনুসরনকারী থেকে গেল পেছনে। ‘আমাকে আরো অনেকে ঘিরে ধরেছে। চারদিকে অনেক করিডোর দেখতে পাচ্ছি। এইখানে…ইয়ে, যতদূর আমি বুঝতে পারছি, এগুলোর আশেপাশে সব বড় বড় ক্লাসরুম। আমি প্রথমটায় ঢুকছি …’

     মার্টিন ডানপাশের ক্লাস রুমটায় ঢুকে পড়লেন, পেছন পেছন ধেয়ে এলো একদল চিৎকার করতে থাকা শিক্ষার্থী। ঘরটা বেশ বড় এবং ক্লাস চলছিল। যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী ক্লাসে ছিল তারা ঘুরে তাকালো কি হচ্ছে দেখার জন্য।

     ঘরটার চারদিকে তাকাতে তাকাতে মার্টিন বললো, ‘খুব একটা বিপদজনক বলে মনে হচ্ছে না। ছাত্র ছাত্রী, বইপত্র, একজন শিক্ষক ধরনের কাউকে দেখতেও পাচ্ছি, যে …যে, যে… যে …’

     আবার মার্টিনের কন্ঠ উচ্চকৃত হলো, মনে হচ্ছিল উনি নিজের কথা বলার ওপর নিয়ন্ত্রন খোয়াচ্ছেন। চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসছে, নিঃশ্বাস নেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। ওর মুখ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কথা বলার, অস্পষ্ট কিছু শব্দ বের হচ্ছে ওখান থেকে। সামনের দিকে, অশরীরী প্রফেসর বিনস, যিনি পড়ানোর কাজটা যথেষ্ট মন দিয়েই করেন, এখনো গণ্ডগোলের দিকে কর্ণপাত করেননি। উনি ভেসে আছেন, কন্ঠস্বর উচ্চমাত্রের রিনরিনে শব্দ, যেন কেউ বোতলের মধ্যে ফুঁ দিচ্ছে। অবশেষে ওনারও নজরে এলো মার্টিন জে প্রেস্কটের হাঁপাতে থাকা অবয়ব, পড়ানো থামিয়ে উনি চোখ কুঁচকে তাকালেন। ‘কে এই একক ব্যক্তি, আমি জানতে পারি কি?’ বিনস জিজ্ঞেস করলেন নিজের ভুতুড়ে চশমার ওপর দিয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।

     মার্টিন কোনোক্রমে একটা বড় শ্বাস নিলেন। ‘একটা ভু উউউউউউত’ বিনসের দিকে আঙুল তুলে বলে উঠলেন। উল্টো দিকে ঘুরে পালানোর চেষ্টা করলেন। ওদিকে দরজার কাছে শিক্ষার্থীরা নড়ে চরে ঢোকার জায়গা করে দিচ্ছে প্রফেঃ লংবটম আর হেডমিস্ট্রেস ম্যাকগনাগলকে, সঙ্গেই আছে টেড আর সাব্রিনা। যাদের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মার্টিন আছড়ে পড়লেন অজ্ঞানের মতো অবস্থায়। ছিটকে পড়লেন শেষের দিকের দুটো ডেস্কের ওপর। যে দুজন ওই ডেস্কে বসে ছিল তারা ওপর দিকে হাত তুলে উঠে দাঁড়ালো। এক বোতল কালি ছিটকে পড়ে ছিটিয়ে গেল মেঝেতে।

     হেড মিস্ট্রেস ম্যাকগনাগল দ্রুত এগিয়ে গেলেন মার্টিনের দিকে এবং বেশ খানিকটা দূরে থেমেও গেলেন।। ‘কেউ কি বলতে পারবে এই মানুষটা কে?’ কাটা কাটা উচ্চারনে জানতে চাইলেন। ‘আমার স্কুলের মধ্যে ও অজ্ঞান হয়ে পড়েই বা আছে কেন?’

     জেমস পটার ঠেলে ঠুলে সামনের দিকে এগিয়ে এলো। তাকালো ডেস্কের কাছে পড়ে থাকা মানুষটার দিকে। একটা বড় সড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, ‘আমার মনে হচ্ছে উত্তরটা আমি জানি ম্যাম।’

***

পনের মিনিট পর, জেমস , ম্যাকগনাগল, নেভিল লংবটম এবং বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনকে একসঙ্গে দেখা গেল হেডমিস্ট্রেসের অফিসে, সঙ্গে মার্টিন প্রেস্কটও আছেন। মার্টিন অফিসে আসার সময় মাঝপথেই জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন এবং ছেড়েছেন এক চিল চিৎকার। কারন নেভিল ওকে করিডোর দিয়ে নিয়ে আসছিলেন শূন্যে ভাসিয়ে। এই চিৎকারে নেভিল এতোটাই চমকে গিয়েছিলেন যে আর একটু হলেই মার্টিনের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছিলেন। শেষমেশ সামলে নিয়ে সাবধানে মাটিতে নামিয়ে দিয়েছেন মার্টিনকে। করিডোর দিয়ে অফিসে আসার পথে জেমস জানালো এই সেই অযাচিত অনুপ্রবেশকারী যাকে ও ধাক্কা মেরে জানলা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল । আবার একেই দেখতে পেয়েছিলো কুইডিচের মাঠে। এছাড়া আর কোনও কথা কেউ বললোনা। অফিসে পৌছানোর পর দরজা লাগিয়ে দিলেন ম্যাকগনাগল এবং তারপর বললেন।

     ‘আমি শুধু জানতে চাই আপনি কে, আপনি এখানে কেন, আর তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, এখানে আপনি ঢুকলেন কি ভাবে?’ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলার সময়েই বোঝা যাচ্ছিলো ওনার রাগের পরিমাণ। উত্তরগুলো পেয়ে গেলে, সঙ্গে সঙ্গেই আপনাকে এখান থেকে বের করে দেওয়া হবে। আর তারপরে এখানকার কোন ঘটনাই আপনার মনে থাকবে না এই নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি। এবার যা বলার বলে ফেলুন।’

     মার্টিন ঢোঁক গিলে চারদিকটা একবার দেখে নিলো। জেমসকে দেখতে পেয়ে মুখটা বিকৃত করলো, মনে পড়ে গেল জানলার কাঁচ ভেঙে আছড়ে পড়ার মুহূর্তটা। একটা বড় করে শ্বাস নিলো। ‘সবার আগে জানাই আমার নাম মার্টিন জে প্রেস্কট। ইন্সাইড ভিউ নামের একটা প্রোগ্রামে আমি কাজ করি। আর দ্বিতীয় কথা হলো,’ হেডমিস্ট্রেসের দিকে তাকালো। ‘আমি এই চত্বরের ভেতর ঢোকার পর আহত হয়েছি। এ নিয়ে আমি কোনো আইনি ঝামেলা করতে চাইনা। তবে আশা করছি বুঝতে পারছেন যে এই ব্যাপারে মানে আহত হওয়ার ব্যাপারে আমার অধিকার আছে কমপেনসেশন দাবি করার। আর আমি মোটেই সেরকম কোনও হাবভাব দেখতে পাচ্ছি না আপনাদের তরফ থেকে। ’

     ডেস্কের ওপর ঝুঁকে ম্যাকগনাগল মাটিনের চোখের দিকে সোজা সুজি তাকিয়ে বললেন, ‘আপনার সাহস তো কম নয়? একেতো আপনি দুর্গে অনধিকার চোরের মতো প্রবেশ করেছিলেন। এখানে আপনার আসার কোনও অধিকার নেই এবং বোঝেনও না কোথায় এসেছেন…’ মাথা নেড়ে গলার স্বর নিচু করে বললেন, ‘আমি কোনও হুমকির তোয়াক্কা করিনা। আপনি নিশ্চিতভাবে মাগলজাত, যে কারনে আমি ধৈর্য ধরে আছি। আমার প্রশ্নের উত্তর গুলো তাড়া তাড়ি দিন নচেৎ আমাকে অন্য পথ নিতে হবে সেগুলো জানার জন্য।’

     যদিও একটা কাঁপুনি দিচ্ছিলো মার্টিনের শরীরে তবু চেষ্টা করলেন নিজেকে স্বাভাবিক রাখার। ‘ওহ, আপনি বোধহয় এটার কথা বলছেন।’ জামার পকেটে হাত ঢুকিয়ে বার করে আনলেন একটা ছোট্ট শিশি। জেমস চিনতে পারলো ওটাকে। সেদিন রাতে জাদু তরলের ঘরে এটাই দেখেছিল লোকটার হাতে। ‘হ্যাঁ, আপনার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি আপনি জানেন এটা কি। আমাকে একটু সময় দিন আমি একটু দেখে নিই। ভেরিটাসেরাম, নিশ্চিত ভাবে। আমি এটার দুফোঁটা আমার এক সহকর্মীর চায়ের কাপে দিয়েছিলাম। সে লোকটা একঘণ্টা ধরে টানা কথা বলে গিয়েছিল। থামানোই যাচ্ছিলো না। এমন সব কথা বলে ফেললো যা আমি নিজেই ভুলে যেতে চাই। সত্যি বলছি।’

     ফ্র্যাঙ্কলিন বলে উঠলেন, ‘আপনি একটা অজানা তরল একজন সাধাসিধে মানুষকে না জেনে বুঝে খাইয়ে দিলেন?’

     কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, ‘হ্যাঁ, মানে আমি তো শুধু জানতে চেয়েছিলাম ওটা দিয়ে কি কাজ হয়। ভুল কিছু করেছি নাকি? আমার মনে হয়েছিল দু ফোঁটাতে খারাপ কিছু হবে না।’ শিশিটাকে আলোর দিকে তুলে দেখলো। ‘এটা ট্রুথ সিরাম। সত্যি বলানোর তরল। এটা যদি ভয়ানক কিছু হতো আপনারা নিশ্চয় ওটাকে ওভাবে খোলা জায়গায় ফেলে রাখতেন না। যে কেউ তো ওটা নিতে পারে।’

     ম্যাকগনাগলের মুখ রাগে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ‘এই স্থানে আমরা তালাচাবির বদলে নিয়মানুবর্তিতা এবং পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপর বেশী ভরসা করি। আপনার ওই বন্ধুর ভাগ্য ভালো যে আপনার হাতে নারগেলস্পাইক বা থারপশারপের তরল ছিল না।’

     ‘মোটেই আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন না,’ মার্টিন বললো, যদিও নিজেই যথেষ্ট চাপে আছে বোঝা যাচ্ছিলো। ‘আমি শুধু দেখাতে চাইছিলাম যে আমি আপনাদের কৌশলগুলোর খবর রাখি। আমি অনেক দিন থেকেই আমি এসব ব্যাপার নিয়ে চর্চা করছি। মোটেই আমাকে কোনও তরল খেতে বাধ্য করবেন না অথবা কোন রকম ব্রেনওয়াশ করার চেষ্টা করবেন না। আমি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দেবো, সঙ্গে সঙ্গেই আমি চাই আপনিও আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দেবেন একই ভাবে।’

     নেভিল নিজের জাদু দন্ডটা ওঠালেন। ‘তাহলে তার আগে বলুন দেখি কেন আমরা আপনার এখানকার সমস্ত স্মৃতি মুছে আপনাকে কাছের কোনো বাস রাস্তার ধারে ছেড়ে দিয়ে আসবো না?’

     মার্টিন কোটের কলারে লাগানো ছোট্ট মাইক্রোফোনটায় টোকা মেরে বললেন, ‘এটার জন্য। আমার কথা, সঙ্গে সঙ্গেই আপনারা যা যা বলেছেন সেই সমস্ত কথা আমার কমপিউটারে চলে গেছে আমার ফোনের মাধ্যমে। সব রেকর্ড হয়ে গেছে। একটা ছোট্ট শহরে, বেশী না মাত্র তিন কিমি দূরে একদল সিনেমা বানানেওয়ালা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের একদল বিশেষজ্ঞ অপেক্ষা করে আছেন। যাদের আমি ডেকে এনেছি আমার অনুসন্ধানে সাহায্য করার জন্য—’

     ‘অনুসন্ধান!’ হেডমিস্ট্রেস কথাটা বলে উঠলেন ঝাঁঝিয়ে। ‘কোন সুযোগই নেই এসব হতে দেওয়ার!’

     মার্টিন বললেন, ‘ওদের মধ্যে একজন আবার ব্রিটিশ স্পেশ্যাল পুলিসের লোক।’

     জেমস লক্ষ করলো এক চরম নিস্তব্ধতা বিরাজ করলো ঘরে মাগল পুলিসের কথা বলার পর। ও একবার ওর ড্যাড এবং জাদু মন্ত্রকের লোকজনদের আলোচনা থেকে শুনে ছিলো কোন একজন মানুষ বা একদল মানুষকে সামলানো কঠিন নয়। কিন্তু বিষয়টা জটিল হয়ে পড়ে যখন কোনো অফিসিয়াল মাগল ইনভেস্টিগেটিভ ব্যুরো এর সঙ্গে জড়িয়ে যায়।

     ‘এসব করাতে গেলে ওপর মহলে ভালো যোগাযোগ থাকতে হয়,’ মার্টিন বলতে থাকলেন। ‘একজন বড় মাপের এজেন্টকে এর সঙ্গে যুক্ত করাটা তো আর কঠিন। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম এটা যে ধরনের গল্প তাতে যে কেউ যুক্ত হতে চাইবে। আর তার জন্য কোন অফিশিয়াল চার্জও দিতে হচ্ছে না। কেবল মাত্র কৌতূহল জাগানো যে, এই এলাকাটার কোন রেকর্ডই নেই। তাই একটা ব্যবস্থা করে রেখেছি – যদি আগামী দুঘণ্টার ভেতর আমার কাছ থেকে ওরা কোন ফোন কল না পায়, কী ভাবে এই এলাকায় ঢুকতে হবে তার নির্দেশসহ, তাহলে যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অফিসে ফিরে যায়। এখানে আমার সঙ্গে যা যা হচ্ছে এবং আমি যে সব কথাবার্তা বলছি সেসব ভালো করে শুনে নিয়ে যদি ওনারা মনে করেন দরকারি তাহলে যেন সেগুলো সম্প্রচার করেন। আমি নিশ্চিত এটা অনেক মানুষকেই হতবাক করে দিতে সমর্থ হবে। দুর্গের ভেতর একটা স্কুল যেখানে একটা ভুত তার শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয় কি ভাবে আসল জাদু করতে হবে, সঙ্গে থাকে জাদু দন্ড এবং অনেক কিছু। বলতেই পারি যে আপনাদের সিক্রেটটা এবার সবার সামনে উন্মোচিত হবে। আপনাদের ছাত্র ছাত্রীরা এই গোপন স্থানে শিখতে আসে, কিন্তু তারা বাড়ি ফিরেও তো যায়। যায় তো নাকি? আমি বাজি ধরতে পারি ওদের বাড়িগুলো আশেপাশে কোথাও নেই, আর সেগুলো এই জায়গাটার মতো গোপন নয়। সেখানেও অনুসন্ধানের কাজ চলবে। কোন না কোন ভাবে আপনাদের সব কিছু ফাঁস হয়ে যাবেই।’

     হেড মিস্ট্রেস ম্যাকগনাগলের মুখাবয়ব এই মুহূর্তে শ্বেতপাথরের মতো কঠিন ও সাদা রুপ নিয়েছে। সাদা জামা পড়া রোগা মানুষটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন।

     ফ্র্যাঙ্কলিন বললেন, ‘আরে বাবা এসব আপনি কি বলছেন স্যার, আপনি এসব করতেই পারেন না।’ নিজের চশমাটা খুলে হাতে নিয়ে এগিয়ে এলেন মার্টিনের সামনে। ‘আপনি যেটা করতে চাইছেন তাতে তো এই স্কুলটা এবং সম্ভবত এরকম অনেকগুলো স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারন হয়ে দাঁড়াবে। আর তার ফলে এই মুহূর্তে স্কুলগুলির সঙ্গে যুক্ত অনেক অনেকজনের জীবিকা নষ্ট হবে এবং প্রচুর ছাত্রছাত্রী শিক্ষা পাওয়ার সুযোগটাও হারাবে। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আপনি যেটা চাইছেন সেটা হল পুরো জাদুজগতটা মাগলদের সামনে এসে যাক। তা সে উভয়পক্ষ এর জন্য তৈরী থাকুক বা না থাকুক। আর সেটা কিসের জন্য? আমার তো মনে হয় না এতে মানব সভ্যতার কোনও লাভ হবে। আমার তো মনে হচ্ছে আপনার আসল চাহিদাটা অনেক বেশী …আত্মকেন্দ্রিক। দয়া করে আরো একবার ভাবুন পরের পদক্ষেপটা নেওয়ার আগে। অপরদিকে কার্যক্ষেত্রে এমন অনেক শক্তি আছে যাদের আপনি সামলাতে পারবেন না। হয়তো আপনি নিজেও সেরকম কোনো শক্তির হয়েই কাজ করছেন। আমি ভালোভাবেই বুঝতে পারছি আপনি খারাপ মানুষ নন। ভেবে দেখুন বন্ধু, এমন কোন পদক্ষেপ দয়া করে নেবেন না যা আপনাকে একটা গোটা প্রজন্মের কাছে দোষী সাব্যস্ত করে।’

     মার্টিন ফ্র্যাঙ্কলিনের কথাগুলো শুনলেন, হয়তো কথামতো কাজ ও করতেন। হঠাৎ , যেন ঘোর কাটিয়ে ফিরে এলেন, বললেন, ‘আপনি বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন না?’ একমুখ হাসি নিয়ে আঙুল তুলে দেখালেন। ‘ আপনাকে দেখতে একবারে তার মতোই! অদ্ভুত ব্যাপার। দেখুন, আমি বুঝতে পারছি আপনি এখন সেই অবস্থায় নেই যেখানে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা যায়, কিন্তু আমি আপনার জন্য দুটো শব্দ বলছি, এক্সক্লুসিভ … ইন্টার ভিউ। একটু মাথায় রাখবেন, ঠিক আছে?’

     কঠোর স্বরে হেডমিস্ট্রেস বললেন, ‘মিঃ প্রেস্কট। আপনি মোটেই এত জলদি এ ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্তের আশা করতে পারেন না। আমাদের এটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’

     ‘একদম ঠিক,’ নেভিল বললেন। ‘আর যদিও আমরা আপনার কথা মেনেও নিই, আপনাকেও আমাদের টার্মস এর কথা ভাবতে হবে। আপনি যে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন তার থেকে আমাদের কি লাভ হতে পারে সেটাও জানা দরকার। আমি তো জানি না বা বুঝতে পারছি না। তবুও এটা বলতেই হচ্ছে, আমাদের কিছু সময় দরকার।’

     ‘আমি তো বললামই,’ মার্টিনের গলায় এখন অনেকটাই আত্মবিশ্বাস। ওর মনে হচ্ছে পরিস্থিতি আপাতত ওর হাতের মুঠোয়। ‘আপনাদের হাতে আর দুঘণ্টা আছে। ঠিক ঠিক বললে চুরানব্বই মিনিট।’

     ফ্র্যাঙ্কলিন কিছুটা হতাশার সঙ্গে বললেন, ‘আমাকে একটা কথা বলুন তো মিঃ প্রেস্কট, আপনি এই স্কুল চত্বরে প্রবেশ করলেন কি করে? এই ব্যাপারটা নিয়ে আর অগ্রসর হওয়ার আগে আমাদের এটা জানা খুব জরুরী।’

     মার্টিন বললেন, ‘একটা চেয়ার পাওয়া যাবেনা বসার জন্য? সে এক বিরাট গল্প।’

     নেভিল আবার নিজের জাদু দন্ড উঠালেন। মার্টিনের দিক থেকে চোখ না সরিয়ে জাদুদন্ডটা তাক করলেন কোনার দিকে রাখা একটা কাঠের চেয়ারের ওপর এবং ওটাকে উড়িয়ে নিয়ে এলেন। প্রায় মার্টিনের পায়ের কাছে এনে ওটাকে রাখলেন। মার্টিন অতি উৎসাহে বসলেন। চেয়ারটা মাটিতে খটাস করে এটা শব্দ সহ থিতু হলো।

     ‘এবার বলুন,’ নেভিল বললেন হেডমাস্টারের ডেস্কের ওপর শরীরের কিছুটা ভার রেখে। ম্যাকগনাগল বসে আছেন নিজের চেয়ারে টান টান হয়ে। ফ্র্যাঙ্কলিন আর জেমস দাঁড়িয়ে।

     ‘হ্যাঁ বলছি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে আমি একটা চিঠি পাই যেটা থেকে জানতে পারি এই জায়গাটার সম্বন্ধে,’ মার্টিন সামনের দিকে ঝুঁকে নিজের পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে নেভিলের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন। ‘ভিউ থেকে অফারটা ঘোষনা করাই ছিল এক লক্ষ পাউন্ডের। প্যারানরমাল অ্যাক্টিভিটির প্রমান দিতে হবে। আর যে ভদ্রলোক ওই চিঠি লিখেছিলেন তার বিশ্বাস হগওয়ারটস হল সেই জায়গা যেখানে এর প্রমান ভুরিভুরি মিলবে। সত্যি বলতে সারা বছর আমরা এরকম হাজার হাজার চিঠি পাই যারা ওই অর্থ জেতার আশা করে থাকেন তাদের কাছ থেকে। কত শত রকমের ছবি যে আসে তার ইয়ত্তা নেই। সেখানে ঝাপসা করে তোলা ঝোলের বাটি থেকে শুরু করে ঝলসানো টোস্টের ছবিও থাকে যার ওপর নাকি কোন সাধু মহাত্মার মুখ দেখা গেছে। ভিউ এর অবশ্য কোন সদিচ্ছাই নেই এ টাকাটা কাউকে দেওয়ার। ওরা এর দ্বারা অদ্ভুত সব খবর সংগ্রহের ভালোই পথ বার করেছে। আর বিশ্বাস করার মতো যে খবরগুলো পাওয়া যায় দেখা যায় সেগুলো সবই কল্পনা আর উন্মাদ মস্তিস্কের ফসল।

     ‘অন্য দিকে আমি হলাম সেই ধরনের মানুষ যে বিশ্বাস করতে ভালবাসে। যদিও চিঠিটায় এমন কিছু ছিল না যা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। কিন্তু সঙ্গে যে জিনিসটা ছিল সেটাই আমাকে চাগিয়ে দেয় এই কাজটা করার জন্য। একটা ছোট্ট বাক্স যার মধ্যে ছিল একটা জিনিস যাকে আপনারা বলেন “চকলেট ফ্রগ”। আমি ভেবে ছিলাম পত্রদাতা হয়তো কোনো মজাদার গিফট পাঠিয়েছেন আমার জন্য। আমি বিন্দুমাত্র না ভেবে ওটা খুলি। ভেতরে সত্যি সত্যিই একটা ছোট্ট চকলেটের ব্যাং ছিলো। আমি ওটাকে তুলে নিয়ে মুখে ঢুকাবো বলে হাত বাড়িয়েছি, ওটা মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো। আমি আর একটু হলে ফেলেই দিতাম বাক্সটা। এরপর যা আমার মনে আছে তাহলো ব্যাংটা লাফ দিয়ে আমার ডেস্কে পড়লো। দিনটা ভালোই গরম ছিল, আর সেদিনের খবরের কাগজটা ওখানেই রাখা ছিল।  দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো ওটা নরম ধরনের বস্তু। কাগজটার ওপর ওর ছোট্ট ছোট্ট পায়ের ছাপ পড়লো বেশ কিছু। তিনবার লাফালো তারপর এক জায়গায় আটকে থেকে গেল। পরের পাঁচ মিনিট আমি ওটাকে ছুঁয়েও দেখিনি, ওটাও নড়েনি। ইতিমধ্যে আমি ধারনা করে নিয়েছি যে ওটা একটা আসল ব্যাং যার ওপর চকলেটের প্রলেপ লাগানো আছে। এক ধরনের নির্দোষ মজা করা হয়েছে আমার সঙ্গে। বাক্সের ভেতরে থাকা গরমে ও ব্যাটার পঞ্চত্ব প্রাপ্তি হলো। আর তারপরেই ওটাকে তুলতে গিয়ে বুঝলাম ওটা সত্যি সত্যি চকলেটের ব্যাং। আর স্বীকার করতেই হবে সে চকলেট যথেষ্টই ভালো মানের।

     ‘সত্যি বলতে আমি সব ভুলেই গিয়েছিলাম। যতই মুক্তমনের মানুষ আপনি হোন না কেন , এই জগতে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত ঘটনাগুলো কখনো না কখনো আপনার পুরাতন বিশ্বাসকে নড়িয়ে চড়িয়ে দেয়। আমার ক্ষেত্রে হয়তো সেটাও হতো না যদি না ওই ব্যাংটার পায়ের ছাপ কাগজটার ওপর না থাকতো। আমি ওটাকে আমার ডেস্কের নিচের দিকে রেখে দিয়েছিলাম। যখনই ওটার দিকে আমার নজর যেত মনে হতো ওই ব্যাংটা আমার ডেস্কের ওপর লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। মন থেকে এই ছবি কিছুতেই মুছতে পারছিলাম না। অগত্যা একদিন ইমেল করেই দিলাম পত্রদাতাকে। জানালাম ব্যাংবাজির ট্রিকটা দারুণ ছিল। আর কিছু আছে নাকি সংগ্রহে?

     ‘ইমেলের উত্তর ইমেলেই এলো পরের দিন। জানিয়েছে আমি যদি সত্যি সত্যিই ট্রিক্স দেখতে আগ্রহী থাকি তাহলে ওর পাঠানো সঙ্কেতের জন্য যেন অপেক্ষা করি। আর তার পরের দিনই ওর কাছে থেকে আর একটা প্যাকেট এলো। ছোটো। ওর মধ্যে সেই সব কিছু ছিল যা দিয়ে আমি এখানে আসতে পারি। একটা লাফাতে থাকা চকলেট ব্যাং এর বিষয়ে অনুসন্ধান করতে আমার মাথা মোটা ওপরওয়ালারা যে আমাকে কোনও সাহায্যই করবেন না এটা আমার জানাই ছিলো। এমন কি ওদের ব্যাঙ এর পায়ের ছাপ দেখালেও লাভ হবে না জানতাম। সৌভাগ্যবশতঃ আমার কিছু ছুটি পাওনা ছিল। ফলে সিদ্ধান্ত নিলাম এটা আমি একা একাই করবো। একটু অন্য রকম ভাবে একটা ভ্রমন তো হবে। ব্যাস জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বসে পড়লাম ট্রেনে।

     ‘সাধারনের মতো করে কিছু করা ব্যাপারটা অনেকটাই সহজ ব্যাপার। ওই জঙ্গলটার অপরপ্রান্তে বসে, এখানে প্রথম আসার আগের দিন রাত্রে হাতে থাকা সঙ্কেত অনুসারে বুঝতে পেরেছিলাম আমার গন্তব্যস্থল কাছেই। পরের দিন ভোরে শুরু করলাম পায়ে হাঁটা। যে পথ চিহ্ন আমার কাছে ছিল সেটা ধরে হাঁটতে শুরু করে বারকয়েক ফিরে ফিরে এলাম যেখান থেকে হাঁটা শুরু করেছিলাম সেখানেই। একবারও কিন্তু মনে হয়নি যে আমি কোনো বাঁক ঘুরেছি বা ভুল পথে হেঁটেছি। মনে হচ্ছিল যখনই আমি চাইছি জঙ্গলের অপরপ্রান্তে যেতে তখনই এ জগতটা  উল্টো পাক মারছে। আমি একটা কমপাস ব্যবহার করতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু ওটা পাগলের মতো এদিক সেদিকে ঘুরছিল। যেন ওটা ভুলেই গেছে ওকে কী করতে হয়।

     ‘এ ঘটনা আমার সঙ্গে টানা তিনদিন ধরে ঘটলো। আমি অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ছিলাম, সত্যি বিশ্বাস করুন।  একই সঙ্গে একটা জেদ মাথায় চেপেও বসেছিল কারন ভালই বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা আমাকে আটকাচ্ছে গোপন জগতে ঢোকা থেকে। আর সেটা কি আমাকে জানতেই হবে। তাই পরের দিন সেই সঙ্কেতের বাক্সটা বার করে ভালো করে সব খতিয়ে দেখলাম। এই সময়ে ওটাকে আমার একেবারে সামনে রেখে ছিলাম। লক্ষ্য রাখছিলাম ওটার ক্ষুদ্র জ্বলতে নিভতে থাকা বিন্দুটার দিকে। কিছুক্ষণ বাদেই মনে হল পায়ের তলার জমি যেন ধ্বসে যাচ্ছে। আমি একটা সরু গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে চলেছি যার দু পাশ অতিরিক্ত খাড়া ওপরে চড়ার জন্য। চারদিকে গাছ পড়ছে, সঙ্গেই নুড়ি পাথর। সব যেন ক্ষেপে গেছে, আমাকে কিছুতেই প্রবেশ করতে দেবে না। আমিও জান হাতে নিয়ে লড়ে গেলাম। পাশের খাড়া পাথরের দেয়ালের গায়ে যা পেলাম, সে কাঁটা গাছই হোক বা ছোট্ট একটা গুল্ম, তাই ধরে উঠতে শুরু করলাম ওপরে। তার পর মনে হল এবার গ্র্যাভিটিও আমার বিরুদ্ধাচরণ করছে। আমার পায়ের তলার জমি ফুলেফুলে উঠে আমাকে ছুঁড়ে ফেলতে চেষ্টা করতে শুরু করলো। পরে বুঝেছি এসব কিছুই ঘটেনি ওগুলো ছিল এক ধরনের মায়ার খেলা। আমার নিজেকে কেমন যেন নেশাচ্ছন্নের মতো মনে হচ্ছিল। চোখে ঝাপসা দেখছিলাম। শেষের দিকে হামাগুড়ি দিয়েও নজর রেখে গিয়েছি সঙ্কেতের দিকে।

     ‘এরপর সহসাই ওই সব অনুভুতিগুলো কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। জঙ্গলটা আবার আগের মতো স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। অন্তত আমার তাই মনে হয়েছে। এগিয়ে চললাম। মিনিট দশেক পর, প্রথমবার আমার সামনে দৃশ্যমান হল আপনাদের এই দুর্গ। আমি থ হয়ে গেলাম, এটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু দুর্গের থেকেও আমাকে পারিপার্শ্বিক দৃশ্য আরো হতবাক করে দিলো।

     ‘ফুট কুড়ি সামনে, দেখতে পেলাম এক বিশাল আকৃতির মানুষকে। এতো বড়মানুষ! একটা প্রমান মাপের গ্রিজলী ভাল্লুকের মত মাপের মানুষ। আর তারপর, ওর পাশে দাঁড়িয়ে…’ এতোক্ষণ একটানা বলে মার্টিন থামলেন। ঢোঁক গিললেন, নিশ্চিতভাবেই ওই সব কথা মনে করতে করতে উনি শিহরিত হচ্ছেন। ‘ একটা এতো বড় প্রানী যেটাকে আমি তো প্রথমে ডাইনোসর ভেবেছিলাম। চারটে পায়ের এক একটা থামের মতো। তার পর চোখ তুলে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম ওখানে দুটো প্রানী পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে, আর দুটোই মানুষের মতই দেখতে। দুজনের মধ্যে যে বেশী লম্বা তার মাথা আশেপাশের গাছগুলোর থেকেও উঁচু। আমি ওটার মুখ দেখতেই পাচ্ছিলাম না। আমি চিৎকার করে পালালাম পেছনের দিকে, ওরা  আমার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলো নাকি পায়নি ঠিক জানিনা। ভাল্লুকের মতো আকৃতির মানুষটা ওদের সঙ্গে কথা বলছিলো। ওরা উত্তর দিচ্ছিলো বলেই মনে হল। ওদের কথা বলার শব্দে মাটি কাঁপছিল। তারপর, আমি আরো ভয় খেয়ে গেলাম যখন ওরা ঘুরে আমার দিকে , জঙ্গলের দিকে আসতে শুরু করলো। লম্বাটার একটা পদক্ষেপ এসে পড়লো  ঠিক আমার পাশে, জমি কেঁপে উঠলো বোমা ফাটার মতো শব্দে। অন্তত তিন ইঞ্চি মাটি চেপ্টে বসে গেল, রেখে গেল পায়ের ছাপ। আমার দিকে নজর না দিয়ে ওরা চলে গেল।’

     মার্টিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন, যেটা এই মুহূর্তে ওর গল্পের সঙ্গে অবশ্যই মানানসই। ‘এতক্ষনে আমি বুঝতে পারলাম আমি সঠিক স্থান খুঁজে পেয়েছি। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চমকে দেওয়ার মতো স্টোরি। সম্ভবত এই শতকের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর।’ সবার দিকে তাকালেন। চোখের ভাষায় একটা স্বীকৃতি পাওয়ার ঝলক।

     হেডমিস্ট্রেস শীতল কন্ঠে বললেন, ‘একটা ছোট্ট বিষয় এখনো পরিষ্কারভাবে বুঝলাম না। একটা সঙ্কেত এর কথা আপনি বলেছেন। নিশ্চিত ভাবে ওটা কোনও যন্ত্র। যেটা কোন না কোন ভাবে এই স্কুলকে খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে। আমি জানতে চাই সেটা কি এবং কি ভাবে কাজ করে?’

     মার্টিন ভুরু তুলে একটু দেখলেন, হাসলেন সামান্য তারপর সোজা হয়ে বসে বললেন, ‘ওহ, হ্যাঁ, তাই তো, ওটার কথা তো বলিনি। ওটা এখানে আসার পর থেকে আচরণ মোটেই ভালো করেনি আমার সঙ্গে তবে হ্যাঁ আসল কাজটা ঠিকঠাকই করেছে। একটা সাধারন জি পি এস ডিভাইস। ইয়ে মাফ করবেন। আপনারা তো বোধহয় এই শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত নন। পুরো কথাটা হলো গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ডিভাইস। এটা এই ধরাতলে মিটার খানেকের মধ্যে থাকা কোন একটি লক্ষ্য বস্তুকে খুঁজে করতে সাহায্য করে। একটা দারুণ রকমের মাগল ম্যাজিক, ইয়ে মানে আপনার যদি মেনে নেন।’

     জেমস ঘরে ঢোকার পর এই প্রথম কথা বললো, ‘কিন্তু আপনি স্কুলটা ওই যন্ত্র চিহ্নিত করলেন কি ভাবে? ওই যন্ত্র বুঝলো কি ভাবে যে ঠিক কোন জায়গায় স্কুলটাকে খুঁজতে হবে? এই স্কুলের চিহ্ন তো কোন ম্যাপে নেই।’

     মার্টিন ঘুরে তাকালেন, ভ্রু ঠেলে উঠলো ওপরের দিকে, সম্ভবত সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না জেমসের প্রশ্নের উত্তর দেবেন কিনা। তারপর যখন দেখলেন ঘরের সবাই উত্তরটা শোনার অপেক্ষায় ওর দিকে তাকিয়ে আছে তখন উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমি তো আগেই বলেছিলাম, আমার কাছে ওর সঙ্গে কিছু তথ্য ও পাঠানো হয়েছিলো। আর সেগুলো পাঠিয়েছিল এখানকারই কোনো একজন। খুবই সোজা ব্যাপার।’

     মার্টিন প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা কিছু বার করে আনলেন। দেখার আগেই জেমস বুঝতে পারলো ওটা কি। প্রশ্ন করার আগেই ও এটা অনুমান করতে পেরেছিলো। বুকের কাছে একটা ভারী কিছু যেন আটকে থাকলো ওর।

     মার্টিন দেখালেন একটা গেমডেক। র‍্যালফের গেমডেকটার থেকে এর রঙ আলাদা, কিন্তু একই কোম্পানীর তৈরী। উনি ওটাকে হেডমিস্ট্রেসের ডেস্কের ওপর রাখলেন। ‘ওয়ারলেস আপলিঙ্ক, অনলাইন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এটা ব্যবহার হয়। সঙ্গে সঙ্গেই এটা সাহায্যে চ্যাট ও করা যায়। খুবই সাধারন একটা যন্ত্র। এখানে কেউ এমন আছে নাকি যে ছদ্মনাম হিসাবে “অ্যাস্ট্রামাড্ডুক্স” শব্দটা ব্যবহার করেন?’

***

‘আপনি আমার সঙ্গে এটা করতে পারেন না!’ মার্টিন বললেন যখন নেভিল ওকে একটা রুম অফ রিকোয়ারমেন্টে ঢুকিয়ে দিলেন। এই মুহূর্তের প্রয়োজনে ঘরটিকে সাময়িক কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। যেখানে আছে শিক লাগানো জানলা, একটা বিছানা সহ খাট, একটা জল খাওয়ার বাটি এবং এক টুকরো পাউরুটি। ‘এটা বেআইনি কারাদন্ড! এটা মোটেই ঠিক নয়, এ একরকম প্রতিহিংসা!’

     নেভিল নম্র ভাবে বললেন, ‘এটাকে আপনার ফিল্ড রিসার্চের একটা অঙ্গ হিসাবে ধরে নিন। আমরা অনেক আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে জঙ্গলের খোলা জায়গায় আপনার থাকাটা ঠিক হচ্ছে না। ওটা ঝুঁকিপূর্ণ। একটু বিশ্রাম নিন বন্ধু।’

     জেমস নেভিলের কিছুটা পেছনেই হলে দাঁড়িয়ে ছিল, মুচকি হেসে উঠলো। মার্টিন ওকে দেখতে পেয়ে রাগে দাঁত কড়মড় করে একটা ঝটকা দিয়ে নেভিলের পাশ কাটিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেন। এত দ্রুত নেভিল নিজের জাদুদন্ডটা বার করলেন যে জেমসের পোশাক হাওয়ার ঝাপ্টায় নড়ে উঠলো। ‘আমি কিন্তু একবার বলেছি,’ নেভিল জাদু দন্ডটা পুরোপুরি মার্টিনের দিকে তাক না করেই বললেন কাটা কাটা স্বরে, ‘একটু বিশ্রাম নিন বন্ধু।’

     জেমসের হাসি থেমে গেল। ও কখনো নেভিল লংবটমকে এতোটা সিরিয়াস দেখেনি। অবশ্য শুনেছিল যে এই নেভিলই ভল্ডেমরটের নাগিনীর মাথা এক তলোয়ারের কোপে কেটে দিয়েছিল, কিন্তু সেতো জেমসের জম্মের আগের গল্প। ও যে নেভিল কে জানে সে একজন নম্র স্বভাবের আস্তে কথা বলা মানুষ এবং কিছুটা জুবুথুবু ধরনেরও। এখন নেভিলের জাদুদন্ড ধরা হাতটা একেবারে স্থির হয়ে আছে শ্বেতপাথরের মূর্তির মতো। মার্টিন নেভিলের ভাবভঙ্গী দেখে ফিরে গেলেন নিজের জায়গায়। পিছাতে পিছাতে পা দুটো বিছানায় ঠেকতেই ধপ করে বসে পড়লেন। জাদুদন্ড পকেটস্থ করে নেভিল বেরিয়ে এলেন হলঘরে, সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে গেল রুম অফ রিকোয়ারমেন্টের দরজাটা। মার্টিন যেই দেখতে পেলেন জাদুদন্ড পকেটে ঢুকে গেছে সঙ্গে সঙ্গেই লাফিয়ে উঠে এক চিৎকার ছাড়লেন, কিন্তু দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে আওয়াজ চাপা পড়ে গেল।

     ‘মাডাম হেডমিস্ট্রেস আপনি নিশ্চয় জানেন আমাদের ভূগর্ভস্থ কক্ষও আছে,’ নেভিল বললেন তার চিরপরিচিত কণ্ঠ স্বরে।

     দরজাটা বন্ধ হতে দেখে, ম্যাকগনাগল ঘুরলেন এবং শুরু করলেন হাঁটা, বাকিরা ওকে অনুসরন করলো। ‘আমাদের কিছু প্রাচীন পদ্ধতির শাস্তি প্রদান যন্ত্রও আছে প্রফেসর লংবটম, তবে আমার মনে হয় আপাতত এটাই যথেষ্ট। আমাদের আপাতত ওঁকে আটকে রাখতে হবে যতক্ষন না পর্যন্ত মিঃ প্রেস্কটের কথার ভিত্তিতে যে পরিস্থিতির জন্ম হয়েছে সে বিষয়ে জাদু মন্ত্রক কিছু জানাচ্ছে। ও হ্যাঁ, মিঃ পটার আমার জিজ্ঞাসা করা কর্তব্য বলেই মনে করছি…তুমি কি কিছু জানো ওই গেম ডিভাইসটা বিষয়ে যা সাহায্য করেছে আমাদের এখানে আসতে ওই হতচ্ছাড়া … লোকটাকে?’

     হেডমিস্ট্রেসের হাঁটার গতির সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে জেমস হাঁফিয়ে যাচ্ছিলো। উত্তর দেওয়ার জন্য মুখ খুললেও কি বলবে ভেবে পেলো না। ‘ইয়ে, হ্যাঁ, মানে …’

     নেভিল জেমসের কাঁধে হাত রাখলেন হাঁটতে হাঁটতে। ‘আমার সকলেই দেখেছি তোর মুখটা চাঁদের মতো সাদাটে ফ্যাকাশে মেরে গিয়েছিল প্রেস্কট গেম ডেকটা বার করতেই। তোকে দেখে মনে হয়েছিল তুই আন্দাজ করতে পেরেছিলি ওটাই বার হবে। যদি তোর কিছু জানা থাকে বলে দে, হয়তো সেটা আমাদের কাজে লাগতে পারে।’

     জেমস ধরেই নিলো র‍্যালফের নাম উল্লেখ না করে কোনও লাভ নেই। তা ছাড়া র‍্যালফের এতে কোনও দোষও নেই। ‘আমার এক বন্ধুর এরকম একটা আছে। সেও আমার মতই প্রথম বার্ষিক ছাত্র, কিন্তু মাগল –জাত। ও জানতো না এরকম কিছু আনা এখানে বিপদজনক। আমরা কিন্তু সত্যিই সেরকম কিছু করিওনি। আমি তো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম ওটাকে এখানে কাজ করতে দেখে।’

     ‘তোর বন্ধু কি ওটা দিয়ে মাগলদের কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতো?’ নেভিল দ্রুত প্রশ্নটা করলেন।

     ‘না! অন্তত আমি যতদূর জানি, ও কখনো ওটা ব্যবহার পর্যন্ত করেনি! ও এখানে আসার পর ওর হাউসমেটরা ওর কাছে ওটা আছে জানতে পারে। আর সে নিয়ে ওকে অনেক ঝামেলা পোয়াতে হয়েছে। ওরা স্লিদারিন, আর হয়তো সেজন্যই ওকে ওরা টিটকারি মারতে থাকে ভাঁওতা বাজির ম্যাজিক যন্ত্র ব্যবহারের ছুতো তুলে। এটাও বলে ওই যন্ত্র ব্যবহার নাকি শুদ্ধ রক্তের জাদুকরদের অপমান করার সামিল।’

     করিডোরে একটা বাঁক ঘুরলেন হেডমিস্ট্রেস, চললেন নিজের অফিসের দিকে। ‘আমি আন্দাজ করছি তুমি মিঃ ডিডলের কথা বলছো তাই না? হ্যাঁ, আমি এটাও বিশ্বাস করি যে এই ঘটনাটার মাথাতে ও মোটেই নেই, অবশ্য ওর যন্ত্রটা সহায়ক হলেও হতে পারে। ওটা কি কোন রকম সিগন্যাল বা সঙ্কেত প্রেরণ করে?’

     জেমস কাঁধ উঁচু করে বললো, ‘আমার মনে হয় আপনি এবিষয়ে র‍্যালফকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেই ভালো হয়। বা আমার আর এক বন্ধু জ্যানকে। সেও এসব ব্যাপারে কিভাবে কি কাজ হয় ভালোমতই জানে। তবে আমার মনে হয় না ওই যন্ত্র নিজে নিজে সিগন্যাল পাঠাতে পারে। র‍্যালফ আমায় জানিয়েছিল কেউ একজন ওর যন্ত্রটা হাতিয়ে নিয়ে ওটাকে ব্যবহার করেছে। অন্য আর এক জন স্লিদারিন, এটা আমরা ভেবেছি। জ্যান বলেছিল কেউ বেশ কিছুক্ষন ওটাকে নাড়াচাড়া করেছে। আর ওটা ব্যবহার করার জন্য অ্যাস্ট্রামাড্ডুক্স ছদ্ম নাম ব্যবহার করেছে। যদিও কোন গেম ওটাতে খেলা হয়নি। হয়তো শুধু মাত্র সঙ্কেত তথ্য পাঠানোর জন্যই ওটা ব্যবহার হয়েছে। সম্ভবত এই মার্টিনের বলা সেই ভেতরের কোন ব্যক্তি যে সাহায্য করেছে স্কুলটাকে খুঁজে পেতে জিপিএস এর মাধ্যমে।’

     হেড মিস্ট্রেসের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে নেভিল বললেন, ‘তুই নিশ্চিত তো জেমস এই ব্যাপারে? এরকমটা কি ভাবতে পারিস যে না জেনেই মিঃ ডিডল ওই ডিভাইসটা ব্যবহার করে সিগন্যাল পাঠিয়ে ফেলেছে? এটাও তো হতে পারে যে ওই গেমডেক চুরি যাওয়ার গল্পটা আসলে একটা সাজানো মিথ্যে।’

     জেমস সজোরে মাথা নাড়াল। ‘হতেই পারে না। র‍্যালফ এরকম নয়। ও তো নয়ই, বা আমরা বাকি দুজনেও কখনো এরকম ভাবতেও পারিনি বা ভাবিনি যে ওইটা কাউকে এখানে আসতে সাহায্য করতে পারে। র‍্যালফ শুধু বুঝেছিল ওই গেমডেকটা নিয়ে এসে ওর হাউসমেটদের ও ক্ষুব্ধ করে দিয়েছে।’

     ‘আমরা কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা ভুলে যাচ্ছি,’ ম্যাকগনাগল বললেন ক্লান্তভাবে চেয়ারে নিজের শরীরটা এলিয়ে দিয়ে। ‘মিঃ ডিডল বা যে ওর গেমডেকটা চুরি করেছিল সে কোন এক মাগলের কাছে সঙ্কেত পাঠানোর চেষ্টা করলেও তো আমাদের সুরক্ষা চুক্তিব্যবস্থা অনুসারে সেটা না করাই উচিত ছিল।’

     প্রফেঃ ফ্র্যাঙ্কলিন, এতক্ষন হেড মিস্ট্রেসের অফিসেই থেকে গিয়েছিলেন ওই গেমডেকটা নেড়েচেড়ে দেখার জন্য।। যন্ত্রটাকে ডেস্কের ওপর রেখে ওটার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। কিছুই বুঝতে পারেন নি ওটার। ‘ওই সুরক্ষা চুক্তি ব্যাপারটা কি কাজ করে, ম্যাডাম হেডমিস্ট্রেস?’

     ‘প্রফেসর ব্যাপারটা একেবারে সিধেসাধা। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ওই চুক্তি স্বাক্ষর করতে হয়। সম্মতি জানাতে হয় এই মর্মে যে জ্ঞানতঃ তারা হগওয়ারটসের অস্তিত্বের কোনও রকম তথ্য কোন মাগল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে জানাতে পারবে না। যদি সেটা করে তাহলে চুক্তির জাদুক্ষমতা সম্পন্ন অংশ দায়িত্ব নেবে এ ব্যাপারে নাক গলানোর এবং আটকাবে এরকম যে কোন তথ্য আদানপ্রদান। সেখানে কথা বন্ধ বা ওই ধরনের কোনও জাদু অভিশাপ ব্যবহৃত হবে যা কথা আদানপ্রদানে বাধা দান করবে। এই ক্ষেত্রে আমরা, আন্দাজ করতে পারি যে ডিভাইস ব্যবহারকারীর আঙ্গুলে পুড়ে যাওয়ার অনুভুতি হবে বা আঙুল অবশ হয়েও যেতে পারে। মোটকথা যে ভাবেই হোক তথ্য আদানপ্রদান আটকে যাবেই।’

     ফ্র্যাঙ্কলিনকে একটু চিন্তাগ্রস্থ দেখালো। ‘আমার আল্মা আলেরনেও এরকম কিছুই একটা ব্যবহার করি। চুক্তির কথাগুলো আরো নির্দিষ্ট হওয়া দরকার মনে হয়। কোনো রকম ফাঁকফোকর থাকলে হবে না। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে যে কেউ যে ভাবেই হোক এমন কোন যন্ত্র ব্যবহার করেছে যার সাহায্যে এখান থেকে নির্দিষ্ট সঙ্কেত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। আমার অনুমান এই গেমিং ডিভাইসগুলোতে একটি করে ট্র্যাকার লাগানো আছে যা মিঃ প্রেস্কট বর্ণিত গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমে ধরা পড়ে। মিঃ ডিডলের গেমডেক যে ব্যবহার করেছিল সে এই বিশেষ ভৌগোলিক সঙ্কেত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে ওই গেমডেক থেকে অন্য গেমডেকে। মিঃ প্রেস্কটের শুধু মাত্র দরকার ছিল অন্য দিক থেকে আসা সঙ্কেত তার জিপিএস যন্ত্রে ঢুকুক আর উনি সেটা অনুসরন করে যাবেন মন দিয়ে। মিঃ প্রেস্কট চিরন্তন মাগল প্রকৃতির হওয়া সত্বেও ওটা ওকে পরিণত করেছিল এক ধরনের অগোছালো সিক্রেট কিপারে। উনি চাইলে , এই স্কুলের অবস্থানের গোপনতার সুত্র অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারতেন। তবে তারা এই স্কুলের নির্দিষ্ট স্থানটিতে পৌছাতে পারোতো কিনা সেটা আলাদা প্রশ্ন।। আর হয়তো সেই জন্যই উনি ঘুরিয়ে আমাদের চাপ দিয়ে সাহায্য চাইছিলেন নিজের দলবলকে এখানে প্রবেশ করানোর।’

     নেভিল হেডমিস্ট্রেসের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমরা এরকম কিছুর অনুমতি মোটেই দিতে পারিনা।’

     ‘মনে তো হচ্ছে না পুরোপুরি ব্যাপারটাকে আমরা আটকাতে পারবো,’ উত্তর এলো থমথমে কন্ঠস্বরে। ‘মিঃ প্রেস্কট অতিমাত্রায় সুবিধাবাদী ধরনের মানুষ বুঝতেই পারছি। উনি এতো বেশী জেনে গেছেন আমাদের ব্যাপারে যে তা আমাদের পক্ষে যথেষ্টই বড় বিপদের সমান। যদি আমরা প্রেস্কটের সমস্ত সঙ্গীকে খুঁজে বার করে তাদের মস্তিষ্ক প্রক্ষালন করেও দিই তবুও একটা সুযোগ থেকে যাচ্ছে ওদের কাছে, পরে প্রেস্কটের এখান থেকে বলা সমস্ত কথার রেকর্ডিংটা খুঁজে পাওয়ার। হয়তো পরবর্তী যে কোন সময়ে উনি ফিরে আসতে পারেন সঙ্গে আর লোক নিয়ে। আর তখন হয়তো কেবল মাত্র টেলিফোন নয় সঙ্গে থাকবে লাইভ ক্যামেরা। আমি তো কোনো পথই দেখতে পাচ্ছি না ওনাকে অনুসন্ধান করতে দেওয়া ছাড়া।’

     নেভিল মাথা নাড়লেন। ‘মোটেই না। আমি নিশ্চিত ও ব্যাটাকে লেকের জলে কিছুক্ষন চুবিয়ে রেখে দিলে বাপ বাপ বলে পালাবে এই খবরকে ব্রডকাস্ট করানোর বদলে।’

     ফ্র্যাঙ্কলিন নিজের ছোট্ট চশমার কাঁচটা একটু নেড়ে ওপরে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এ ধরনের অবস্থার মোকাবিলা করার জন্য অনেক রেডিমেড ব্যবস্থা কিন্তু আছে ম্যাডাম হেডমিস্ট্রেস। আমরা ইম্পেরিয়াস কার্স প্রয়োগ করতে পারি মিঃ প্রেস্কটের ওপর। এটা করলে অতি সহজেই ওর সঙ্গের লোকগুলোকে ফিরিয়ে দেওয়াও যাবে। আবার ওকে দিয়েই ওর অফিসে রেকর্ডটাকেও নষ্ট করে দিতে পারি। আর সেটা হয়ে গেলেই আমরা মিঃ প্রেস্কটের মস্তিস্ক প্রক্ষালন করে দেবো। আমাদের দিক থেকে চিন্তার আর কোনো কারন থাকবেনা।’

     ম্যাকগনাগল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘আসলে আমরা এই কাজগুলো করার জন্য অথোরাইজড নই। আর সত্যি বলছি তার জন্য আমি খুশীও। জাদু মন্ত্রকের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে, ওরা জেনে গেছেন সব কিছু, খবর পাঠিয়েছেন যে এক ঘণ্টার মধ্যেই ওরা ওদের সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন। যে কোনো মুহূর্তে আমি তোমার বাবার কাছ থেকে নির্দেশ আসার অপেক্ষা করছি।’

     বলতে না বলতেই, ফায়ারপ্লেসের ভেতর থেকে এক মহিলাকন্ঠ ভেসে এলো।। ‘শুভেচ্ছা এবং শ্রদ্ধা জাদু মন্ত্রকের পক্ষ থেকে। এটা একটি অফিসিয়াল বার্তা মন্ত্রকের তরফ থেকে। আমরা কি নিশ্চিত হতে পারি যে এখানে উপস্থিত ব্যক্তিগণ বিশ্বাসযোগ্য?’

     ম্যাকগনাগল উঠে ফায়ার প্লেসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। ‘হ্যাঁ সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারেন। এখানে আমার সঙ্গে যারা আছেন তারা ঘটনাটির গুরুত্ব বিষয়ে অবহিত। তবে সঙ্গে সঙ্গে এটাও বলে রাখতে চাই স্কুলের প্রায় সকলেই ইতিমধ্যে জেনে গেছে যে একজন মাগল স্কুল এলাকায় প্রবেশ করেছে। কারন প্রবেশকারীর প্রবেশ মোটেই নীরবভাবে ছিল না।’

     ফায়ার প্লেসের মধ্যে ভেসে থাকা মুখটি নেভিল, জেমাস আর প্রফেঃ ফ্র্যাঙ্কলিনকে একবার দেখে নিলেন। ‘আমি, মিস ব্রেন্ডা সাকারিনা, কাউন্সিল অফ অ্যাম্বাসাডোরিয়াল রিলেশনস এর সহসভাপতি, এর আন্ডার সেক্রেটারি। দয়া করে অপেক্ষা করুন পরবর্তী সংবাদের জন্য।’ মুখটি অদৃশ্য হল।।

     জেমস লক্ষ করলো মিস সাকারিনার নাম শুনে ম্যাকগনাগল ম্যামের মুখ সামান্য বিকৃত হয়েছিল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আবার একটি মুখ আবির্ভূত হলো ফায়ার প্লেসে। ‘ম্যাডাম ম্যাকগনাগল, প্রফেসর ফ্র্যাঙ্কলিন এবং লংবটম আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। এবং ছোট্ট মিঃ পটার তোমাকেও।’ একটা বিশেষ ধরনের হাসি ফুটে উঠলো পটারকে কথাটা বলার সময়। হাসিটা মিলিয়েও গেল ক্ষনিকের মধ্যেই। মনে হল যেন সুইচ টিপে একটা আলো জ্বালানো নেভানো হলো। ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অযাচিত ঘটনাটার কথা জানতে পেরেছি এবং একটা সিদ্ধান্তেও আসতে পেরেছি। হয়তো অনুমান করতে পারছেন, এরকম ঘটনার জন্য আমাদের বিশেষ প্রক্রিয়া আছে। আপনি মিঃ প্রেস্কটকে বলুন ওর সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। আমরা ভেবে দেখলাম ওকে অনুসন্ধান করতে দেওয়া ছাড়া কোন পথ আমাদের সামনে খোলা নেই। তবে যতক্ষণ না মন্ত্রক থেকে এক বিশেষ দল ওখানে যাচ্ছে মিঃ প্রেস্কট ছাড়া আর কেউ হগওয়ারটসের চত্বরে ঢুকতে পারবে না। আমরা কাল সন্ধেবেলার আগেই ওখানে পৌঁছে যাবো। তবে ঠিক কোনসময়ে সেটা ঠিক হবে প্রেস্কটের দলের সঙ্গে কথা বলার পর।’

     ‘মিস সাকারিনা,’ ম্যাকগনাগল বললেন, ‘আপনি কি এটাই বলতে চাইছেন যে ওই মানুষটিকে মন্ত্রক অনুমতি দিচ্ছে ইনভেস্টিগেশন করে সেটা মাগলদের জগতে ব্রডকাস্ট করার?’

     সাকারিনা নম্রস্বরে বললেন, ‘মাফ করবেন, ম্যাডাম ম্যাকগনাগল, আমি মোটেই সেরকম কিছু বোঝাতে চাইছি না, বা অন্যরকম কিছু। আপনি ভরসা রাখতে পারেন যে এরকম অবস্থাকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য আমরা প্রস্তুত, আমাদের নিজস্ব পন্থানুসারে।।আমার মোটেই ইচ্ছে নেই সে ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরন দিয়ে আপনার ওপর চাপ বাড়ানোর, কারন ইতিমধ্যেই অনেক চাপ আপনাকে নিতে হয়েছে।’

     হেড মিস্ট্রেসের মুখে সামান্য গোলাপি ভাব ফুটে উঠলো। ‘চাপের কথা বাদ দিন মিস সাকারিনা। আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আগামী দিনগুলোতেও এই স্কুল আর তার শিক্ষার্থীদের বিষয়ে এক কনা তথ্য অবগত হতে আমি কার্পণ্য করবো না।’

     সাকারিনা হাসলেন সামান্য। ‘মাই ডিয়ার মিনারভা, আমি এটা বলতেই পারি যে হগওয়ারটসের ভবিষ্যৎ, তার ছাত্রছাত্রী এবং আপনি চিরকালের জন্য সুরক্ষিত।। আমি একটু আগেই বললাম এরকম ঘটনার জন্য আমাদের বিশেষ দল আছে। মন্ত্রক সবসময় তৈরী থাকে।’

     ‘মাফ করবেন মিস সাকারিনা,’ ফ্র্যাঙ্কলিন বলে উঠলেন, এক পা সামনে এগিয়ে গিয়ে। ‘কিন্তু আপনি তো আমাদের এটাই ভাবতে বাধ্য করছেন যে জাদু মন্ত্রক একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যার অর্থ একটি মাগল ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টারকে হগ ওয়ারটস স্কুলের অন্দর মহলে ঢুকতে দেওয়া হবে। যার দলের কাছে থাকবে ক্যামেরা এবং তার উদ্দেশ্য ম্যাজিক্যাল জগতের সব গোপনতা বিশ্ববাসীর সমানে উন্মোচন করা। তাই না?’

     সাকারিনার মুখে ঝুলতে থাকা হাসিটা একটু শক্ত হলো। ‘আমি এটাই বিশ্বাস করাতে চাইছি, মিঃ ফ্র্যাঙ্কলিন যে মন্ত্রকের এই ধরনের এমারজেন্সী ঘটনার মোকাবিলা করার মত হাতিয়ার নিজেদের কাছে আছে।। কি রকম সে বিস্তারিত জানার কোন প্রয়োজন নেই।’

     ‘আমি এর বিরুদ্ধে যাওয়ার প্রার্থনা জানাচ্ছি মিস। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এক বড় ধরনের সুরক্ষা লঙ্ঘনগত সমস্যা সামনে নিয়ে আসতে পারে, যা হয়তো এই মুহূর্তে ভারচুয়ালি যে কেও নিজের পক্ষে ব্যবহার করতে পারে। আর যত দিন সেই সুরক্ষা লঙ্ঘন ঠিক না করা হবে এই স্কুল মোটেই সুরক্ষিত থাকবে না।’

     ‘প্রফেসর আমরা একটা একটা করে সব সমস্যার সমাধান করবো। আমরা আপনার চিন্তাকে সম্মান জানিয়েই বলছি, আমরা এই বিষয়টার ক্ষেত্রে সবরকম সুরক্ষার পদ্ধতি সঙ্গে নিয়েই কাজে নামছি। যদি আপনি মনে করেন এতে আপনার এবং আপনার সঙ্গে আসা সহকর্মীদের সুরক্ষার সমস্যা হতে পারে তাহলে আমারা আপনাদের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ফিরে যাওয়ার বন্দোবস্ত করতে পারি। আর সেটা হবে আমাদের কাছে যথেষ্টই হতাশাজনক এবং এই স্কুলের পক্ষেও দুঃখজনক ব্যাপার…’

     চশমা খুলে হাতে নিয়ে শান্ত কন্ঠে ফ্র্যাঙ্কলিন বললেন, ‘মিস সাকারিনা আমার চিন্তা এই স্কুলের চৌহদ্দির ভেতর থাকা সব কিছুর সুরক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিক্যাল আর মাগল দুনিয়ার সুরক্ষাও নিয়েও।’

     সাকারিনা হেসে বললেন, ‘বলা হয়তো বাহুলতাই হচ্ছে তবুও জানাচ্ছি, প্লিজ আপনারা সবাই মনটা শান্ত করুন। আমি মিঃ রিক্রিয়ান্টকে সঙ্গে নিয়ে আগামীকাল সন্ধের মধ্যে আপনাদের ওখানে পৌছে যাচ্ছি। আমরা মিঃ প্রেস্কটের সঙ্গে দেখা করবো এবং আমাদের বিশ্বাস –আর সেটা ইতিবাচক-আমরা একটা সুবিধাজনক সম্মতিতে আসতে সক্ষম হবো। আপনারা দয়া করে এটা নিয়ে বেশী মাথা ঘামাবেন না।’

     জেমস জানতে চাইলো, ‘আমার ড্যাড কি বলছেন?’

     সাকারিনা রহস্যময় চোখে তাকালেন জেমসের দিকে। ‘তোমার ড্যাডের কথা বলছো, জেমস? ঠিক কি জানতে চাইছো বলোতো?’

     ‘আপনার এবং মিঃ রিক্রিয়ান্টের সঙ্গে ওনারও কি এখানে আসা উচিত না?’

     সাকারিনা আবার সেই মাপা হাসি হাসলেন। ‘কেন জেমস ? তোমার ড্যাড হেড অফ দ্য অরোর এই কারণে? যা বুঝতে পারছি তাতে এই অযাচিত ঘটনায় কোন রকম ডার্ক ম্যাজিক জড়িত নেই। ফলে শুধু শুধু ওকে ব্যতিব্যস্ত করার কি দরকার।’

     ‘কিন্তু হ্যারি একবার এই মানুষটাকে খোঁজার চেষ্টা করেছে,’ নেভিল জানালেন। ‘গত বছর জেমস এবং হ্যারি কুইডিচের মাঠে লোকটাকে দেখে ধরার চেষ্টা করেছিল।’

     হাসিবিহীন মুখে সাকারিনা জবাব দিলেন, ‘বেশ ভালো কাজ করেছিলেন সেক্ষেত্রে। ওই সময়ে ওটাই ওর কাজ ছিল। আর ,এটা হয়তো বুঝতে আপনার অসুবিধা হচ্ছে না যে, এটা একটা অ্যাম্বাসাডোরিয়াল ইস্যু। হ্যারি পটারের অনেক রকম কাজ করার ক্ষমতা আছে জানি, তবে তার মধ্যে অ্যাম্বাসাডোরশিপ আছে বলে জানা নেই। তা ছাড়াও মিঃ পটার এই মুহূর্তে অন্য কাজে ব্যস্ত, আর সে কাজ থেকে ওকে নিয়ে আসা যাবে না। এধরনের আলাপ আলোচনা করার জন্য আমাদের দক্ষ লোক আছেন মন্ত্রকে। আমার এবং মিঃ রিক্রিয়ান্টের সঙ্গে আরো একজন আসবেন। এক বিশেষজ্ঞ, মাগল-ম্যাজিক্যাল রিলেশন বিষয়ে। উনিই আমাদের মুখপাত্র হয়ে পুরো বিষয়টা দেখা শোনা করবেন এবং উভয় তরফকে খুশি করতে পারবেন।’

     ম্যাকগনাগল কথা থামানোর ভঙ্গিতে হাত তুলে জানতে চাইলেন, ‘মিস সাকারিনা আপনারা না আসা পর্যন্ত মিঃ প্রেস্কটকে নিয়ে আমরা কি করবো?’

     ‘ওকে বিরক্ত করবেন না। ফোন করতে দেবেন তবে খুব বেশি না।’

     ‘অবশ্যই আপনি নিশ্চয় ওকে স্কুলের ভেতর যথেচ্ছ ঘোরা ফেরার অনুমতি দিতে বলেছেন না,’ কথাবলার ধরনটা প্রশ্নের চেয়ে নিশ্চিত দাবির মতো শোনালো।।

     সাকারিনা সম্ভবত কাঁধ উচু করলেন। ‘ওই ব্যক্তি ঘুরে ফিরে দেখলে যা ক্ষতি হবে বলে আমার মনে হয় সেটা অনেকটাই পরিমানে কম হবে কোন রকম মাগল আইনী ব্যাপারে জড়িয়ে যাওয়ার থেকে। এই মুহূর্তে আমরা ওকে আপাতত একজন অতিথির মতোই সম্মান দেবো। শুনতে খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই কারন ইতিমধ্যেই উনি অনেক কিছু জেনে ফেলেছেন।’

     ম্যাকগনাগলের মুখের একটা রেখাও বদলালো না। ‘ঠিক আছে তাই হবে। গুড আফটারনুন, মিস সাকারিনা। আগামীকাল আমরা আপেক্ষায় থাকছি আপনাদের আগমনের।’

     সাকারিনা হাসলেন। ‘অবশ্যই। দেখা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি।’

     আগুনের ভেতর থেকে মুখটা অদৃশ্য হলো। হেডমিস্ট্রেস এগিয়ে গিয়ে আগুন খোঁচানোর শিকটা তুলে নিয়ে বেশ অনেকটা সময় নিয়ে ফায়ার প্লেসের আগুন নাড়াচাড়া করলেন। মুখটার কোন চিহ্ন যাতে না থাকে তার ব্যবস্থা করে দিলেন। শিকটা নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে ঘুরে দাঁরিয়ে বললেন, ‘অসহ্য বুরোক্র্যাটিক কথা বলা পাপেট সব।’

     ‘আমি খুশী হবো যদি মিঃ প্রেস্কট কে আল্মা আলেরনের সহকর্মীদের থাকার কোয়ার্টারে রাখা হয়,’ চশমাটা পুনরায় পড়ে নিয়ে ফ্র্যাঙ্কলিন বললেন। ‘এরফলে ওর ওপর কড়া নজর রাখা যাবে। আমার মনে আমরা আর কোন ঝামেলা পাকানো থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হবো।

     নেভিল ফায়ার প্লেসের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বললেন, ‘আমার পুরো ব্যাপারটাই পছন্দ হচ্ছে না। হ্যারির এখানে আসা উচিত ছিল। প্রেস্কট কোন ডার্ক উইজার্ড নয় এটা ঠিক কিন্তু এখনো আমরা ঠিক ঠাক জানি না ও এখানে কি ভাবে প্রবেশ করলো। কেউ একজন ওকে সাহায্য করেছে এখানে ঢোকার সময়। যে একই সঙ্গে সুরক্ষা চুক্তির বিশেষ ক্ষমতা কে নিষ্ক্রিয় করতেও সক্ষম হয়েছে। সাকারিনা কি বললেন তাতে আমার একটুও ভরসা নেই। আমার নিজস্ব মত একজন দক্ষ অরোরকে প্রয়োজন পুরো ব্যাপার খতিয়ে দেখার জন্য।’

     হেড মিস্ট্রেস দরজা খুল লেন অফিস ঘরের। ‘এই মুহূর্তে এটার নিয়ন্ত্রন আমাদের হাতে নেই। প্রফেসর ফ্র্যাঙ্কলিন আপনার আইডিয়াটা আমার পছন্দ হয়েছে। মিঃ প্রেস্কটকে চলুন আল্মা আলেরন সাথীদের থাকার জায়গায় রেখে আসি। আর মিস সাকারিনা যাই বলুক বা বিশ্বাস করুক, আমি চাইছি মিঃ প্রেস্কটকে আগামী চব্বিশ ঘণ্টা যতটা সম্ভব ব্যস্ত রাখা হোক। যত কম সময় লোকটা এই স্কুল ঘুরে দেখার সুযোগ পায় ততই মঙ্গল। মিঃ পটার এবার তুমি তোমার ক্লাসের জন্য ফিরে যেতে পারো। আশা রাখছি বলার দরকার নিয়ে এ নিয়ে কোন কথা তুমি মিঃ ওয়াকার এবং মিঃ ডিডলকে বলবে না। আমি আরো খুশী হবো যদি তুমি কারোর সঙ্গেই এ ব্যাপারে আলোচনা না করো। বিশেষ করে টেড লুপিন বা নোয়া মেটজকারের সঙ্গে।’

     জেমস বাকিদের পেছন পেছন অফিসঘর থেকে বের হবে এমন সময় শুনতে পেলো একটা শান্ত কন্ঠ ভেসে এলো দেওয়াল থেকে। ‘আগামকাল একটা দারুণ ব্যস্ততম দিন কাটবে পটার।’

     জেমস থামলো, ফিরে তাকালো সেভেরাস স্নেপের পোরট্রেটের দিকে। বুঝতে পারলো না পরিষ্কার ভাবে কি বলতে চাইছেন উনি। ‘আমারও তাই মনে হয়। অন্তত হেডমিস্ট্রেস এবং অন্যদের জন্য।’

     স্নেপের কালো চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো জেমসের ওপর। ‘আমাকে সত্যি করে একটা কথার উত্তর দাও পটার। তুমি কি এখনো মনে করছো টাবিথা করসিকা মারলিনের জাদু লাঠি নিজের হেফাজতে রেখেছে?’

     ‘ওহ,’ জেমস বললো, ‘দেখুন আপনার যেটা ইচ্ছে সেটা বলুন, কিন্তু আমাদের ওটাই মনে হয়েছে। তাই আমরা যেনতেন প্রকারে ওর কাছে থেকে ওটা হাতাবোই?’

     স্নেপ দ্রুত উত্তর দিলেন, ‘পটার বোকামো কোরোনা। যেটা তোমার কাছে আছে সেটা ফিরিয়ে দাও। দিয়ে দাও ওটা হেডমিস্ট্রেসকে। আশা করছি বুঝতেই পারছো কি রকম ভয়ানক ব্যাপার ওই পোশাকটাকে সঙ্গে রাখা। অন্তত এই পরিস্থিতিতে।’

     জেমস চোখ পিটপিট করে বললো, ‘কেন? কি এমন ঘটবে এখন? ওই প্রেস্কটের সঙ্গে ওটার কোন সম্পর্ক আছে নাকি?’

     স্নেপ হতাশ চোখে জেমসের দিকে তাকালেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘বুঝতে পারোনি তার মানে। আগামী কালের আগত দলের সঙ্গে তোমার বাবার না থাকার পেছনে শক্তপোক্ত একটা কারণ আছে। মন্ত্রকেও প্রোগ্রেসিভ এলিমেন্ট এর লোক আছে, যদিও তারা নিজেদের ওই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলে জানান দেয় না।। সাকারিনা ওদের মধ্যে একজন। রিক্রিয়ান্টও আছে সম্ভবত। যদিও সরাসরি যুক্ত নেই। হয় এটা সাকারিনার প্রথম থেকেই করে রাখা পরিকল্পনা অথবা এই বিশেষ রহস্যময় ঘটনার একটা সুযোগ নিতে চলেছে ও।’

     ‘কি? সাকারিনার পরিকল্পনা?’ জেমস পোরট্রেটের আরো কাছে এগিয়ে গিয়ে চাপা গলায় জানতে চাইলো।’

     ‘বিস্তারিত জানার দরকার নেই। মোদ্দা কথা হলো যদি তুমি কাল রাতের ভেতর মারলিনের পোশাকের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে না পারো তবে সমূহ সম্ভাবনা আছে ওটা খোয়ানোর।’

     জেমস জানালো, ‘কিন্তু ওটা তো সুরক্ষিতই আছে। আমরা ওটা পেয়ে গেছি। সেটা আপনি ভালো ভাবেই জানেন। আর এখন দরকার মারলিনের জাদুলাঠিটা যোগাড় করা।’

     ‘জাদুলাঠির কথা ভুলে যাও!’ স্নেপ ক্রুদ্ধ স্বরে বললেন। ‘তুমি না জেনেই নিজেকে ব্যবহার হতে দিচ্ছো। তোমায় ব্যবহার করা হচ্ছে। আমার যদি বিন্দুমাত্র আশাও থাকতো যে তুমি তোমার বাবার চেয়ে একটু হলেও বুদ্ধিমান তাহলে আমি তোমাকে এক্ষুনি অকালমেন্সীর শিক্ষা দিয়ে দিতাম। আমি যখন বলছি যে মারলিনের পোশাকটাকে সুরক্ষিত করো এর অর্থ তুমি ওটাকে এমন কারো হাতে তুলে দাও যে জানবে ওটাকে কি করে বন্ধনে বেঁধে রাখতে হয়, লুকিয়ে রাখতে নয় শুধুমাত্র। শত্রুপক্ষর হাতে দুটো রেলিক আছে। পোশাকটা চাইবে বাকি দুটোর সঙ্গে মিলিত হতে। আর সেটা আটকানোর ক্ষমতা তোমার নেই পটার। তোমার বাবার মত উদ্ধত গোঁয়ারতুমি কোরো না!’

     জেমস ও সমান ঝাঁজে উত্তর দিলো, ‘আমার বাবা কখনোই উদ্ধত বা গোঁয়ার ছিলেন না যা আপনি মনে করেন। আর আমিও সেটা নই। আমি আপনার কোনও কথাই শুনবো না। আর তাছাড়া আগামি কাল গ্রহসমাবেশের দিন নয়। ওটা হবে পরের দিন। জ্যান এটা আমাকে জানিয়েছে।।’

     স্নেপ পাগলের মতো হাসলেন। ‘তার মানে তোমাদের দুজনকেই এবার বিশ্বাস করতে হবে। বেশ, দয়া করে জানালে ভালো হয়, কোথা থেকে মিঃ ওয়াকার এই তথ্য যোগাড় করলেন?’

     জেমস কর্কশ ভাবে জবাব দিলো, ‘ও কন্সটেলেশন ক্লাবের সদস্য। মাদাম ডেলাক্রয় গ্রহ সমাবেশের সঠিক সময়টা বার করার জন্য প্রত্যেক সদস্যকে প্রচুর খাটিয়েছেন।’

     ‘আর এটা বোঝার মতো ক্ষমতা তোমাদের কি করে হবে যে উনি ইচ্ছে করে প্রত্যেকবার ভুল তথ্য দিয়েছেন সময় বার করার জন্য? উনি একবছর আগে থেকেই জানেন সঠিক দিনটা। ওনার শুধু জানার দরকার ছিল নির্দিষ্ট ক্ষণটা। তুমি তো ধরতেই পেরেছিলে উনি মারলিন ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাহলে উনি কি এটা চাইবেন যে সর্বকালের সেরা এবং বিপদজনক উইজার্ডের প্রত্যাবর্তন কালে একদল  আকাশ পর্যবেক্ষণকারী শিক্ষার্থীর দল ওই সময়টায় উপস্থিত থাকুক?’

     জেমস অনুধাবন করতে পারলো। মোটেই ডেলাক্রয় তা চাইবেন না। এ ব্যাপারে মোটেই ভাবেনি ও। কিছু একটা বলার জন্য মুখ খুলতে গিয়েও বললোনা কিছুই। স্নেপ বলতে শুরু করলেন, ‘ওই মহিলা তোমাদের সবাইকে পুরো একদিনের হিসাবের গোলমাল করিয়ে রেখেছেন। হল অফ এল্ডারস ক্রসিং এর রাত মোটেই বৃহস্পতিবারে নয়। ওটা ঘটবে বুধবার রাতে, পটার। এখনো অবধি তুমি ঠকে এসেছো এবং এখনো ভুলের জগতেই আছো। আর সময় নেই ওই ভুলটাকে নিয়ে চর্চা করার। যত তাড়াতাড়ি পারো পোশাকটাকে কারো হাতে তুলে দাও। যদি না পারো, তুমি অসফলতাই শুধু হাতে পাবে। আর আমাদের শত্রুরা অর্জন করবে নিজেদের সাফল্য।’

     ‘জেমস?’ শোনা গেল নেভিলের গলা। দরজা দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে উঁকি মারলেন। ‘তোকে দেখতে না পেয়ে ফিরে এলাম। তুই কি কিছু ফেলে গিয়েছিলি?’

     জেমসের মন এখন ছুটে বেড়াচ্ছে এদিকে ওদিকে। ও শূন্য দৃষ্টিতে নেভিলের দিকে তাকালো কয়েক সেকেন্ডের জন্য, তার পর ধাতস্থ হল। ‘ইয়ে, না। না, সরি, আমি আসলে…একটা অন্য কথা ভাবছিলাম।’

     নেভিল স্নেপের পোরট্রেটের দিকে তাকালেন। স্নেপ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হাত দু্টো বুকের কাছে গুটিয়ে রাখলেন। ‘আরে লংবটম। ভেতরে এসে ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে যাও। আমার কোন দরকার নেই ওর কাছে।’

     নেভিল সম্মতি সূচক মাথা নাড়লো।। ‘জেমস। চলে আয়। একটু তাড়াতাড়ি করলে বিকেলের ক্লাসগুলো তোর মিস হবে না। আমি তোর সঙ্গে গিয়ে বলে দেব ক্লাসে  দেরিতে আসার কারণ।’

     জেমস নেভিলের পিছু পিছু ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, মনের মধ্যে স্নেপের বলা কথাগুলোর আলোড়ন নিয়ে। ওদের হাতে মাত্র একটা দিন আছে, একটা দিন টাবিথার কাছে থেকে জাদু লাঠি হাতানোর জন্য। একটা দিন বাকি হল অফ এল্ডারস ক্রসিং এর। আর সেটা ঘটতে চলেছে ঠিক যেদিন সাকারিনা আসছে প্রেস্কটের সঙ্গে আলচনা করার জন্য। সঞ্চরনশীল সিঁড়ি দিয়ে নেমে নিচের করিডোরে আসতে আসতে জেমস বুঝতে পারলো স্নেপ একটা ব্যাপার একদম ঠিক বলেছেন … আগামি কাল একটা বিশেষ দিন হতে চলেছে। ব্যস্ততম দিন।

 

[চলবে]

লেখক পরিচিতিঃ  জর্জ নরম্যান লিপার্ট আমেরিকান লেখক এবং কম্পিউটার অ্যানিমেটর। তবে ওনার বর্তমান পরিচয় উনি জেমস পটার সিরিজের লেখক। যে কারনে ওনাকে “আমেরিকান রাউলিং” নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এই সিরিজের প্রথম লেখা “জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং” প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে। নানান কারনে এটি অনেক বিতর্কে জড়িয়ে যায়। সেসব সমস্যা পেরিয়ে আজ এটি পাঠক পাঠিকাদের চাহিদায় সারা বিশ্বে যথেষ্ট জনপ্রিয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই সিরিজের সব কটি বই ই-বুক এবং ফ্রি হিসাবেই প্রকাশ করেছেন মাননীয় জর্জ নরম্যান লিপারট। এই সিরিজ ছাড়াও ওনার আরো ১২ টি বই আছে। বর্তমানে উনি এরি, পেনসিল্ভ্যানিয়ার বাসিন্দা।

অনুবাদকের পরিচিতিঃ উপন্যাসটির অনুবাদক প্রতিম দাস মূলত চিত্র শিল্পী, ২০১৩ সাল থেকে ভারতের সমস্ত পাখি আঁকার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছেন। ৭৭৫+ প্রজাতির ছবি আঁকা সম্পূর্ণ হয়েছে। তবে শুধু পাখি নয় অন্যান্য বিষয়েও ছবি আঁকা চলে একইসঙ্গে। দারুণ রকমের পাঠক, যা পান তাই পড়েন ধরনের। প্রিয় বিষয় রূপকথা, ফ্যান্টাসী, সায়েন্স ফিকশন, অলৌকিক। টুকটাক গল্প লেখার সঙ্গে আছে অনুবাদের শখ। 

Tags: জর্জ নরম্যান লিপারট, জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং, ধারাবাহিক উপন্যাস, প্রতিম দাস, সুদীপ দেব

4 thoughts on “জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং – পার্ট ১৫

Leave a Reply

Connect with

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!
Verified by MonsterInsights